অভিযোগ বর্ধমানে
সুপার স্পেশ্যালিটি ইউনিটে বিদ্যুৎ বিভ্রাট, নাকাল রোগী
রকারি মেডিক্যাল কলেজের সুপার স্পেশ্যালিটি ইউনিটের ক্যাথল্যাবে হৃদ্রোগীর বুকে স্টেন্ট বসানো হচ্ছিল। আচমকা লোডশেডিং। অন্ধকারে চিকিৎসকদের তাড়াহুড়োয় স্টেন্টের একটা তার ভেঙে ঢুকে গেল রোগীর করোনারি আর্টারিতে। সেই তার বার করতে না পেরে সেখানে রেখেই সেলাই করে দিলেন চিকিৎসকেরা। দু’মাস ধরে রোগী যন্ত্রণা সহ্য করার পর গত সপ্তাহে সেই তার বার করা হয়েছে কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে।
বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের সুপার স্পেশ্যালিটি ইউনিট ‘অনাময়’-এ অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করাতে গিয়েছিলেন জামালপুর থানার সাহাপুর এলাকার বাসিন্দা শেখ বদ্রে আলম। ৫৪ বছর বয়সী আলমের অস্ত্রোপচারের সময়ে এই ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সুপার স্পেশ্যালিটি ইউনিট হওয়া সত্ত্বেও ‘অনাময়’-এ বিদ্যুতের বিকল্প কোনও ব্যবস্থা নেই। অস্ত্রোপচারের মাঝখানে লোডশেডিং হলে হৃদ্রোগীর ভরসা উপরওয়ালাই!
শেখ বদ্রে আলম।—নিজস্ব চিত্র।
গত ২২ অগস্ট কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা বদ্রে আলমের শরীর থেকে ওই বন্ধ হওয়া স্টেন্ট ও ভাঙা তার বার করে বাইপাস অপারেশন করেছেন। বাড়ি ফিরে গত ২ সেপ্টেম্বর ‘অনাময়’ এবং সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের বিরুদ্ধে বর্ধমান সদর থানায় লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন বদ্রে আলম (জিডি নম্বর ১৪২)। অভিযোগ জানানো হয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর ও রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলেও।
এর পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যের স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “অনাময়-এ বিদ্যুতের একটা সমস্যা রয়েছে জানি। জেলা পরিষদ এখনও ওখানে বিদ্যুতের ব্যাপারটা দেখে। ওরা ঠিক সামলাতে পারছে না। আমরা পূর্ত দফতরের বিদ্যুৎ বিভাগের উপর দায়িত্ব দিতে চাইছি। মনে হয় কিছু দিনের মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাবে।” কিন্তু ততদিনে যদি অনাময়ের ক্যাথল্যাবে অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে কোনও অঘটন ঘটে যায়? উত্তর দেননি সুশান্তবাবু। কী করে বিকল্প বিদ্যুতের ব্যবস্থা না-করে গত প্রায় দেড় বছর ধরে একটা সুপার স্পেশ্যালিটি ইউনিট চালানো হচ্ছে, তার-ও উত্তর নেই স্বাস্থ্যকর্তাদের মুখে।
বদ্রে আলম জানিয়েছেন, অনাময়ের অস্ত্রোপচারে প্রায় ৭০ হাজার টাকা খরচ হওয়ার পর বেসরকারি হাসপাতালে আবার অস্ত্রোপচারে আরও প্রায় ২ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে তাঁর। বলেন, “আমি সব্জি আর চালের ছোটখাট ব্যাপারি। ধনেপ্রাণে শেষ হয়ে গেলাম। তাই পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছি। এতে আমি মরেও যেতে পারতাম।”
অভিযুক্ত চিকিৎসক অনাময়ের হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ গৌতম দত্ত স্বীকার করেন, “অস্ত্রোপচারের মাঝে বিদ্যুৎ চলে গিয়েছিল। তাড়াতাড়ি করতে গিয়ে স্টেন্ট থেকে একটা তার ভেঙে গেল। আমরা ধমনীর দেওয়ালে সেটা পুঁতে রেখে দিয়েছিলাম।”
কিন্তু স্টেন্টের ভাঙা তার ধমনীতে রেখে দেওয়া হল কেন? এটা কি চিকিৎসকের দক্ষতার অভাব নয়? গৌতমবাবুর উত্তর, “এ ব্যাপারে আমার কিছু বলার নেই। অনেকসময় ‘ফরেন বডি’ বার করতে না-পারলে আমরা দেহের ভিতরেই রেখে দিই!”
