পুজোর বাকি আর এক মাস। তার আগে নানা ধরনের রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের বিভিন্ন এলাকায়। কয়েকটি জায়গায় ছড়িয়েছে অজানা জ্বর। প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। বিভিন্ন এলাকায় ডেঙ্গি ও ডায়েরিয়ার প্রকোপও দেখা দিয়েছে। ছড়াচ্ছে টাইফয়েড, নিউমোনিয়া। মেদিনীপুর মেডিক্যাল ছাড়াও বিভিন্ন মহকুমা এবং গ্রামীণ হাসপাতালে অসুস্থদের চিকিত্সা চলছে। সোমবার ভোরে খড়্গপুর লোকাল থানার পানিশিউলিতে ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ন’বছরের এক বালিকার মৃত্যু হয়েছে। মৃতের নাম শঙ্করী মুদি। জানা গিয়েছে, বাড়ির লোকজন এক হাতুড়ে ডাক্তারের কাছে মেয়েটির চিকিত্সা করাচ্ছিলেন। |
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, ডেঙ্গি, অজানা জ্বর, টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়েছেন জেলার প্রায় বারোশো মানুষ। এ ছাড়াও হাজার চারেক মানুষ জ্বর-সর্দি-কাশিতে ভুগছেন। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরার বক্তব্য, “কিছু এলাকায় অজানা জ্বর দেখা দিয়েছে। বেশ কয়েকজন আক্রান্ত হয়েছেন। ওই সব এলাকায় মেডিক্যাল টিম কাজ করছে। স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন। রক্ত পরীক্ষা করা হচ্ছে।” ডেঙ্গি আক্রান্তদের চিকিত্সা চলছে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। হাসপাতাল সুপার যুগল কর বলেন, “সকলেরই শারিরীক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে।”
মেডিক্যাল সূত্রে খবর, ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ৮ জন। এর মধ্যে ৫ জনই গড়বেতার বাসিন্দা। ২ জন খড়্গপুর লোকাল থানা এলাকার, আর এক জন মেদিনীপুর কোতয়ালি থানা এলাকার। রোগের প্রকোপ নিয়ে ইতিমধ্যে জেলা থেকে রিপোর্ট গিয়েছে রাজ্যে। ২৬ অগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বরের ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, অজানা জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা ৯৯১ জন। টাইফয়েডে ভুগছেন ১১২ জন। সাধারণ জ্বর-সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৯২৫ জন। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ৩০ জন। রক্ত আমাশায় ভুগছেন ৬৫১ জন। এই সময়ের মধ্যে প্রায় ৩২ হাজার জন বিভিন্ন হাসপাতাল-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বহির্বিভাগে চিকিত্সা করিয়েছেন। গত চার মাসে জেলায় বেশ কয়েকদফায় অতিবৃষ্টি হয়েছে। তার জেরে কিছু এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। অতিবৃষ্টির পরপরই বিভিন্ন এলাকায় ডায়েরিয়া, অজানা জ্বরের প্রকোপ দেখা দেয়। |
রোগ-জর্জর |
• ডেঙ্গি আক্রান্ত ৮ জন, চিকিত্সা চলছে মেদিনীপুর মেডিক্যালে। |
• অজানা জ্বরে আক্রান্ত ৯৯১ জন। |
• টাইফয়েডে আক্রান্ত ১১২ জন। |
• সাধারণ জ্বর-সর্দি-কাশিতে ভুগছেন ৩৯২৫ জন। |
• নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ৩০ জন। |
• বিভিন্ন এলাকায় কাজ করছে মেডিক্যাল টিম। রক্ত পরীক্ষা করানো হচ্ছে।
জলের নমুনা পাঠানো হচ্ছে পরীক্ষার জন্য। |
|
পরিস্থিতি দেখে জেলা স্বাস্থ্য দফতর বিভিন্ন এলাকায় সচেতনতামূলক প্রচার শুরু করেছে। স্বাস্থ্যকর্মীরা এলাকায় গিয়ে বোঝাচ্ছেন, কোন রোগের কী উপর্সগ, সাবধানতার জন্য কী কী পদক্ষেপ করা প্রয়োজন। যেমন, ঈডিস ইজিপ্সাই প্রজাতির মশা ডেঙ্গির বাহক। এরা জমা জলে বংশবৃদ্ধি করে। তাই, এক জায়গায় বেশি দিন জল জমা করে রাখা যাবে না। বাড়ির জলাধারের জল সপ্তাহে অন্তত একদিন করে বদলানো জরুরি। বাড়ির চারপাশের নর্দমা পরিষ্কার করতে হবে। রাতে মশারি ব্যবহার করতে হবে।
ডায়েরিয়া প্রতিরোধেও তত্পর স্বাস্থ্য দফতর। বিশেষ করে এক জনের মৃত্যুর পর তত্পরতা বেড়েছে। সোমবার খড়্গপুরের পানিশিউলিতে যান উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ প্রধান। সঙ্গে ছিল মেডিক্যাল টিম। স্বাস্থ্য দফতরের অনুমান, দূষিত জল থেকেই এই পরিস্থিতি। পুকুরের জলের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হচ্ছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিকের আশ্বাস, “পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। উদ্বেগের কিছু নেই।” |