সিবিআই চার্জশিটের পর আরও অবরুদ্ধ শ্রীনিবাসন
রাত ন’টা। মঙ্গলবার। নয়াদিল্লির সংবাদসংস্থা থেকে নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসনের ভেসে আসা উত্তেজিত বিবৃতি: ব্যবসার চার্জশিটের সঙ্গে আমার ক্রিকেটকে গুলিয়ে ফেলবেন না।
রাত সাড়ে ন’টা। মঙ্গলবার। সুপ্রিম কোর্টে তাঁর প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী আদিত্য বর্মার ফোনে ভেসে আসা অট্টহাসি। “কাহানি মে টুইস্ট! বিসিসিআই-এর সংবিধানে আছে, কারও বিরুদ্ধে চার্জশিট হলে সে আর বোর্ডের সঙ্গে নিজেকে জড়িত রাখতে পারে না। সুতরাং শ্রীনি আর ইলেকশনে দাঁড়াতে পারবে না। খেলা শেষ!”
কিন্তু শ্রীনি তো দাবি করেছেন ব্যবসা আর ক্রিকেট দুটো আলাদা। এই চার্জশিটের সঙ্গে তাঁর প্রেসিডেন্ট হিসেবে থার্ড টার্মের জন্য পুনর্নির্বাচিত হতে চাওয়ার কোনও বিরোধ নেই। আদিত্য বর্মার ঘরেই খোঁজ পাওয়া গেল দিল্লির অত্যন্ত সিনিয়র পুলিশ কর্তার। যিনি ফোনে এসে আনন্দবাজারকে এক লাইন বললেন, “সে আবার হয় নাকি? লোকটা তো একই!”
ভারতীয় ক্রিকেটমহল মনে করছে, এটাই অমোঘ লাইন!
অন্ধ্রপ্রদেশে ওয়াইএসআর কংগ্রেসের প্রধান জগন্মোহন রেড্ডি মামলায় ইন্ডিয়া সিমেন্টস-সহ শ্রীনিবাসনকে এ দিন অভিযুক্ত করেছে সিবিআই। অভিযুক্তদের তালিকায় তিনি আছেন তিন নম্বরে। সিবিআই-এর অভিযোগ, জগন্মোহনের ব্যবসায় ইন্ডিয়া সিমেন্টস এ জন্য একশো চল্লিশ কোটি টাকা লগ্নি করেছিল যে, বিনিময়ে ওয়াই এস রাজশেখর রেড্ডির সরকার তাদের নানান অন্যায় সুযোগ-সুবিধে পাইয়ে দেবে। হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় রাজশেখর রেড্ডি নিহত হওয়ার বছরখানেকের মধ্যে এই মামলা প্রকাশ্যে আসে। জগন অসদুপায়ে সম্পত্তি তৈরির অপরাধে গত মে মাস থেকে জেল খাটছেন। চার্জশিটে অভিযুক্ত হয়ে শ্রীনিবাসনের ভবিষ্যৎ কী, সেটাও ভেবে দেখার জন্য অনুরোধ করছে তাঁর বিরোধী শিবির।
গত কয়েক মাস ধরে এমনিতেই তাঁর চারপাশ থেকে বিপক্ষ সেনা আর সেনাপতি মোতায়েন হচ্ছিল। মঙ্গলবার যেন ব্যবসায়িক কেলেঙ্কারিতে ফেঁসে আরও অবরুদ্ধ হয়ে পড়লেন বোর্ড প্রেসিডেন্ট শ্রীনিবাসন। সুপ্রিম কোর্টে বুধবার তাঁর মামলা তালিকায় রয়েছে ১৬ নম্বরে। আইনজীবী মহলের মনে হচ্ছে তালিকায় এত দেরিতে থাকা মামলা যদি বুধবার না উঠে বৃহস্পতিবারে গড়িয়ে যায়, আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবে না। আদিত্য বর্মার পক্ষে প্রধান আইনজীবী হরিশ সালভে উপস্থিত থাকতে পারছেন না বিদেশে চলে যাওয়ায়। এ দিন নয়াদিল্লিতে ফোন করে জানা গেল এটা যদি বা সামান্য অস্বস্তির কারণ হয়, সাত তাড়াতাড়ি চেন্নাই থেকে নলিনী চিদম্বরমকে উড়িয়ে আনা হচ্ছে। শ্রীনি-বিপক্ষরা সমরসজ্জায় কোনও ঘাটতি রাখতে রাজি নন।