কিন্তু ক্যাথল্যাবে লোডশেডিং হয় কী করে? গৌতমবাবু বলেন, “এখানে এই রকমই হয়। অস্ত্রোপচারের সময় বিদ্যুতের কোনও বিকল্প ব্যবস্থা নেই আমাদের। যে জেনারেটর আছে ক্যাথলাবের কাজ চালানোর ক্ষমতা নেই সেটির।”
কেন এই অবস্থা জিজ্ঞাসা করা হলে বর্ধমান মেডিক্যালের সুপার অসিতবরণ সামন্ত ব্যাখ্যা করেন, “জেলা পরিষদ ঢিলেমি করছে। তাদের হাত থেকে নিয়ে পূর্ত দফতরকে অনাময়ের বিদ্যুতের ভার দেওয়ার তোড়জোড় চলছে। কিন্তু তা কবে সফল হবে স্বাস্থ্য দফতরই বলতে পারে।” তিনি আরও বলেন, “আমরা ১৬২ কেভি-র একটা জেনারেটরের জন্য আবেদন জানিয়েছিলাম অনেক দিন আগে। এটা না-থাকলে জেনারেটর দিয়ে ক্যাথল্যাবের কাজ হবে না। কিন্তু আবেদন এখনও গ্রাহ্য হয়নি।”
সুপার জানান, জরুরি অস্ত্রোপচারের মাঝখানে লোডশেডিং হয়ে গেলে অনাময়ের চিকিৎসকেরা নিরুপায় হয়ে নিকটবর্তী বেচারহাট সাবস্টেশনে ফোন করে তাড়াতাড়ি বিদ্যুৎসংযোগ করে দিতে বলেন। এই ভাবেই রোগীর জীবন নিয়ে জুয়াখেলা চলছে। সুপারের বক্তব্য, “এটা কোনও স্থায়ী ব্যবস্থা হতে পারে না, সেটা আমরাও জানি। এক দিন যদি কোনও ভাবে বিদ্যুৎ দিতে দেরি হয়, রোগী স্রেফ মারা যাবে।” বদ্রে আলমের ঘটনার মতো লোডশেডিংয়ের জন্য কোনও তারের টুকরো ধমনীর মধ্যে থেকে গেলেও ঘোর বিপদের সম্ভাবনা। যে চিকিৎসক কলকাতায় তাঁর বাইপাস করে স্টেন্ট ও ভাঙা তার বার করেছেন সেই কুণাল সরকারের কথায়, “ওই তারের টুকরো কোনও ভাবে হৃদ্যন্ত্রে গেঁথে যেতে পারত। রক্তের মধ্যে প্রবাহিত হয়ে হৃদ্যন্ত্র, ফুসফুস, মস্তিষ্ক বা যে কোনও অঙ্গে চলে যেতে পারত। তাতে প্রাণসংশয় হত রোগীর। এটা তো গোঁজামিল, ফাঁকিবাজি। এই ভাবে গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা চলতে পারে না।”
হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ সত্যজিৎ বসুও মনে করেন, “এই রকম ক্যাথল্যাব মানে রোগীকে মৃত্যুর মুখে বসিয়ে রেখে অস্ত্রোপচার করা। আমি তো ভাবতেই পারছি না। ওই তারের টুকরে ধমনীতে থেকে গেলে তার চারপাশে রক্ত জমে ওই রোগীর ফের হার্ট অ্যাটাক হতে পারত।” হৃদ্রোগ চিকিৎসক অরুণাংশু গঙ্গোপাধ্যায় মনে করেন, “চিকিৎসকের অভিজ্ঞতা কম থাকলে বা খুব তাড়াহুড়ো করে স্টেন্ট বসাতে গেলে এই রকম দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। পরিকাঠামো ঠিক না করেই ক্যাথল্যাব পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করলে এই হয়।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.