|
|
|
|
পার্বতীদের পাটের দুর্গা এ বার যাচ্ছে নাসিকে |
আনন্দ মণ্ডল • তমলুক |
দশভুজার নামে নাম হলেও তাঁর একটিও হাত নেই। তবু এবার দুর্গাপূজায় তাঁর ব্যস্ততার শেষ নেই। তমলুকের প্রত্যন্ত পূর্বনখা গ্রামের প্রতিবন্ধী পার্বতী জানা দুই পায়ের নিপুন দক্ষতায় তৈরি করছেন পাটের দুর্গা মূতি। এই শিল্পকর্মে সামিল হয়েছে পম্পা দাস, রুনু জানা, সৃজিত মাইতি, নাসিমা খাতুনের মত আরও জনা পনেরো প্রতিবন্ধী ছেলে-মেয়ে। বেশিরভাগই মূক ও বধির। বাংলার চিরাচরিত পাট দিয়ে তাঁরা তৈরি করছেন দুর্গা, গণেশ, কালী থেকে স্বামী বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ, নেতাজির মূতি। এর মধ্যে পার্বতীদের তৈরি প্রায় ৩০০টি পাটের দুর্গামূর্তি এ বার যাচ্ছে মহারাষ্ট্রের নাসিকে। সময়ে তা দিতে হবে বলে তমলুকের নিমতৌড়িতে তমলুক উন্নয়ন সমিতির কর্মশালায় এখন তুমুল ব্যস্ততা। কর্মশালায় গিয়ে দেখা গেল পিচবোর্ডের উপর কৃষ্ণনগরের পোড়ামাটির দুর্গা মূর্তিকে সুদৃশ্য পাটের গয়না পরাতে ব্যস্ত পার্বতী, নাসিমারা। দু’পায়ের আঙুল দিয়ে আঠা লাগিয়ে পাটের টুকরো সাঁটাচ্ছেন পার্বতী। একমনে কাজ করতে করতে বললেন, “কোনও কাজ করতে পারব সেটাই ভাবতে পারতাম না আগে। মূর্তি তৈরির মতো নিখুঁত কাজ তো দূরের কথা। এখন আমার সঙ্গে অনেকেই কাজ করছে দেখে আরও ভাল লাগছে।” |
 |
কর্মশালায় ব্যস্ত প্রতিবন্ধীরা। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস। |
পাবর্তীর পাশে বসেই কাজ করছিলেন মূক ও বধির পম্পা দাস। তমলুকের নকিবসান গ্রামের পম্পার বাবা কমল দাস পেশায় দিনমজুর। আর পম্পার মা ভ্যান রিকশা চালান। অন্য একটি সরকারি হোম থেকে এখানে আসা পিতৃ-মাতৃহীন মানসিক প্রতিবন্ধী নাসিমাও দুর্গামূর্তি তৈরির কাজ করছেন পার্বতীদের সঙ্গে।
এদের গুণের খবর নাসিক পর্যন্ত গেল কী করে?
যিনি এর পিছনে রয়েছেন, সেই নাসিক সর্বজনীন দুর্গাপূজা কমিটির সহ-সভাপতি চন্দন কুমার সামন্ত জানান, আদতে তাঁর বাড়ি তমলুক শহরের টাউন স্কুল পাড়ায়। দীর্ঘ ৩৫ বছর সেনাবাহিনীর চাকরির পর কয়েক বছর ধরে নাসিকের বাসিন্দা। ওখানে বাঙালিরা যে পুজো করে, তা ৬০ বছরে পড়ল। গত ১০ বছর বেশ জাঁকজমক করেই হচ্ছে পুজো। চন্দনবাবু বলেন, “পুজোর মণ্ডপে আসা অতিথিদের উপহার দেওয়ার চল আছে। গত কয়েক বছর ধরে কলকাতা থেকে বিভিন্ন উপহার সামগ্রী এনে দেওয়া হয়েছে। তমলুকের ওই প্রতিবন্ধী শিল্পীদের পাটের তৈরি দুর্গামূর্তি দেখে আমাদের খুব ভাল লেগেছে। এবছর আমাদের মণ্ডপে আসা অতিথিদের উপহার হিসেবে ওই পাটের দুর্গামূর্তি দেওয়া হবে।”
তমলুক উন্নয়ন সমিতির সম্পাদক যোগেশ সামন্ত জানান, প্রতিবন্ধীদের হাতে তৈরি এইসব দুর্গা মূর্তি মহারাষ্ট্রে পাঠানোর পাশপাশি ঝাড়খণ্ডের রাঁচি শহরের একটি দুর্গাপূজার মণ্ডপসজ্জা হচ্ছে এদের হাতের কারুকাজ দিয়ে। বিভিন্ন গাছের শুকনো ফলের অংশ ব্যবহার করে তৈরি করা হবে মণ্ডপসজ্জার শিল্পকর্ম। সব মিলিয়ে পুজোর আগে নাওয়া-খাওয়ার সময় নেই এই প্রতিবন্ধীদের। যাদের ‘অকেজো’ বলেই ভাবত আগে লোকজন। |
|
|
 |
|
|