উৎপাদন ছাঁটাই,
কাটোয়া ঘিরে তবু সংশয়
,৬০০ মেগাওয়াটের পরিকল্পনা স্থগিত। জমি-জটের জেরে শেষমেশ কাটোয়ায় প্রস্তাবিত তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের উৎপাদনক্ষমতা ১,৩২০ মেগাওয়াটে নামিয়ে আনল এনটিপিসি। উৎপাদনক্ষমতা ২৮০ মেগাওয়াট ছাঁটাই করেই তাঁরা প্রকল্পের নতুন নক্শা চূড়ান্ত করার পথে হাঁটছেন বলে এনটিপিসি-কর্তৃপক্ষ সোমবার জানিয়েছেন। কিন্তু সেটুকুর জন্যও যে বাড়তি জমি প্রয়োজন, তার সংস্থান এখনও হয়নি। পাশাপাশি কয়লার জোগান নিয়েও অনিশ্চয়তা কাটেনি।
সব মিলিয়ে কাটোয়া-প্রকল্পের উপরে প্রশ্নচিহ্ন একটা ঝুলেই রইল। চাহিদামাফিক জমি না-পেলে কাটোয়ায় প্রস্তাবিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদনক্ষমতা ছাঁটাইয়ের সম্ভাবনা ঘিরে জল্পনা দীর্ঘ দিনের। এ দিন কলকাতায় তার অবসান ঘটিয়েছেন এনটিপিসি-র চেয়ারম্যান তথা ম্যানেজিং ডিরেক্টর (সিএমডি) অরূপ রায়চৌধুরী। সাংবাদিক বৈঠকে তিনি জানিয়েছেন, কাটোয়ায় তাঁরা ১,৩২০ মেগাওয়াটের তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়বেন। তবে তাতে আরও দেড়শো একর জমি দরকার। সেই সব জমির মালিকদের সম্মতিপত্রও সংস্থা জোগাড় করে ফেলেছে বলে এনটিপিসি-কর্তার দাবি। অরূপবাবুর বক্তব্য, এখন রাজ্য ওই জমি এনটিপিসি-কে হস্তান্তরের ব্যবস্থা করলে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মুখ দেখতে পারে।
শুধু জমির অভাবেই এনটিপিসি উৎপাদনক্ষমতা কমিয়ে প্রকল্পের নতুন নক্শা করতে বাধ্য হল কি না, সিএমডি অবশ্য তার সরাসরি উত্তর দেননি। শুধু বলেন, কাটোয়ায় যত জমি সংস্থার হাতে রয়েছে (৫৬৫ একর), তার সঙ্গে বাড়তি জমিটুকু পাওয়া গেলে ওখানে ১,৩২০ মেগাওয়াটের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র তাঁরা বানিয়ে ফেলতে পারবেন। যদিও সংস্থা-সূত্রের খবর: রাজ্য জমি অধিগ্রহণে বেঁকে বসাতেই এনটিপিসি’কে পরিকল্পনা বর্জন করতে হয়েছে। যতটা সম্ভব কম জমি ব্যবহার করে প্রকল্প গড়ার কথা ভাবা হচ্ছে। আর সেই কারণেই উৎপাদনক্ষমতা কমানোর ভাবনা। তবে নতুন পরিকল্পনাও সফল হবে কি না, রাজ্যের উপরে তা অনেকাংশে নির্ভর করছে।
কী রকম?
