জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর টরন্টো বিমানবন্দরে হেনস্থার ঘটনা এখনও বিদেশ মন্ত্রকের স্মৃতিতে টাটকা। অপমানিত অভিনেত্রী কেঁদে ফেললে তাঁকে মানসিক রোগীর তকমা দিয়ে হাসপাতালে পাঠানোর হুমকিও দেওয়া হয়েছিল সে দিন।
কেবল ঋতুপর্ণা নন, সাম্প্রতিক কালে বিদেশের বিমানবন্দরে হেনস্থা করা হয়েছে শাহরুখ খান, কমল হাসন-সহ অনেক ভারতীয়কেই। বাদ পড়েননি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বা সাংসদরাও। ফলে, বিষয়টি নিয়ে এ বার নড়েচড়ে বসেছে বিদেশ মন্ত্রক। এ ব্যাপারে বিস্তারিত রিপোর্ট তৈরি করেছে মন্ত্রক। যে দেশগুলিতে এই ধরনের হেনস্থার ঘটনা বেশি ঘটছে, সেগুলিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। গত দশ বছরে কোন দেশের কাকে কী অভিযোগ জানানো হয়েছিল, পুরনো নথি ঘেঁটে বের করা হচ্ছে সে সবও। সংশ্লিষ্ট দেশগুলিতে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতদের এ বিষয়ে কূটনৈতিক চাপ বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হেনস্থা রুখতে কে কী ব্যবস্থা নেবে, তারও খতিয়ান চাইবে ভারত।
সংশ্লিষ্ট দেশগুলিকে যে বার্তা দেওয়া হবে তার দিকনির্দেশ রয়েছে রিপোর্টে। বলা হচ্ছে, কোনও দেশ তার নিরাপত্তার জন্য বিমানবন্দরে কী ব্যবস্থা নেবে, তা নিয়ে নয়াদিল্লির কিছু বলার নেই। কিন্তু সেই ব্যবস্থা যেন কূটনৈতিক সৌজন্য মেনে নেওয়া হয়। ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক স্পর্শকাতরতার বিষয়টিও যেন মাথায় রাখা হয়। যে দেশগুলিকে চিহ্নিত করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে আমেরিকা, কানাডা, জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, পোল্যান্ড, তুরস্ক, মালয়েশিয়া ও মোজাম্বিক।
ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের ঘটনাটি ছাড়াও ২০১০ সালে পরিচয়পত্র দেখানোর পরে শিকাগো বিমানবন্দরে তৎকালীন বিমানমন্ত্রী প্রফুল পটেলকে নিয়ে যাওয়া হয় আলাদা একটি ঘরে। সেখানে দীর্ঘক্ষণ জেরা করা হয় তাঁকে। আগেও একাধিক বার এই অভিজ্ঞতা হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন পটেল।
বিদেশ মন্ত্রক জানাচ্ছে, ফ্রান্সে শিখদের পাগড়ি খুলতে বাধ্য করার ঘটনা অনবরতই ঘটে চলেছে। এ ব্যাপারে ভারতের পক্ষ থেকে অনেক আগেই একটি প্রতিবাদপত্র দেওয়া হয়েছিল। তা ছাড়া ২০১১ সালে ফরাসি বিদেশমন্ত্রীর কাছে এবং ২০১২ সালে ভারত-ফ্রান্স বিদেশসচিব পর্যায়ে বিষয়টি তোলা হয়। এমনকি চলতি বছরে ফরাসি প্রেসিডেন্টের ভারত সফরের সময়েও এটি ছিল গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয়। কিন্তু এখনও পর্যন্ত এ ব্যাপারে পুরোপুরি ইতিবাচক সাড়া মিলছে না। রাষ্ট্রপূঞ্জে ভারতের প্রাক্তন স্থায়ী প্রতিনিধি হরদীপ সিংহও একই সমস্যায় পড়েন। প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জর্জ ফার্নান্ডেজ থেকে শুরু করে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এপিজে আব্দুল কালাম নিরাপত্তার নামে হেনস্থার হাত থেকে কেউই রেহাই পাননি। বেশির ভাগই হয়েছে আমেরিকার নানা বিমানবন্দরে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি তুলেও লাভ হয়নি। |