দলকে পরিচ্ছন্ন করার অভিযানের কোপে এ বার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের একদা ঘনিষ্ঠ, যাদবপুরের সিপিএম নেতা খোকন ঘোষ দস্তিদার।
সিপিএমের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে যাদবপুর-২ নম্বর জোনাল কমিটির সম্পাদক পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে খোকনবাবুকে। তাঁর কার্যকলাপ নিয়ে দলের মধ্যে প্রশ্ন ছিল অনেক দিন ধরেই। শেষ পর্যন্ত দলকে সাফসুতরো করার প্রক্রিয়ায় গতি আনতে ছেঁটে ফেলা হল তাঁকে। এবং সেই প্রক্রিয়া অনুষ্ঠিত হল প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর সবুজ সঙ্কেত নিয়েই।
যাদবপুর বিধানসভা কেন্দ্রে বুদ্ধবাবুর হারের পরে ২০১১ সালের নভেম্বরেই সিপিএমের সম্মেলনে যাদবপুর-২ জোনাল কমিটির সম্পাদক খোকনবাবুর বিরুদ্ধে স্বজনপোষণ ও দল-বিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগ ওঠে। খোকনবাবুর মদতে প্রোমোটার, ইমারতি দ্রব্য ব্যবসায়ীদেরও কমিটির সদস্য করা হয়েছে বলে সরব হন ওই জোনাল কমিটির অধীনে আটটি লোকাল কমিটির প্রায় ১৪১ জন সদস্য। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা নেতৃত্ব ও রাজ্য কমিটির কাছে খোকনবাবুর নামে লিখিত অভিযোগও জমা দেন তাঁরা। তাঁর মনোনীত লোকাল কমিটির অধীনে সাংগঠনিক কার্যকলাপ থেকে অব্যাহতি দিতেও অনুরোধ করেন তাঁরা।
জেহাদ ঘোষণাকারীদের সঙ্গে আলোচনা করে সে যাত্রায় পরিস্থিতি সামাল দেন জেলা সম্পাদক সুজন চক্রবর্তী এবং রাজ্য কমিটির সদস্য কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়। তার পরেও খোকনবাবুর বিরুদ্ধে ঝড় থামেনি। তাঁর মতো নেতাদের জন্যই ‘স্বচ্ছ’ ভাবমূর্তির বুদ্ধবাবুর বিরুদ্ধে যাদবপুরের মানুষ মুখ ফিরিয়েছেন বলে দলের অন্দরে সরব হন অনেকে। যার জেরে নড়েচড়ে বসতে হল দলীয় নেতৃত্বকে।
গত পাঁচ বছর ধরেই যাদবপুর জোনাল এলাকার বিভিন্ন ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রাজ্য ও জেলা কমিটির কাছে জমা পড়ে। একাধিক বার রাজ্য কমিটির নেতারা তাঁকে সর্তকও করেন। খোকনবাবুর স্ত্রী চন্দনা ঘোষ দস্তিদারও দলের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য। তাঁর বিরুদ্ধেও রাজ্য ও জেলা কমিটির কাছে একাধিক অভিযোগ জমা আছে। কিন্তু বুদ্ধ-ঘনিষ্ঠতার কারণেই তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছিল না বলে সিপিএমের একাংশের ব্যাখ্যা। বিষয়টি বুদ্ধবাবুর কানেও পৌঁছয়। মাস দুয়েক আগে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর কয়েক জন সদস্যকে নিয়ে খোকনবাবুর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ছাড়পত্র দেন বুদ্ধবাবুই।
দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শ্যামলী গুপ্তের উপস্থিতিতে গত সপ্তাহে জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে খোকনবাবুকে অপসারণের সিদ্ধান্তে সিলমোহর পড়ে। বৈঠকে খোকনবাবু ও চন্দনা দু’জনেই ছিলেন। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, “যাদবপুর-সহ দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পার্টির নিচু তলার কর্মীরা খোকনবাবুর জীবনযাপন ও আচরণে তিতিবিরক্ত। এই সিদ্ধান্তের ফলে নিচু তলার কর্মীরা কিছুটা হলেও উজ্জীবিত হবেন।” খোকনবাবু অবশ্য এই নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাননি। দলের নেতা-কর্মীদের অস্বচ্ছ কাজকর্ম ও বিলাসিতার বিষয়ে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু ও বুদ্ধবাবু, জানিয়ে দেওয়ায় খোকনবাবুর মতো অনেকেই চাপে। রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর ওই সদস্যের কথায়, “সব জেলাতেই নতুন মুখ তুলে আনার পাশাপাশি জনবিচ্ছিন্ন নেতাদের সরানোর প্রক্রিয়া একই সঙ্গে চলবে।” |