আফগান দৈত্যদের জবাব
আজ ভারতের ‘পিরানহা’
সাফ ফাইনালের চব্বিশ ঘণ্টা আগেই যেন ‘যুদ্ধ’ লেগে গেল কাঠমান্ডুতে।
মাঠে বল গড়ানোর আগে যেভাবে চড়া গলায় আক্রমণ এবং প্রতি-আক্রমণ শুরু হয়ে গেল দু’দেশের কোচ ও ফুটবলারদের মধ্যে তা নজিরবিহীন।
“হ্যাঁ, আমরা কাল প্রতিশোধ নিতেই মাঠে নামব। দিল্লিতে রেফারি দিয়ে দু’বছর আগে যে ভাবে আমাদের হারিয়ে দেওয়া হয়েছিল তা এখনও আমরা ভুলিনি। প্রতিটি আফগানবাসীর হৃদয়ে এখনও কাঁটা হয়ে বিঁধে আছে সেটা।” কোনও রকম রাখঢাক না রেখে যে ভাবে ভারতকে আক্রমণ করলেন আফগানিস্তানের সহকারী কোচ আলি জওয়াদ আটারি, তাতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে গৌতম বুদ্ধের শান্তি প্রভাবিত নেপালের আবহাওয়া।
নিজের দলকে চাঙ্গা করার জন্য এর পরও আপাত শান্ত উইম কোভারম্যান্স রসগোল্লা ছুড়বেন তা হয় নাকি? “আমি জানি না কেন এ ভাবে বারবার আক্রমণ করা হচ্ছে আমাদের। এটা ঠিক নয়।” বলার পর ডাচ কোচের পাল্টা হুমকি, “জবাব যা দেওয়ার কাল মাঠেই দেব। মাঠের নব্বই মিনিটই জবাব দেওয়ার সেরা জায়গা। মলদ্বীপও তো আমাদের ছোট করে দেখেছিল।”
শেষ যুদ্ধের ক্লাস
নেপাল জয়ের পরই আফগানিস্তানের কোচ ইউসিফ কারগার তূণ থেকে প্রথম বানটা ছুড়ে দিয়েছিলেন, “ফাইনালে ভারতকে চাই। ওদের এ বার দেখে নেওয়ার পালা। বদলা নেওয়ার জন্য আমরা তৈরি।” আগুনে মেজাজের সেনা অফিসার ইউসিফ মঙ্গলবার সাংবাদিক সম্মেলনে আসেননি। ব্যস্ত ছিলেন অনুশীলনে, গতবারের চ্যাম্পিয়নদের হারানোর ছক তৈরিতে। পাঠিয়েছিলেন সহকারী কোচ এবং অধিনায়ক হারুন আমোরিকে। কিন্তু তাঁদের মধ্যেও যে কোচের মনোভাব সংক্রমিত! চার্চিলে খেলে যাওয়া বিলাল বা জার্মানিতে খেলা মুস্তাফা যে প্রথমবার কাপটা দেশে নেওয়ার জন্য কতটা মরিয়া তা দেখা গেল ফটোসেশনের সময়।
দু’দেশের অধিনায়ক আমোরি এবং সুনীল ছেত্রী সাফ ট্রফিটা দু’দিকে ধরে যখন ফটোগ্রাফারদের পোজ দিচ্ছেন, তখন দেখলাম আফগান অধিনায়ক লুব্ধ দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছেন ট্রফিটার দিকে। জোরে চেপে ধরে রয়েছেন সেটা। পারলে এখনই কেড়ে নিয়ে কাবুলের বিমানে তুলে দিতে পারলে যেন তৃপ্তি পান। আমোরির হাব-ভাব দেখে সুনীল হেসেও ফেললেন। টিম ইন্ডিয়ার ক্যাপ্টেনের ভাবটা যেন এমন, ‘আরে করছিস কী? এটা তো বরাবর আমাদেরই প্রাপ্য। ন’বারের মধ্যে ছয় বার পেয়েছি আমরা। কত অধিনায়ক এ ভাবে ট্রফিটার দিকে তাকাল। আর ফিরে গেল।’
বাঘ বনাম সিংহের লড়াই আজ, বুধবার। ‘ব্লু টাইগার্স’-এর সঙ্গে ‘লায়নস অব খোরাসান’। আফগান টিমকে যে ডাকা হয় ‘লায়নস’ নামেই। দক্ষিণ এশিয়ার রাজত্ব সামনের দু’বছর কার মুঠোয় থাকবে তা জানার জন্য অপেক্ষা করতে হবে বুধবার রাতে রেফারির শেষ বাঁশি পর্যন্ত।
কিন্তু সাফ ফাইনালের নির্ধারক যে শক্তি আর স্কিলের ঝনঝনানি হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আফগান মানেই চওড়া কাঁধের ছয় ফুটের সুঠাম দৈত্যাকৃতির কাবুলিওয়ালার ছবি ভেসে ওঠে আমাদের মনে। এখানে খেলতে আসা রফি-মুস্তাফা-মনসুরদের চেহারা কলকাতায় বাড়িতে-অফিসে টাকার ব্যাগ আর হিং নিয়ে ঘুরে বেড়ানো লোকগুলোর মতোই। টিমটার বাড়তি শক্তি জার্মানি, নরওয়েতে খেলার অভিজ্ঞতা। এ বার কাঠমান্ডু আসা আফগান টিমের আটজনই যে বিদেশের লিগে খেলেন। “ভারতের থেকে শক্তি বা ফিটনেসে আমরা এগিয়ে। চারটে বিদেশি কোচকে জিততে দিইনি। এ বার আর এক বিদেশির পালা।” কোভারম্যান্সকে উদ্দেশ্য করে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন আফগান টিমের সহকারী কোচ।
