যন্ত্রণা থেকে ফেরা নাদালের
কাহিনি আমার কাছে রূপকথা
টেনিসে তো বটেই। খেলাধুলোর ইতিহাসেই এত বড় চোট আর অস্ত্রোপচারের পর এ রকম অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তন কেউ কোনও দিন করেছে কি না আমার সন্দেহ আছে। যে রকমটা শেষ সাত মাস দেখিয়ে চলেছে রাফায়েল নাদাল!
পুরোদমে খেলার সময় একটুআধটু চোট পেলেই তার থেকে সেরে উঠতে শারীরিক শক্তির পাশাপাশি কী সাংঘাতিক মনের জোরও লাগে সেটা নিজে একজন প্রাক্তন প্লেয়ার হিসেবে ভালই জানি। সেখানে নাদালের চোট রীতিমতো কেরিয়ার শেষ করে দেওয়ার মতো। হাঁটুতে বহু দিনের সমস্যা। সঙ্গে গোড়ালির চোট। পিঠের যন্ত্রণা। গত বছর উইম্বলডনে দ্বিতীয় রাউন্ডে রসুলের কাছে হারা সেই ম্যাচের ঠিক ২২৩ দিন পর ফের একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ম্যাচ খেলে নাদাল। মাঝের সাত মাস অস্ত্রোপচার, রিহ্যাব, স্যান্ড-ট্রেনিং, কঠিন প্র্যাক্টিসে কাটিয়েছে সবার চোখের আড়ালে। একজন চ্যাম্পিয়ন প্লেয়ারের কাছে এ রকম সময়টা যে কী মানসিক যন্ত্রণার সেটা গড়পড়তা সাধারণ লোকের বোঝা সম্ভব নয়। নাদালের বরাবরের কোচ ওর কাকা টনি নাদাল। টেনিস সার্কিটে আমার গুটিকয়েক পুরনো বন্ধুর কাছে শুনেছি, প্রথম একটা-দুটো টুর্নামেন্টে নাদাল নাকি ম্যাচের পর লকাররুমে ফিরে টনির কাছে কান্নায় ভেঙে পড়েছে! এতটাই মারাত্মক হাঁটুতে যন্ত্রণা কোর্টে ফেরার পরেও গোড়ার দিকে ওর ছিল।
সেখান থেকে একটা ছেলে এ মরসুমে (সেটাও ওর ফেব্রুয়ারিতে শুরু হয়েছিল) তেরোটা টুর্নামেন্টে নেমে দশটায় চ্যাম্পিয়ন। দুটো গ্র্যান্ড স্ল্যাম। পাঁচটা মাস্টার্স খেতাব। সর্বকালের সেরা ক্লে কোর্ট প্লেয়ার হয়েও হার্ডকোর্টে এ বছরে বাইশটা ম্যাচই জিতেছে। জকোভিচকে সোমবার গভীর রাতে যুক্তরাষ্ট্র ওপেন ফাইনালে ৬-২, ৩-৬, ৬-৪, ৬-১ হারানো ধরে এ মরসুমে চার বারে তিন বার হারাল। ফেডেরারকে তিন বারে তিন বারই। অ্যান্ডি মারেকে ভাগ্যবান বলব, এই নাদালকে খেলতে হয়নি!
এই নাদালের আরও কৃতিত্ব, ও শুধু অস্ত্রোপচারের পর দুর্ধর্ষ ফর্মে ফেরতই আসেনি। নিজের খেলাকে আরও অনেক উন্নত করেছে। নাদাল মানে আগে ছিল, নিজের কোর্টের সব কঠিন-কঠিন কোণ থেকে রিটার্ন করবে। আর অপোনেন্টের কোর্টেও সব কঠিনতম কোণে বল পাঠাবে। এখনকার নাদাল সেই সব তো করছেই। সঙ্গে সার্ভিসেও অসাধারণ উন্নতি করেছে। বিশেষ করে ওর দ্বিতীয় সার্ভ। ক্লে কোর্ট সম্রাটের হার্ডকোর্টে বাইশটা ম্যাচের সব ক’টা জেতার পিছনে অন্যতম ফ্যাক্টর দ্বিতীয় সার্ভিস। নাদালের সেকেন্ড সার্ভকেও আক্রমণ করা তো দূর অস্ত, রিটার্ন করাই মুশকিল হয়ে উঠছে। নাদাল টেনিসের ইতিহাসে সেরা ডিফেন্সিভ প্লেয়ার। নিখুঁত বেসলাইনার। অথচ সেই লোককে সাত মাসের চোট সারিয়ে কোর্টে ফেরার পর দারুণ অ্যাটাকিং প্লেয়ার দেখাচ্ছে! নেটের সামনে প্রচুর আসছে। আটবার ফরাসি ওপেন জিতলেও নাদালকে এক বাক্যে টেনিসের গ্রেটদের লিস্টে ওপরের দিকে রাখতে অনেকে দ্বিধা করতেন। কিন্তু এই অতিমানবিক পারফরম্যান্সের পর নাদালকে ‘অলটাইম গ্রেট’দের প্রথম তিনে রাখলে বোধহয় বাড়াবাড়ি হবে না। আমার মতে অর্ডারটা এ রকম এক) রজার ফেডেরার, দুই) রড লেভার, তিন) রাফায়েল নাদাল। খুব কাছাকাছি চারে থাকবে বিয়র্ন বর্গ। তবে নাদাল যদি সুস্থ থাকে। এ বারের উইম্বলডনের মতো হঠাৎ-ই আনফিট না হয়ে পড়ে। যদি চোটমুক্ত থাকতে পারে, তা হলে সামনের দু’বছরেই ফেডেরারের ১৭টা গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতার বিশ্বরেকর্ড হয়তো ভেঙে দেবে। সোমবারের পর ওর গ্র্যান্ড স্ল্যাম ১৩টা। যে ফর্মে আছে, পরের আটটার মধ্যে পাঁচটা গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতা অসম্ভব কিছু নয়। সেটা হলে নাদালকেই সর্বকালের সেরা মেনে নিতে হবে।

মহাপ্রত্যাবর্তন
হাঁটুর চোটের আগে শেষ ম্যাচ উইম্বলডন (দ্বিতীয় রাউন্ডে হার) ২৫ জুন ২০১২
অস্ত্রোপচারের পর ফের কোর্টে ভিনা দেল মার ওপেন (চিলি) ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৩
টুর্নামেন্ট ১৩
চ্যাম্পিয়ন ১০ (গ্র্যান্ড স্ল্যাম ২, মাস্টার্স ৫-সহ)
ফাইনালিস্ট ২
জয়-হার ৬০-৩
হার্ডকোর্টে ২২-০
ক্লে-তে ৩৮-২
ঘাসে ০-১
জকোভিচ-মারে-ফেডেরারের বিরুদ্ধে জয় হার ৬-১
... এ রকম কিছু ঘটার কথা আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি। মাত্র সাত মাস আগেও এ রকম কিছু আমার কল্পনার অতীত ছিল। সে কারণে এই দিনটা আমার কাছে ভীষণ আবেগের। ভীষণ স্পেশ্যাল। আমার পুরো টিম, সাপোর্ট স্টাফ জানে এই দিনটার মানে আমার কাছে ঠিক কী!




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.