কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ তুলে গত এক মাস ধরে সংসদে লাগাতার আন্দোলন চালিয়েছে তৃণমূল। সেই লড়াইকেই আজ আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেলেন রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। দলনেত্রীর নির্দেশে রীতিমতো যুদ্ধং দেহি মনোভাব নিয়ে কেন্দ্রীয় জলসম্পদমন্ত্রী হরিশ রাওয়াতের সঙ্গে বৈঠক করলেন তিনি। গঙ্গা-পদ্মার ভাঙন রুখতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজ্যকে সব রকম আর্থিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিলেও বৈঠক শেষে রাজীববাবুর মন্তব্য, “না আঁচালে বিশ্বাস নেই।”
গঙ্গা-পদ্মার ভাঙনের ফলে চলতি বর্ষায় গ্রামের পর গ্রাম তলিয়ে যেতে পারে এই আশঙ্কা জানিয়ে মাস তিনেক আগে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে চিঠি লিখেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মালদহের ভুতনিদিয়ারা, দোমহাট, শিমুলতলা থেকে শুরু করে মুর্শিদাবাদের হোসেনপুর, ইসলামপুর, হাসানপুর, বয়রা, ময়া, ধুলিয়ান, এই ৯টি এলাকায় নদীতে লাগামছাড়া ভাঙনের কথা উল্লেখ করে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর আশঙ্কাই সত্যি হয়েছে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, বাংলাদেশ সীমান্তে থাকা সেনা চৌকিও এখন সলিল সমাধির মুখে। রাজ্য প্রশাসনের বক্তব্য ভাঙন আর তিরিশ মিটার এগিয়ে এলেই মুর্শিদাবাদের নাড়ুখাকি গ্রামের বিএসএফ চৌকি তলিয়ে যাবে। কোনও বিএসএফ কর্মীই ওই চৌকিতে থাকতে ভরসা পাচ্ছেন না। ফলে প্রশ্নের মুখে ওই গ্রাম তথা দেশের নিরাপত্তা। |
বিষয়টি নিয়ে বারবার দরবার করা সত্ত্বেও দিল্লির ঘুম না-ভাঙায় সেচমন্ত্রীকে দিল্লিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন মমতা। প্রয়োজনে হরিশ রাওয়াতের ঘরের সামনে ধর্নায় বসার নির্দেশও দেন রাজীববাবুকে। সে প্রয়োজন অবশ্য হয়নি। রাজীববাবুর সঙ্গে বৈঠকে ফরাক্কা ব্যারেজের উজান ও ভাটির ১২০ কিলোমিটার অংশে ভাঙন রোধে অবিলম্বে ২৫০ কোটি টাকা দেওয়ার আশ্বাস দেন রাওয়াত। এ ছাড়া, নাড়ুখাকি গ্রামের ভাঙন রোধেও সব ধরনের সাহায্য করার কথা বলেন।
রাওয়াত জানান, ভাঙন আটকানোর দায়িত্বে থাকা ফারাক্কা ব্যারেজ প্রকল্প কর্তৃপক্ষকে সরাসরি টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হবে। কেন্দ্রের সিদ্ধান্তকে প্রাথমিক ভাবে ইতিবাচক অ্যাখ্যা দিলেও রাজীববাবুর বক্তব্য, “আমরা ঘরপোড়া গরু। এর আগেও কেন্দ্র এমন আশ্বাস দিয়েছে। পরে অর্থ মন্ত্রকের দোহাই দিয়ে টাকা আটকে দেওয়া হয়েছে।”
রাজীববাবু আরও জানান, দু’বছর আগে প্রণব মুখোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন কান্দি মাস্টার প্ল্যানের জন্য ৪১৯ কোটি টাকার প্রকল্প মঞ্জুর করেছিলেন। ঠিক হয়েছিল, ওই অর্থের ৭৫ ভাগ দেবে কেন্দ্র। বাকিটা দিতে হবে রাজ্যকে। “কিন্তু হরিশ রাওয়াত আজ জানান, বর্তমান অর্থমন্ত্রী সেই মঞ্জুরি বাতিল করে দিয়েছেন। রাজকোষে ঘাটতির কারণে খরচের অর্ধেক দিতে চায় কেন্দ্র। আমরা সেই প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছি।” বলেন রাজীববাবু।
আজকের বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গকে ব্রহ্মপুত্র জল বোর্ডের স্থায়ী সদস্য করার বিষয়ে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে কেন্দ্র। ওই বোর্ডের সদস্য না-হওয়ায় এত দিন কেন্দ্রীয় আর্থিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল পশ্চিমবঙ্গ। গত কাল সচিব পর্যায়ের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে বরফ গলে। এর ফলে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা কেন্দ্রীয় সাহায্য পাবে পশ্চিমবঙ্গ। |