জঙ্গলের মাঝে রাত্রিযাপন! সঙ্গে খানাপিনা আর আদিবাসী লোকংস্কৃতির নাচ-গান। তিন বছর আগেও জঙ্গলমহলে এমন ভাবনা দুঃস্বপ্ন ছিল। তবে এখন শান্তি ফিরেছে জঙ্গলমহলে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এবার পুজোয় সরকারি ভাবে জঙ্গলমহলে পর্যটক টানতে উদ্যোগী হচ্ছে রাজ্য সরকার। এজন্য জঙ্গলের মাঝেই পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন উন্নয়ন নিগমের বরাদ্দ প্রায় তিন কোটি টাকায় ঝাড়গ্রাম বন বিভাগের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে দু’টি প্রকৃতি ভ্রমণ কেন্দ্র (ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার)। একটি ঝাড়গ্রাম শহরের উপকণ্ঠে বাঁদরভুলা এলাকায় জঙ্গলের মধ্যে। অন্যটি গোপীবল্লভপুরের হাতিবাড়িতে জঙ্গলের মাঝে সুবর্ণরেখা নদীর ধারে।
পুজোর আগেই সদ্য তৈরি হওয়া প্রকৃতি ভ্রমণ কেন্দ্র দু’টি পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে। জঙ্গলমহল সংক্রান্ত স্পেশাল টাস্ক ফোর্স-এর চেয়ারপার্সন জয়া দাশগুপ্ত বুধবার ওই দু’টি প্রকৃতি ভ্রমণ কেন্দ্র পরিদর্শন করতে আসছেন। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, জয়াদেবী দেখে যাওয়ার পর চলতি মাসেই ওই ভ্রমণ কেন্দ্রদু’টির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপরই সেখানে পর্যটকেরা থাকতে পারবেন। |
ঝাড়গ্রামের বাঁদরভুলার জঙ্গলের মধ্যে প্রকৃতি ভ্রমণ কেন্দ্র। ছবি: দেবরাজ ঘোষ। |
ঝাড়গ্রাম শহরের উপকণ্ঠে বাঁদরভুলায় জঙ্গলের মধ্যে মনোরম পরিবেশে ঝাঁ-চকচকে তিনটি কটেজ তৈরি করা হয়েছে। সেখানে থাকতে পারবেন ১২ জন। ঝাড়গ্রামে কটেজ সংলগ্ন এলাকায় থাকছে আদিবাসী লোকসংস্কৃতি ও হস্তশিল্পের প্রদর্শনী-সংগ্রহশালা। গোপীবল্লভপুরের হাতিবাড়িতে সুবর্ণরেখা নদীর ধারে দু’টি কটেজে ৮ জনের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঝাড়গ্রামের (ডিএফও) বিভাগীয় বন আধিকারিক আশিসকুমার সামন্ত বলেন, “প্রকৃতি ভ্রমণ কেন্দ্র দু’টিতে উপযুক্ত পরিষেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুজোর আগেই কেন্দ্র দু’টি চালু করা হবে। স্থানীয় লোকসংস্কৃতির অনুষ্ঠান দেখার ব্যবস্থাও থাকছে। ঝাড়গ্রাম, বেলপাহাড়ি ও গোপীবল্লভপুরের দ্রষ্টব্য স্থানগুলিও পর্যটকেরা ঘুরে দেখতে পারবেন।” আশিসবাবু জানান, রাজ্য পর্যটন উন্নয়ন নিগম এবং রাজ্য বন উন্নয়ন নিগমের ওয়েবসাইটে আগাম ‘বুকিং’ করতে পারবেন পর্যটকেরা। এ ছাড়া ঝাড়গ্রামে ‘স্পট বুকিং’য়েরও ব্যবস্থা থাকছে।
পঞ্চায়েত ভোটের আগে জঙ্গলমহলে এসে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, স্থানীয় পর্যটন শিল্পের মাধ্যমে জঙ্গলমহলের আদিবাসী-মূলবাসীদের বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা হবে। ঝাড়গ্রাম ও গোপীবল্লভপুরের দু’টি প্রকৃতি ভ্রমণ কেন্দ্র পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে স্থানীয় দু’টি বন সুরক্ষা কমিটিকে। এলাকার বাসিন্দারাই ওই দু’টি বন কমিটির সদস্য। ওই দু’টি কমিটির সদস্যরাই পর্যটকদের থাকা-খাওয়ার দেখভাল করবেন। এ জন্য বন সুরক্ষা কমিটির সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে দু’একদিনের মধ্যেই।
প্রকৃতি ভ্রমণ কেন্দ্র দু’টির সার্বিক দেখভালের দায়িত্বে থাকছে জেলাস্তরের ম্যানেজমেন্ট কমিটি। ওই কমিটির চেয়ারম্যান হলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক। এছাড়া ঝাড়গ্রামের ডিএফও, রাজ্য বন উন্নয়ন নিগমের ডিভিশনাল ম্যানেজার (দক্ষিণ বিভাগ), রাজ্য পর্যটন উন্নয়ন নিগমের প্রতিনিধি, ঝাড়গ্রামের মহকুমাশাসক প্রমুখ প্রশাসনের আধিকারিকেরা কমিটির সদস্য হিসেবে রয়েছেন। পাহাড়ে অশান্তির জন্য পর্যটকদের একাংশ এবার দার্জিলিং যাবেন কি-না তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছে পর্যটন দফতর। তবে সে ক্ষেত্রে পর্যটকদের অনেকেই এ বার জঙ্গলমহলে আসতে পারেন বলে আশা করছে দফতর। রাজ্য পর্যটন উন্নয়ন নিগমের এক আধিকারিক বলেন, “জঙ্গলমহলের আলাদা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রয়েছে। সেখানকার দর্শনীয় স্থানগুলির পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছে।” দুঃস্বপ্নের দিন অতীত। সরকারি পর্যটন-উদ্যোগকে ঘিরে নতুন আশায় বুক বাঁধছে জঙ্গলমহল। |