ভারতের সাফ কথা
সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ভারত মোট ১৪ বার মুখোমুখি হয়েছে আফগানিস্তানের। ভারতের জয় ১১। হার ১। ড্র ২।
এ বার নিয়ে মোট ৯ বার সাফ ফাইনালে উঠল ভারত। চ্যাম্পিয়ন ৬। রানার্স ২।
১৯৯৭-এ মলদ্বীপকে ৫-১ হারানো সাফ ফাইনালে ভারতের সবচেয়ে বড় জয়।
গত বার (২০১১) ফাইনালে ভারত ৪-০ হারায় আফগানিস্তানকে।
ভাইচুং ভুটিয়ার সাফে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড (১২) এ বার ভেঙেছেন মলদ্বীপের আলি আশফাক (১৮)।
তথ্য হরিপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়
আর যা শুনে মিটিমিটি হাসছেন মেহতাব-নবিদের কোচ। কিছুটা তির্যকভাবে কোভারম্যান্স বলেছেন, “আমরা ট্রফিটা নিতে এসেছি। আমরা আর একটা ফাইনাল খেলতে নামছি। আমাদের ছেলেরা ক্রমশ উন্নতি করছে। মলদ্বীপ ম্যাচে আমরা সেটা দেখিয়েছি। আমি গর্বিত। আফগানদের কথাও আমাদের মোটিভেট করবে।” আর পুলিশ মাঠে সকালে ‘রিকভারি সেশনে’-র আগে মাঝমাঠের দুই স্তম্ভ মেহতাব হোসেন এবং লেনি রডরিগেস শুনিয়েছেন, “ফিফা র‌্যাঙ্কিং একটা সংখ্যা মাত্র। ম্যাচে তার প্রভাব পড়ে না।” মুখচোরা লেনি সঙ্গে আলাদা ভাবে যোগ করেছেন, “খারাপ দিনে র‌্যাঙ্কিং-এ এগিয়ে থাকা স্পেনও হেরে যেতে পারে।” ফিফা র‌্যাঙ্কিং-এ আফগানরা ভারতের থেকে এগিয়ে আছে মাত্র আট ধাপ। ১৩৭ আর ১৪৫, দু’দেশের র‌্যাঙ্কিং।
প্রথমবার সাফ ট্রফিটা নিয়ে যাওয়ার আশায় ব্যক্তিগত বিমান নিয়ে কাবুল থেকে এসে গিয়েছেন সেখানকার মন্ত্রী, ব্যবসায়ী, ফেডারেশন কর্তারা। ঘোষণা করা হয়েছে চ্যাম্পিয়ন হলে প্রত্যেক ফুটবলারকে দেওয়া হবে ফ্ল্যাট এবং পঁচিশ হাজার ডলার করে। আর সেই দাওয়াইতে নেপাল ম্যাচে চোট পেয়ে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া স্টপার ফরজাদ হাসপাতাল থেকে ফিরে এসেছেন। সুনীলকে আটকাতে নামবেনও আজ।
ভারতীয় দলে আরাতা ইজুমি ছাড়া কারও চোট নেই। এ দিনের অনুশীলনে জাপান-জাত মিডিও মূল দলের সঙ্গে অনুশীলন করেননি। তবে দলে ঢুকছেন সুনীল ছেত্রী। কিন্তু কার জায়গায়? রবিন সিংহ কি বাদ পড়বেন? আরাতার জায়গায় কে? এ দিন ভারত অধিনায়ক অবশ্য বলে দিয়েছেন, “আমরা একটা টিম হিসাবে খেলছি। টিম গেমই আমাদের সম্পদ। গত কাল গ্যালারিতে বসে মনে হচ্ছিল আমিও খেলছি।”
কিন্তু কোন ফর্মেশনে টিম নামাবেন কোভারম্যান্স? মলদ্বীপ ম্যাচের মতো কোনও চমক থাকবে? পৌনে ছয়, ছয় ফুট উচ্চতার বিপক্ষের বিরুদ্ধে ভারত লং বল গেম খেলবে, না মাটিতে বল রেখে এগোবে? ডাচ কোচ তা বুঝতে দেননি। “আমার টিমে অন্তত পাঁচ-ছয় জন ছোট-খাটো ফুটবলার আছে যারা এক একটা পিরানহা মাছ,” মজা করে বলছেন কোভারম্যান্স। আসলে তিনি বোঝাতে চান গোঁতাগুঁতিতে না পারুক স্কিলে টেক্কা দিয়ে বিপক্ষের জেদকে গিলে খাওয়ার জন্য টিম ইন্ডিয়া তৈরি। তা সে যতই প্রেসিং ফুটবল খেলুক আফগানরা।
সাফ কাপ জয়ের হ্যাটট্রিকের সুযোগ। দেশের বাইরে কোভারম্যান্সের ট্রফি জয়ের অগ্নিপরীক্ষা। সমালোচনায় বিদ্ধ হওয়া রক্তাক্ত টিম ইন্ডিয়া। বিলালদের রণং দেহি মূর্তি নিয়ে যুদ্ধের দামামা বাজিয়ে দেওয়া। আশা আর আশঙ্কার অনেক লড়াই যে আজ দশরথ স্টেডিয়ামে!
আর এসবের বাইরেও আছে— ‘কাবুলিওয়ালার বাঙালি বউ’-এর নৃশংস খুন নিয়েও যে আলোচনা চলছে ভারতীয় ড্রেসিংরুমে ।

পুরনো খবর:


আজ টিভিতে

ভারত-আফগানিস্তান (স্টার স্পোর্টস-২, সন্ধ্যা ৬-১৫)।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.