এরা প্রত্যেকেই কৃতী। পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করায় রাজ্য সরকারের কাছ থেকে অনুদান পায়। কিন্তু সেই অনুদান পাওয়া নিয়েই এ বার বৈষম্যের অভিযোগ উঠল।
প্রশাসন সূত্রের খবর, মাধ্যমিক থেকে স্নাতক স্তর পর্যন্ত কৃতী ছাত্রছাত্রীদের অনুদান দেয় রাজ্যের স্কুল এবং উচ্চ শিক্ষা দফতর। বহু বছর ধরেই এই ব্যবস্থা চালু রয়েছে। নতুন সরকারের আমলে এর পোশাকি নাম দেওয়া হয়েছে, ‘স্বামী বিবেকানন্দ ওয়েস্ট বেঙ্গল গভর্নমেন্ট মেরিট কাম মিন্স স্কলারশিপ’। আবার, মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকেও কৃতী ছাত্রছাত্রীদের অনুদান দেওয়ার ব্যবস্থা চালু রয়েছে বাম আমল থেকেই।
কিন্তু এই অনুদান পাওয়ার মাপকাঠি নিয়েই যত গণ্ডগোল। বিকাশ ভবনের এক মুখপাত্র জানান, সাধারণ ভাবে মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকে ৭৫%-এর উপরে প্রাপ্ত নম্বর এবং পারিবারিক আয় বছরে ৮০ হাজার টাকার কম এমন ছাত্রছাত্রীই শিক্ষা দফতরের অনুদান পেয়ে থাকে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর অফিসে অনুদানের মাপকাঠি অন্য! মহাকরণের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে অনুদান পেতে হলে মাধ্যমিকে ৬৫% থেকে ৭৫% এবং উচ্চমাধ্যমিকে ৬০% থেকে ৭৫% নম্বর পেলেই হবে। পারিবারিক আয় হতে হবে বছরে ৬০ হাজার টাকার। অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রীর অফিসের এই মাপকাঠির ফলে অনেক কম নম্বর পাওয়া ছেলেমেয়েরা যে অনুদান পাচ্ছে, তুলনায় বেশি নম্বর পেয়েও শিক্ষা দফতর থেকে তার থেকে কম অনুদান পাচ্ছে পড়ুয়ারা।
বৈষম্যের চেহারাটা কী রকম?
শিক্ষা দফতরের খবর, মাধ্যমিকে কৃতীদের বছরে ৬০০০ টাকা (মাসে ৫০০ টাকা করে) অনুদান দেয় তারা। কিন্তু কম নম্বর পেয়েও মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে মাধ্যমিকের কৃতীরা পায় বছরে ১০ হাজার টাকা। একই ভাবে, উচ্চমাধ্যমিকে ৭৫%-এর বেশি পাওয়া ছাত্রছাত্রী, যারা কলা বা বাণিজ্য নিয়ে স্নাতক স্তরে পড়াশোনা করছে, তাঁদের মাসে ৭৫০ টাকা হিসাবে বছরে ৯০০০ টাকা করে অনুদান দিচ্ছে শিক্ষা দফতর। এ ক্ষেত্রেও মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে দেওয়া হয় বছরে ১০ হাজার টাকা। আবার, স্নাতক স্তরে বিজ্ঞান শাখার পড়ুয়াদের মাসে ৯০০ টাকা হিসাবে বছরে ১০ হাজার ৮০০ টাকা অনুদান দেয় শিক্ষা দফতর। এ ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে মেলে কম, বছরে ১০ হাজার টাকা।
কেন এই পার্থক্য?
রাজ্য প্রশাসনের কর্তাদের বক্তব্য, বাম আমলে শিক্ষা দফতর থেকে যে পরিমাণ অনুদান দেওয়া হত, এই আমলে তার হেরফের হয়নি। তবে এখন আগের আমলের থেকে অনেক বেশি পড়ুয়া এই অনুদান পায়। কিন্তু আগের আমলে মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে মাধ্যমিকের কৃতীদের অনুদান দেওয়া হত বছরে ৫০০০ টাকা। সেটাই এখন বেড়ে হয়েছে ১০ হাজার টাকা। এতেই পার্থক্য হয়ে যাচ্ছে। এর কারণ হিসাবে দুই দফতরের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবকেই দায়ী করেছেন কর্তারা।
মুখ্যমন্ত্রীর দফতর সূত্রের খবর, ত্রাণ তহবিল থেকে অনুদান দেওয়ার কোনও সরকারি নির্দেশিকা নেই। একটি ‘নোট’-এর ভিত্তিতে অনুদানের মাপকাঠি জানিয়ে দেওয়া হয়। শিক্ষা দফতরের অনুদানই আসলে পড়ুয়াদের অনুদান দেওয়ার ঘোষিত সরকারি প্রকল্প। তাই দু’টির মধ্যে তুলনা টানা ঠিক হবে না। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুরও দাবি, “মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের বিষয়টি একেবারেই স্বতন্ত্র। এর সঙ্গে কোনও সরকারি প্রকল্পের তুলনা টানা যায় না।” মহাকরণ সূত্রের খবর, বৈষম্যের বিষয়টি নজরে আসতেই নড়ে বসেছে শিক্ষা দফতর। গত ২ সেপ্টেম্বর অনুদান (সরকারি পরিভাষায় বৃত্তি) কমিটির বৈঠকে সব ক্ষেত্রেই টাকা অঙ্ক প্রায় দেড় গুণ বাড়ানোর প্রস্তাব উঠেছে। তা হলে দুই দফতরের পার্থক্য অনেকটাই দূর হবে বলে মনে করা হচ্ছে। ব্রাত্য বসু জানিয়েছেন, অনুদানের পরিমাণ বাড়ানোই নয়, ন্যূনতম পারিবারিক আয়ের পরিমাণও বছরে ৮০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ লক্ষ ২০ হাজার করার ভাবনাচিন্তা করছে শিক্ষা দফতর। তাঁর কথায়, “এর ফলে অনেক বেশি পড়ুয়াকে বৃত্তির আওতায় আনা যাবে।” |