সুপ্রিম কোর্টে এ বারে যদি কোনও রেহাই না পান শ্রীনি, তা হলে ২৯ সেপ্টেম্বর চেন্নাইয়ে বার্ষিক সাধারণ বৈঠকে তিনি সভাপতিত্ব করবেন কী করে? কলকাতার বৈঠকে বিশেষ আমন্ত্রিত হিসেবে এসে তিনি আইনি লাল চোখকে দূরে রাখতে চেয়েছেন। কিন্তু এখানে তো সে সুযোগ নেই। আর সভা যদি তিনি চেয়ারই না করেন, তা হলে তো প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর বাড়তি ভোটটাও প্রয়োগ করতে পারবেন না।
শ্রীনি-বিরোধীরা ক্রমেই একজোট হচ্ছেন। পওয়ার, বিন্দ্রা, মনোহর, মুথাইয়া। এই জোট প্রবল ভাবে চেয়েও এখন পর্যন্ত অরুণ জেটলিকে প্রকাশ্যে তাদের সঙ্গে পায়নি। জেটলি এখনও নাছোড় এনসি, মানে নন-কমিটাল। এমন মধ্যপন্থী লাইন তাঁর যে, বিশেষ মিটিংয়ে ব্যস্ত থাকার জন্য যদি চেন্নাই বৈঠকে ভোট দিতেই না আসেন, কেউ আশ্চর্য হবে না। কিন্তু আপাতত যা পরিস্থিতি, বিপক্ষ শিবিরে জেটলি আবির্ভূত না হয়ে এবং বোর্ডের ভেতরে সংখ্যাগরিষ্ঠ থেকেও প্রবল কোণঠাসা শ্রীনিবাসন। সোমবারই বিকেলে কলকাতা থেকে দিল্লি যাওয়ার ফাঁকে আদিত্য বর্মা বলছিলেন, “জগ্গু দাদাকে একটু বলুন এত শ্রীনি-শ্রীনি না করতে। উনি সাহস করে যেন একটু পুরনো ডালমিয়া হয়ে যান।” শোনা যাচ্ছে আগামী ক’দিনের মধ্যে ‘উপযুক্ত সময়ে’ মুম্বই পুলিশের চাঞ্চল্যকর চার্জশিট বার হবে। তখন শ্রীনির বিরুদ্ধে জনমতের চাপও আরও বাড়বে। তার ক’দিনের মধ্যে যদি শশাঙ্ক মনোহর ঘোষণা করেন নির্বাচন হলে তিনি এক বছরের জন্য বোর্ডের আস্তাবল সাফ করতে তৈরি, তখন তো বোর্ডে হুলুস্থুলু পড়ে যাবে। সত্যিই হবে সে রকম কিছু? সিনিয়র বোর্ড সদস্য বললেন, “একটু ওয়েট করুন। নাটক শেষ হতে এখনও দেরি আছে।”
শ্রীনি-প্রতিদ্বন্দ্বী। দিল্লি উড়ে যাওয়ার আগে আদিত্য। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।
সুপ্রিম কোর্ট খালাস না করলে শ্রীনি যদি নির্বাচন পিছিয়ে দেন? ক্রিকেট বোর্ডে নির্বাচন পিছনোর দৃষ্টান্তও আছে। তিন মাস অবধি পিছনো যেতে পারে। যখন অনুকূল সময়ে তিনি আবার ভোট করাবেন। শ্রীনি-বিপক্ষরা মনে করেন, এই সুযোগ তিনি নেবেন না। এই নির্বাচন পিছোলে মাঝের সময়ে মুম্বই ক্রিকেট সংস্থার নির্বাচন রয়েছে অক্টোবরের মাঝামাঝি। যেখানে শরদ পওয়ার ফেরত আসছেন। পওয়ার বিরোধী হিসেবে বোর্ডে ফেরত এলে শ্রীনির পক্ষে সামলানো আরও মুশকিল। তাঁর এক বিরোধী এ দিন রাতে বলছিলেন, “এটাই হল আইডিয়াল কিস্তিমাত। সামনের ঘরে গেলেও তোমাকে খাবে। পিছনে গেলেও খাবে।”
তাঁর প্রবল সংখ্যাধিক্য থাকা বোর্ডও কি তাই মনে করে? নাকি আদিত্য বর্মারা বেশি আশাবাদী হয়ে দিবাস্বপ্ন দেখছেন?
মঙ্গলবার রাতে একাধিক বোর্ড সদস্যের সঙ্গে কথা বলে মনে হল, কাহানি মে সত্যিই টুইস্ট। প্রখর শ্রীনি-সমর্থকেরাও মনে করছেন শুধু ডালমিয়া নন, অনেকেরই এখন শ্রীনি-লাইন নিয়ে পুনর্বিবেচনার সময় এসে পড়েছে। পরিষ্কার দিগ্নির্দেশ হল, অপ্রত্যাশিত কিছু না ঘটলে পরিস্থিতির হাওয়া বদলের দিকে। সে শ্রীনিবাসন যতই বুক ফুলিয়ে বলুন, বিজনেস চার্জশিটের সঙ্গে আমার ক্রিকেটকে গোলাবেন না!

পুরনো খবর:




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.