পরীক্ষার নম্বরে সর্বভারতীয় বোর্ডগুলির সঙ্গে পাল্লা দিতে পারছেন না বাংলার পড়ুয়ারা। অথচ প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে অন্যান্য বোর্ডের সঙ্গে নম্বরে সাযুজ্য রাখাটা জরুরি। সেই সাযুজ্য আনতেই এ বার পরীক্ষা ও মূল্যায়ন পদ্ধতিতে পরিবর্তন চায় তৃণমূল সরকার।
কী ভাবে এই পরিবর্তন করা যায়, সেই বিষয়ে আলোচনার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের কর্তা, স্কুলশিক্ষা দফতরের সচিব এবং অন্য আধিকারিকদের সঙ্গে শীঘ্রই বৈঠকে বসবেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। আগামী বছর থেকেই প্রস্তাবিত পরিবর্তন বলবৎ করা যাবে বলে মঙ্গলবার আশা প্রকাশ করেন তিনি।
ফি-বছরই স্নাতক স্তরে ভর্তির সময় দেখা যায়, আইসিএসই, সিবিএসই-র মতো সর্বভারতীয় বোর্ডের ছাত্রছাত্রীরা নম্বরের বিচারে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করা পড়ুয়াদের থেকে এগিয়ে আছেন। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে শুধু অন্যান্য বোর্ডের সঙ্গে প্রতিযোগিতাতেই নয়। নম্বরের নিরিখে নিজের সঙ্গে দৌড়েও হেরে গিয়েছে উচ্চ মাধ্যমিক। সংসদের তথ্য অনুযায়ী ২০১১ থেকে ৬০% নম্বর পাওয়া পরীক্ষার্থীর হার ক্রমশ কমেছে। এ বার উচ্চ মাধ্যমিকে মাত্র ১৪.৯৬% ছাত্রছাত্রী ওই নম্বর পেয়েছেন। পড়ুয়ার সংখ্যা বাড়লেও পঠনপাঠনের মান আশানুরূপ হচ্ছে কি, প্রশ্ন তুলছেন শিক্ষাজগতের সঙ্গে যুক্ত অভিজ্ঞ অনেকেই। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রেও নম্বরের বিচারে সর্বভারতীয় বোর্ডগুলি অনেক এগিয়ে। তাই এ রাজ্যে স্কুল স্তরে সামগ্রিক ভাবে পঠনপাঠন ও মূল্যায়নে যে একটা বদল দরকার, বিভিন্ন শিক্ষাবিদ সে-কথা বলেছেন বারে বারেই।
কী রকম বদল আসছে?
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “প্রশ্নের ধরনে বদল ঘটিয়ে পঠনপাঠনে নোট-কেন্দ্রিকতা কমানো, মূল্যায়ন পদ্ধতি নিশ্ছিদ্র করা, সর্বভারতীয় নম্বরের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে নম্বর দেওয়া ইত্যাদি নিয়ে শীঘ্রই আলোচনা হবে। বোর্ড সভাপতিরা সব আয়োজন করে উঠতে পারলে আগামী বছর থেকেই এই সব পরিবর্তন কার্যকর করা যাবে বলে আশা করছি।” সব ক’টি বোর্ডের কর্তাদের ওই বৈঠকে ডাকা হলেও মূলত নবম, দশম, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা ও মূল্যায়নে পরিবর্তন আনতেই সরকার উদ্যোগী হয়েছে বলে স্কুলশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর।
শিক্ষাজগতের অনেকের মতে, এই উদ্যোগ ভাল। কিন্তু সর্বভারতীয় বোর্ডের স্কুলগুলিতে পরিকাঠামো, সুযোগ-সুবিধা অনেক বেশি। এখানে সেগুলি না-বাড়িয়ে শুধু পরীক্ষার ধরনে পরিবর্তন এনে নম্বরে সাযুজ্য রাখার ব্যবস্থা হলে পঠনপাঠন মার খেতে পারে। মধ্যশিক্ষা পর্ষদের এক প্রাক্তন কর্তা বলেন, “অনেক স্কুলে বসারই তো জায়গা নেই। ন্যূনতম পরিকাঠামো নেই। অবস্থা খারাপ বিজ্ঞান পরীক্ষাগারেরও। মূল্যায়নে বদল আনার সঙ্গে সঙ্গে এ-সব দিকেও নজর দেওয়া উচিত সরকারের।”
শিক্ষামন্ত্রী অবশ্য উচ্চ মাধ্যমিকের ফলপ্রকাশের দিনেই আশ্বাস দিয়েছিলেন, উদ্বেগের কিছু নেই। পাঠ্যক্রম পাল্টে, পরিকাঠামো বাড়িয়ে, পরীক্ষাগারের জন্য অনুদান দিয়ে সরকার শিক্ষার মান বাড়াতে সচেষ্ট। |