চোদ্দো বছরের নাতিকে নিয়ে মহেশতলায় আত্মীয়ের বাড়ি যাচ্ছিলেন আশি বছরের বৃদ্ধ। নাতি বাসের সামনের দরজা দিয়ে ওঠার পরে দাদু উঠতে যান। অভিযোগ, তখনই বাসটি গতি বাড়িয়ে দেয়। সামনের দরজা থেকে পা পিছলে পড়ে যান বৃদ্ধ। ওই বাসেরই পিছনের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর।
সোমবার বিকেলে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে বেহালা চৌরাস্তায়। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম মন্মথনাথ নস্কর। বাড়ি পৈলানের করিমপুরে। মন্মথবাবুর নাতি রাজেশ জানিয়েছে, মহেশতলার ব্যানার্জিহাটে এক আত্মীয়ের বাড়ি যাওয়ার জন্য সে দাদুর সঙ্গে দুপুর দু’টো নাগাদ বাড়ি থেকে বেরোয়। বেহালা চৌরাস্তার কাছে বীরেন রায় রোড (পশ্চিম) বাসস্টপে ১৮বি/১ রুটের একটি বেসরকারি বাস এলে রাজেশ সামনের দরজা দিয়ে ওঠে। মন্মথবাবু দরজার হাতল ধরে পাদানিতে পা দিতেই বাসটি চলতে শুরু করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা পুলিশকে জানান, বাসটি আচমকা চলতে শুরু করায় বৃদ্ধের পক্ষে হাতল ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পেরে তিনি রাস্তায় ছিটকে পড়ে যান। বাসের পিছনের চাকা তাঁকে পিষে দেয়।
বাসযাত্রীরা অনেকেরই অভিযোগ, চালকেরা অনেক সময়েই মর্জি মতো গাড়ি চালান। পিছনে একই রুটের গাড়ি চলে এলেই শুরু হয়ে যায় রেষারেষি। যাত্রী ঠিক মতো বাসে উঠতে পারলেন কি না, তা খেয়ালই করেন না বাসচালকেরা। যাত্রীদের অভিযোগ, এ দিনের দুর্ঘটনার পিছনে চালকের অত্যধিক তাড়াই দায়ী।
পুলিশ জানায়, নির্দিষ্ট স্টপে বাস না দাঁড়ানোর জন্য এ দিনের দুর্ঘটনা ঘটেছে কি না, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। পলাতক চালকের খোঁজ চলছে। তাঁকে ও বাসের কন্ডাক্টরকে ধরার পরেই জানা যাবে দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ। তবে প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, রাজেশ বাসে উঠে যাওয়ার পরে কন্ডাক্টর খেয়াল করেননি, পিছনে এক বৃদ্ধও বাসে উঠতে যাচ্ছেন। প্রথম দরজার কন্ডাক্টর টিকিট কাটার জন্য বাসের ভিতরে চলে যেতেই চালক গতি বাড়িয়ে দেন। তাতেই দুর্ঘটনা ঘটে বলে পুলিশের অনুমান।
তবে ওই এলাকার নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, অধিকাংশ সময়ে নির্দিষ্ট বাসস্টপের অনেক আগেই চালক যাত্রী তোলার জন্য বাস দাঁড় করিয়ে দেন। অনেক সময়ে দাঁড়িয়ে থাকা বেসরকারি বাসকে পাশ কাটিয়ে গিয়ে সরকারি বাসের চালক যাত্রী না তুলেই চলে যান। সরকারি বাসের পিছনে দৌড়তে গিয়ে রাস্তায় পড়েও যান অনেকে।
‘জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেট্স’-এর তরফে তপন বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন দাবি করেন, “কলকাতা, বিশেষত শহরের সংযোজিত এলাকার কোথায় কোথায় বাসস্টপ তৈরি করা হবে, লালবাজারের ট্রাফিক পুলিশের কর্তারা তা এখনও নির্দিষ্ট করে দেননি। গত ২৬ অগস্ট এ নিয়ে ডিসি (ট্রাফিক)-কে লিখিত ভাবে জানানোও হয়েছে।” তপনবাবুর অভিযোগ, “ট্রাফিক পুলিশ বাসচালকের বিরুদ্ধে অকারণে মামলা করতেই ব্যস্ত থাকে। সেই কারণে যাত্রীদের কথা তারা চিন্তা করে না।”
এ বিষয়ে কলকাতা পুলিশের ডি সি (ট্রাফিক) দিলীপ আদক বলেন, “শহরে যে সব জায়গায় নির্দিষ্ট বাসস্টপ নেই, সেগুলির তালিকা কলকাতা পুরসভার কাছে দেওয়া হয়েছে। পুরসভা ওই সব জায়গায় বাস-ছাউনি তৈরি করে দেবে। নির্দিষ্ট বাসস্টপের বোর্ড চোখে না পড়লেও বাস-ছাউনি যাত্রীদের চোখে পড়বেই।” |