খুদেদের বয়স ভাঁড়ানোর কেলেঙ্কারিতে আলোড়িত কলকাতা
য়দানি বাইশ গজের এক বহু প্রচলিত দুর্নীতি যে শেষ পর্যন্ত গোটা বাংলার সামাজিক চেতনার শিকড়ে এমন প্রবল ঝাঁকুনি দিয়ে যাবে, কে জানত! সিএবি-র অম্বর রায় টুর্নামেন্টে পঞ্চাশ খুদে ক্রিকেটারের বয়স ভাঁড়ানোর অপরাধ সোজাসুজি সামাজিক অবক্ষয়ের দুশ্চিন্তাই সৃষ্টি করে দেবে, সেটাও বা কে ভেবেছিল?
রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী স্তম্ভিত। মঙ্গলবার আনন্দবাজারকে ব্রাত্য বসু পরিষ্কার বলে দিলেন, “ক্রীড়াপ্রেমী মানুষ হিসেবে আমি স্তম্ভিত এবং বিস্মিত। কলকাতা পুরসভার দেওয়া বার্থ সার্টিফিকেট নয়। সিএবি-র উচিত ছিল কোনও ক্রিকেটার সরকারি স্কুলে পড়লে সেই স্কুল থেকে সংশ্লিষ্ট ক্রিকেটারের জন্মনথি নেওয়া। আর ক্রিকেটার বেসরকারি স্কুলে পড়লে উচিত, ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেটের থেকে জন্মনথির অ্যাটেস্টেড কপি নেওয়া।” আর শহরের মেয়র শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলে দিচ্ছেন, “শুনে আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছি। সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা নিতে হবে। এ তো এই বয়স থেকেই বাবা-মা ছেলের সর্বনাশ করছেন। ছেলে ক্রিকেটার না হতে পারুক, জীবনযুদ্ধে তো দাঁড়াবে। আমাদের কাছে এমন অভিযোগ এলে কড়া ব্যবস্থা নেব।”
গোটা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য প্রশাসনে যদি ঝড় উঠে থাকে, তা হলে সিএবি প্রশাসনে মোটামুটি অসহনীয় পরিস্থিতি। রেখেঢেকে কথাবার্তা শিকেয়। উল্টে কোচিং সেন্টারের মাথাদের নিজ-ঘরে ডেকে সিএবি-র উচ্চপদস্থ কর্তাদের প্রচ্ছন্ন হুমকি চলছে‘এত দিন যা করেছেন, করেছেন। আইনের ফাঁক আর খুঁজতে যাবেন না। সোজা দশ বছরের জন্য নির্বাসনে পাঠিয়ে দেব!’
সিএবি পরিষ্কার জানিয়ে দিচ্ছে, আগামী অম্বর রায় টুর্নামেন্টের আগে সমস্ত কোচিং সেন্টারের হাতে কড়া নির্দেশাবলী তুলে দিতে। যে নির্দেশনামা তৈরি হবে ভারতীয় বোর্ডের প্রাক্তন আইনজীবী উষানাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলে। কী থাকছে সেখানে? খসড়া এ রকম:
১) বহিরাগতদের অম্বর রায় টুর্নামেন্টে খেলা বন্ধ। ট্রফির লোভে ক্রিকেট কোচিং সেন্টারদের কুকীর্তি আর সহ্য করা হবে না।
২) যারা এখন ধরা পড়েছে, কম করে তিন বছরের নির্বাসন। অভিযুক্ত ক্রিকেটার যদি কোচ বা কোচিং ক্যাম্পের নামে জন্মনথি বিকৃত করার অভিযোগ আনে, সেই কোচিং সেন্টারকেও সাসপেন্ড করা হবে।
৩) এ বার থেকে অনূর্ধ্ব-১৪ টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই কোচিং সেন্টারদের কাছে লিখিত নির্দেশ যাবে যে, ক্রিকেটাররা কেউ বয়স ভাঁড়ালে সে দায়িত্ব সিএবি-র নয়। দায়িত্বওই ক্রিকেট কোচিং সেন্টারের। আর একবার ধরা পড়লে, সাত থেকে দশ বছরের নির্বাসন। ক্রিকেটারের, কোচিং সেন্টারেরও।
কোনও কোনও কর্তা আবার কড়া বিধিনিষেধের আবহে সাব-জুনিয়র টুর্নামেন্ট (অনূর্ধ্ব-১৪) চালু রেখে জুনিয়র (অনূর্ধ্ব-১৭) টুর্নামেন্ট বন্ধ রাখতে চান। সেখানে নাকি বয়স ভাঁড়ানো আরও সহজ, কলেজপড়ুয়া হয়েও দিব্য জুনিয়র টুর্নামেন্ট খেলে দেওয়া যায়! বলা হচ্ছে, এ সব টুর্নামেন্টে লাভের বদলে ক্ষতি হচ্ছে বাংলা ক্রিকেটের। ভাল বঙ্গজ ক্রিকেটার ওঠা বন্ধ বহু দিন। লাভ বলতে, শুধু কোচিং সেন্টারগুলোর আর্থিক বাড়-বাড়ন্ত দেখা আর পুরস্কারের পিছনে সিএবি-র গাঁটের কড়ির অপব্যয়!
মঙ্গলবার রাতে সিএবি প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়া বলছিলেন, “দেখুন, শুদ্ধকরণ একদিনে হবে না। সময় লাগবে। কিন্তু এটাও বলব যে, শুদ্ধকরণ হবেই।” তখনও সিএবি প্রেসিডেন্ট জানতেন না, দোষী হয়েও অভিযুক্ত কোচিং সেন্টারদের মধ্যে অসূয়া তৈরি হয়েছে। বলা হচ্ছে, অম্বর রায় টুর্নামেন্ট শুরুর আগে সমস্ত ক্রিকেটারের জন্মনথি সিএবি-কে জমা দেওয়া হয়। তখন কিছু বলা হয়নি কেন? যা শুনে সিএবি-র এক কর্তা আবার পাল্টা দিলেন, “চোর সন্দেহে কাউকে হাজতে পাঠানো যায় নাকি? প্রমাণ লাগে। প্রমাণ পেলাম। এ বার হাজতও হবে।”
আর প্রথমের পর শুদ্ধকরণের দ্বিতীয় ধাপের কথাও শোনা গেল। জাল জন্মনথির পর, জাল ভোটার কার্ড। লিগে বহিরাগতদের খেলানোর জন্য কিছু ক্লাব জাল ভোটার কার্ড করতে ব্যস্তএমন খবরই ঘুরছে সিএবি-তে।
এবং কর্তাদের কথা ধরলে, এ বার তাদের কপালেও দুঃখ আছে!

পুরনো খবর:




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.