ইঁদুর-বরফ মেনুতেই চার মাস আন্দিজ-বাস
যে দিকে তাকানো যায় শুধু বরফ আর বরফ। সেই সঙ্গে তুষারঝড়। কোনও রকমে তার মধ্যে দিয়েই হাঁটছিলেন আর্জেন্তিনার সান জুয়ানের এক দল আধিকারিক। উদ্দেশ্য আর্জেন্তিনার আন্দিজ পর্বতমালার বরফের গভীরতা মাপা। হঠাৎই হোঁচট। ভাল করে দেখতে গিয়ে তাঁদের চক্ষু চড়কগাছ। পায়ের কাছে একটা মানুষ নড়াচড়া করছেন বরফের মধ্যে। গায়ে তেমন গরম জামাকাপড়ও নেই। ঘটনাস্থল আন্দিজ পর্বতমালার প্রায় ৯ হাজার ৩১৮ ফুট উঁচু একটি অঞ্চল।
তাপমাত্রা শূন্যের থেকে বেশ কয়েক ডিগ্রি নীচে।
ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করে কোনও রকমে একটা হেলিকপ্টার করে নীচে নামিয়ে আনা হয়। একটু সুস্থ হলে তাঁকে প্রশ্ন করে হতবাক হয়ে যান চিকিৎসকেরা। ওই ব্যক্তি জানান, তাঁর নাম রাউল ফার্নান্দো গোমেজ সার্কানেগুই। উরুগুয়ের বাসিন্দা। গত মে মাসে চিলি থেকে আর্জেন্তিনা যাওয়ার পথে এই আন্দিজ পবর্তমালা এলাকায় তাঁর মোটরবাইক খারাপ হয়ে যায়।
হাসপাতালের শয্যায় রাউল ফার্নান্দো গোমেজ সার্কানেগুই। ছবি: এ এফ পি।
এ দিকে তখনই শুরু হয় তুষারঝড়। পথ হারিয়ে চার মাস নাকি এই অঞ্চলেই কাটিয়েছেন রাউল। সম্পূর্ণ একা। দক্ষিণ গোলার্ধে তখন শীত শুরু হয়েছে। ওই এলাকায় লোকের যাতায়াত এমনিতেই কমে যায়। ফলে কারও সাহায্য মেলেনি।
এ দিক ও দিক ঘুরতে ঘুরতেই পাহাড়ের ফাঁকে গুহার মতো একটা অংশ খুঁজে পান রাউল। সাধারণত গরমের সময়ে পশু চরাতে এসে এখানেই সময় কাটান মেষপালকেরা। তাঁদের ফেলে যাওয়া খাবারের কিছু অংশ পড়েছিল। তাই দিয়ে ক’দিন কোনও রকমে কেটে গেল। ভাবলেন তুষারপাত কমলে রাস্তা খোঁজা শুরু করবেন। কিন্তু তুষারপাত ক্রমে বাড়তেই লাগল। এ দিকে খাবারও শেষ। অগত্যা তুষারপাতের মধ্যেই খাবার খোঁজা শুরু। অস্ত্র বলতে সম্বল গুহায় ফেলে যাওয়া একটা ছুরি। তা দিয়েই বরফের আড়ালে লুকিয়ে থাকা পাহাড়ি ইঁদুর শিকার শুরু করলেন। আর তেষ্টা পেলে বরফ তো আছেই। এই ভাবেই কেটে গেল চার চারটে মাস। তত দিনে অবশ্য দিন রাতের হিসেব গুলিয়ে ফেলেছিলেন রাউল। ভেবেই নিয়েছিলেন আর বাঁচবেন না। হঠাৎই কয়েক জনের কথা শুনতে পেলেন। তত ক্ষণে উঠে দাঁড়ানোর ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন। চিৎকার করতে গিয়ে দেখলেন আওয়াজ বেরোলো না। কী করবেন? গুহার মুখটা ঢাকা দেওয়ার আচ্ছাদনটাকে কোনও রকমে এগিয়ে দিলেন। যদি কেউ হোঁচট খায়। উদ্দেশ্য সফল। হোঁচট খেলেন অভিযাত্রীরা।
রাউলের কাছ থেকে তাঁর বাড়ির ঠিকানা নিয়ে ফোন করতে জানা গেল বাড়িতে মা, স্ত্রী ও এক মেয়ে রয়েছেন। মে মাসে রাউল নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পরে তাঁকে খুঁজতে লোক লাগিয়েছিলেন পরিবারের লোকেরা। দু’মাস খোঁজার পরে জুলাইয়ে প্রবল তুষারপাত শুরু হওয়ায় খোঁজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। তত দিনে অবশ্য তাঁর বেঁচে থাকার আশা হারিয়ে ফেলেছিলেন পরিবারের সবাই। হাসপাতালে দেখা গেল প্রায় বিছানার সঙ্গে মিশে গিয়েছেন রাউল। এখনও যে বেঁচে রয়েছেন সে কথাটা যেন তাঁর নিজেরই বিশ্বাস হচ্ছে না। বললেন, “বউয়ের সঙ্গে কথা হল। ওরা শিগগিরই দেখা করতে আসবে।” চিকিৎসকেরা জানালেন, এই চার মাসে প্রায় ২০ কেজি ওজন কমে গিয়েছে রাউলের। শরীরে প্রবল জলের অভাব। এমনিতেই উচ্চ রক্তচাপের রোগী। তার উপরে এত দিন ধরে অত্যাচার। তবে এত কিছু সত্ত্বেও রাউল যে বেঁচে রয়েছেন এবং তেমন কিছু শারীরিক সমস্যা ছাড়াই, তাতেই আশ্চর্য চিকিৎসকেরা।
রাউলের কথা শুনে অনেকেরই ১৯৯৩ সালে তৈরি ফিল্ম ‘অ্যালাইভ’-এর কথা মনে পড়ছে। ১৯৭২ সালে উরুগুয়ের রাগবি টিমের সদস্যরা একটা চার্টার্ড বিমান করে এই আন্দিজ পর্বতমালার উপর দিয়েই যাচ্ছিলেন। হঠাৎই পাহাড়ের মাথায় ভেঙে পড়ল বিমান। মারা গেলেন ২৯ জন। কিন্তু বাকি ১৬ জন বেঁচে গিয়েছিলেন। খাদ্য বলতে ছিল মৃত বন্ধুদের মাংস। ভয়ানক হলেও সত্যি ঘটনা অবলম্বনেই তৈরি হয়েছিল ‘অ্যালাইভ’। তবে সেখানেও মনের বল জোগাতে ছিল ১৬ জন বন্ধু। এখানে সহায় সম্বলহীন রাউল একা। তবে সত্যি তো গল্পকেও ছাড়িয়ে যায়। আর সেই সত্যি থেকেই তৈরি হয় নতুন গল্প।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.