|
|
|
|
মোর্চার ফতোয়া নিয়ে উদ্বেগে পাহাড়ের পড়ুয়ারা
অনির্বাণ রায় • শিলিগুড়ি |
মিছিলে না গেলে কি স্কুল থেকে নাম কেটে দেবে?
খুবই উদ্বিগ্ন স্বরে প্রশ্ন করল কার্শিয়াঙের একটি আবাসিক স্কুলের দশম শ্রেণির এক ছাত্র। বাড়ি বাংলাদেশের চট্টগ্রামে। ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে টানা বন্ধের কবল থেকে পাহাড়ের স্কুলগুলিকে ছাড় দেওয়া হয়েছে। সোমবার থেকে দু’দিনের জন্য বনধও শিথিল করা হয়েছে। তাই এদিনই স্কুলে পৌঁছে যেতে চায় সে। স্কুল কর্তৃপক্ষগুলিও বাস পাঠাচ্ছে কার্শিয়াং, কালিম্পং থেকে। সেই বাসের অপেক্ষায় দুপুরে শিলিগুড়ির দার্জিলিং মোড়ে তার সঙ্গে দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশেরই আরও দুই সহপাঠী ও অভিভাবকেরা। কিন্তু সপ্তাহান্তে গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে মিছিলে সামিল হতে মোর্চার ফতোয়ায় রীতিমতো আতঙ্কিত সকলেই। সেই সঙ্গে আশঙ্কা, পাহাড়ে বনধ চলতে থাকলে খাদ্যদ্রব্য থেকে পড়াশোনার প্রয়োজনীয় সামগ্রী ঠিকঠাক মিলবে তো!
অগস্টে বনধ শুরুর পরে প্রায় দেড় সপ্তাহ কালিম্পং লাগোয়া একটি স্কুলের হস্টেলে থাকতে হয়েছে নবম শ্রেণির আর এক ছাত্রকে। তার কথায়, “সকালে স্কোয়াশের সব্জি, দুপুরে স্কোয়াশের ঝোল আর রাতেও স্কোয়াশ খেয়ে থাকতে মাঝেমধ্যে কান্না পেয়ে যেত। বিস্কুট, পাঁউরুটি কিচ্ছু পাওয়া যেত না। পেলেও অন্তত তিন গুন দাম। তাই এ বার বাড়ি থেকে অনেক বিস্কুট, কেক নিয়ে এসেছি। কিন্তু এ বারও সপ্তাহখানেকের বেশি বনধ চললে আবার সেই স্কোয়াশ অপেক্ষা করে রয়েছে।”
কিন্তু সব কিছু ছাপিয়ে গিয়েছে সরাসরি আন্দোলনে সামিল হওয়ার নির্দেশ। ইন্টারনেটের মাধ্যমেই তারা মোর্চার ফতোয়ার কথা জেনেছে। কার্শিয়াঙের দশম শ্রেণির ছাত্রটির কথায়, “মিছিলে যাওয়াটা কি বাধ্যতামূলক? কিন্তু যদি মিছিলে যাওয়ায় আবার আমাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়! বাড়িতেও সবাই খুব চিন্তায়। কী হল সেটা দেশে ফোন করে জানাতে বলেছে।”
মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতা অবশ্য জানান, পড়ুয়াদের সমস্যা ও উদ্বেগ নিয়ে আজ, মঙ্গলবার গোর্খাল্যান্ড জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটির বৈঠকে আলোচনা হবে।
অভিভাবকদের অবশ্য উদ্বেগ কাটছে না। ঢাকা থেকে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র ছেলেকে নিয়ে সোমবারই চ্যাংরাবান্ধা সীমান্ত দিয়ে শিলিগুড়ি পৌঁছেছেন বাংলাদেশের ফেডারেশন অফ চেম্বার্স অফ কমার্সের এক আধিকারিক। তাঁর ছেলেও পাহাড়ের একটি স্কুলে পড়ে। তাঁর কথায়, “আমরা বাংলাদেশের বাসিন্দা। পাহাড়ে যদি মিছিলে গিয়ে অপ্রীতিকর ঘটলে তা নিয়ে ভারতে মামলা হতে পারে। সেক্ষেত্রে আমাদের আইনি জটিলতায় পড়তে হবে।” আর এক অভিভাবকের কথায়, “ভেবেছিলাম ছেলেকে অন্য স্কুলে সরিয়ে নিয়ে যাব। কিন্তু মরসুমের মাঝখানে অনেক স্কুলেই ভর্তি নিতে চাইল না। তা ছাড়া, ভর্তির সময়ে সারা বছরের কোর্স ফি-ও জমা দেওয়া রয়েছে। এখন খুবই আতঙ্কে রয়েছি।”
খাওয়ার জিনিস ছাড়াও, খাতা-পেনসিল নিয়েও চিন্তায় পড়ুয়ারা। দোকান বাজার বন্ধ থাকলে, সব জিনিসেরই দাম অনেকটাই বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা তাদের। এক পড়ুয়া বলছে, “বই না হয় স্কুল থেকে দেয়। কিন্তু খাতা বা পেন শেষ হলে কী হবে! না কি আবার একটি খাতা কিনতে ৫০ টাকা দিতে হবে? অত টাকা কোথায় পাব? গত মাসে বন্ধের সময় পাহাড় থেকে নামতে একটি গাড়ি ৮০০ টাকা চেয়েছিল। তাই অনেকটা পথ হেঁটে এসে পরে ৫০০ টাকা দিয়ে শিলিগুড়ি নেমেছিলাম।”
এ দিন কার্শিয়াঙের একটি স্কুল থেকে শিলিগুড়িতে পড়ুয়াদের নিয়ে যেতে বাস পাঠানো হয়েছিল। ছিলেন এক শিক্ষকও। পড়ুয়াদের শঙ্কা নিয়ে প্রশ্ন করায় জানালেন, “স্কুল কর্তৃপক্ষ বেশি করে খাবার মজুত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।” মিছিলেও কী যেতে হবে পড়ুয়াদের? পাহাড়েরই বাসিন্দা ওই শিক্ষকের কথায়, “দয়া করে এ সব নিয়ে আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করবেন না। আমি নিজেও কিছু জানি না।” |
|
|
|
|
|