হুঁশ নেই প্রশাসনের
ঝুমির পাড় ভেঙে নদীগর্ভে জমি-বাড়ি
কী অদ্ভুত বৈপরীত্য! গ্রীষ্মকালে যে ঝুমি নদীর জল সেচের কাজে একমাত্র ভরসা, বর্ষাকাল এলে সেই নদীই ঘুম কাড়ে এলাকাবাসীর। গত তিন দশক ধরে দ্বারকেশ্বরের এই শাখা নদীটি গতিপথ পাল্টাচ্ছে। ফলে নদীর দুই পাড়ের বাঁধের দুর্বল অংশ ভেঙে গিয়ে চওড়ায় নদীর বহর ক্রমশ বাড়ছে। বাঁধের ভাঙনে নদী গর্ভে তলিয়ে গিয়েছে ঘাটালের নদী তীরবর্তী বেশ কিছু বাড়ি,জমি। তবুও বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণের দিকে নজর ফেরেনি প্রশাসনের।
হুগলির আরামবাগ সংলগ্ন কালীপুর থেকে দ্বারকেশ্বরের এই শাখা নদীটি বেরিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটাল ব্লকের কোমরা, দামোদরপুর, কামারডাঙা, মনসুকা, সিংহপুর, গঙ্গাপ্রসাদ, বলরামপুর-সহ প্রায় ষাট-সত্তরটি গ্রাম হয়ে হুগলির বন্দর থেকে রূপনারায়ণে গিয়ে মিশেছে। এই ঝুমি নদীর দু’পাড়েই জমিদারি বাঁধ থাকার ফলে সেচ দফতরও এর দেখভাল করে না। আর সংস্কার না হওয়ায় প্রায় ১৫ কিলোমিটারের বেশি এই নদীটি দিনের পর দিন পাড় ভেঙে চওড়ায় ক্রমশ বড় হচ্ছে। ফলে নদীর দু’পাড়ের কৃষি নির্ভর গঙ্গাপ্রসাদ, সিংহপুর, বলরামপুর, কোমরা-সহ একাধিক গ্রামের একাংশ চলে গিয়েছে নদী গর্ভে। তলিয়ে গিয়েছে একের পর এক চাষ যোগ্য জমিও। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্থদের শুধু ত্রিপল দিয়েই দায় সারা হয়েছে। বাঁধ মেরামতির জন্য কোনও কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
ঘাটালের গঙ্গাপ্রসাদ গ্রামে এ ভাবেই ভাঙছে পাড়।—নিজস্ব চিত্র।
ঘাটাল পুরসভার সিংহপুরের নেপাল মাইতি, গঙ্গাপ্রসাদের সলিল কারক, কোমরার ঝর্ণা বেরা বলেন, “আমাদের বাড়ি চলে গিয়েছে। কোনওভাবে ফের বাড়ি তৈরি করে রয়েছি। আবার যে কোনও সময় ঝুমি নদীর গর্ভে বাড়ি তলিয়ে যাওয়ার আতঙ্কেই দিন কাটাচ্ছি।” স্থানীয় বাসিন্দা তথা ঘাটাল পুরসভার আট নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন তৃণমূলের কাউন্সিলর হারাধন সানকি বলেন, “তিন দশক ধরে নদীর গতিপথ পাল্টে যাওয়ায় পাড় ভেঙে বহু বড়ি, জমি নদীতে মিশে গিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে কেউ সরকারি খাস জমিতে রয়েছেন। আবার কেউ বা উপায় না থাকায় অন্যত্র সরে গিয়ে চাষযোগ্য জমিতে বাড়ি করে দিন কাটাচ্ছেন।” মনসুকার বাসিন্দা ষাটোধ্বর্র্ বিমল পোড়ে বলেন, “সরকার এখনই ঝুমির পাড় নিয়ে চিন্তাভাবনা না করলে গ্রামের পর গ্রাম শেষ হয়ে যাবে।”
এই সমস্যার সমাধানে কী করা উচিত? নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্রের কথায়, “ব্রিটিশ আমলে নদীর জলের বহন ক্ষমতা অনুযায়ী ওই বাঁধগুলি তৈরি হয়েছিল। এখন নদী মজে গেলেও নদীর উপর চাপ বাড়ছে। ফলে নদী তার জায়গা করে নিচ্ছে। এটাই প্রকৃতির নিয়ম।” কল্যাণ বাবু আরও বলেন, “বাঁধের ভাঙা অংশটুকু মাটি ফেলে মেরামত করলে হবে না। নদী যতটা জায়গা নেবে সেটা ছেড়ে দিয়ে বাঁধ সংস্কার করতে হবে। এবং প্রয়োজনে নদীর পাড়ের মানুষদের সরিয়ে তাঁদের পুর্নবাসনের ব্যবস্থাও করতে হবে। তবেই কিছুটা হলেও সমস্যার সমাধান হবে। তবে আমাদের মতো নদীমাতৃক দেশে নদীর জন্য আলাদা দফতরের বিষয়ে সরকারের ভাবা দরকার।” ঘাটালের তৃণমূল বিধায়ক শঙ্কর দোলই বলেন, “ঝুমি নদীর বাঁধ ভেঙে দিন দিন পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে। আমি সেচমন্ত্রীকে বলে ঝুমি নদীর পাড় মেরামত করার আর্জি জানিয়েছে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.