সিএমডি’র ব্যাখ্যা, “বাড়তি জমি জোগাড়ের দায়িত্ব রাজ্যের। কারণ তাদের ঘরেই জমি-মালিকদের যাবতীয় রেকর্ড মজুত। সরকারের সাহায্য ছাড়া জমি কেনা সম্ভব নয়।” তাঁর দাবি, পশ্চিমবঙ্গ শিল্প পরিকাঠামো উন্নয়ন নিগমের মতো রাজ্য সরকারি সংস্থা এনটিপিসি’র হয়ে জমি কিনতে পারে। “অন্য রাজ্যে অনেক সময় এই ধরনের নিগমগুলোই এনটিপিসি’র জন্য জমি কিনে থাকে।” দৃষ্টান্ত দিয়েছেন অরূপবাবু। এ প্রসঙ্গে রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এ দিন জানান, জমির ব্যাপারে এনটিপিসি-র তরফে প্রস্তাব এলে মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন শিল্প ও পরিকাঠামো বিষয়ক মন্ত্রিগোষ্ঠী খতিয়ে দেখবে।
কাটোয়ায় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনাটির সূচনা বাম জমানায়। গোড়ায় স্থির ছিল, রাজ্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগম ওখানে ১,৩২০ মেগাওয়াটের প্রকল্প গড়বে। পরে বামফ্রন্ট সরকার প্রকল্প রূপায়ণের ভার এনটিপিসি’কে দেয়। এনটিপিসি ঠিক করে, তারা ১,৬০০ মেগাওয়াটের প্রকল্প বানাবে। সেই লক্ষ্যে বাম আমলে ১,০৭১ একর জমি চিহ্নিত হয়েছিল। ৫৬৫ একর অধিগ্রহণও হয়ে যায়। কিন্তু দু’বছর আগে রাজ্যে শাসনক্ষমতায় পালাবদলের পরে নতুন সরকার এসে ঘোষণা করে, কাটোয়া প্রকল্পের জন্য আর এক ছটাকও অধিগ্রহণ করা হবে না। অধিগৃহীত জমিতেই প্রকল্প গড়তে হবে বলে জানিয়ে দেয় মহাকরণ।
সেই থেকে এনটিপিসি এবং রাজ্য সরকারের মধ্যে টানাপোড়েন চলছে। এনটিপিসি-কর্তৃপক্ষ বারবার দাবি করে আসছেন, কাটোয়ার জমি-মালিকদের একাংশ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য জমি দিতে আগ্রহী। গত এক-দেড় বছর ইস্তক ওঁদের কাছ থেকে এ ব্যাপারে ‘সম্মতিপত্র’ও জোগাড় হয়েছে বলে জানিয়েছেন এনটিপিসি-কর্তারা। তার কিছু নমুনা কিছু দিন আগে তাঁরা রাজ্য সরকারকে পেশ করেছেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, যেখানে ১০৭১ একর দরকার ছিল, সেখানে অধিগৃহীত ৫৬৫ একরের সঙ্গে ১৫০ একর, অর্থাৎ মোট ৭১৫ একর জমি হাতে পেলেও কি লাভ হবে? তা দিয়ে কি ১৩২০ মেগাওয়াটের প্রকল্পও গড়া সম্ভব?
অরূপবাবু বলেছেন, ওই জমিতে তাঁরা শুধুমাত্র তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি গড়ে তুলতে পারবেন। তাঁর দাবি, উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে সেটা সম্ভব। প্রকল্পের বাকি সামাজিক পরিকাঠামো (কর্মী-আবাসন, স্কুল, হাসপাতাল ইত্যাদি) দূরে কোথাও করা হবে। অর্থাৎ, সে সবের জন্য দেড়শো একরের বাইরেও কিছু জমি লাগবে। তার সংস্থান কী ভাবে হবে, এনটিপিসি-সূত্রে সে সম্পর্কে কোনও দিশা মেলেনি।
জমি-জটের পাশাপাশি কাটোয়া প্রকল্প রূপায়ণের পথে কাঁটা হয়ে রয়েছে কয়লা-সমস্যা। যার মূলে আবার সেই জমি-জটই। সংস্থা-সূত্রের খবর: কাটোয়া তাপবিদ্যুতে প্রয়োজনীয় কয়লা জোগাতে আসানসোলের দামাগোড়িয়ায় একটি ‘কোল ব্লক’ রাজ্যকে বরাদ্দ করেছিল কেন্দ্র। পরিকল্পনা ছিল, সেখানে পুরোদস্তুর কয়লাখনি তৈরি হবে। কিন্তু সে জন্য যে জমি দরকার, বর্তমান রাজ্য সরকার তা-ও অধিগ্রহণে নারাজ। তারা গত বছর কোল ব্লকটি কেন্দ্রীয় কয়লা মন্ত্রককে ফিরিয়ে দিয়েছে।
ফলে কাটোয়া তাপবিদ্যুতের কয়লা কোথা থেকে আসবে, তা অনিশ্চিত। “কয়লার ব্যবস্থা রাজ্যকেই করতে হবে।” বলছেন অরূপবাবু। প্রসঙ্গত, পুরুলিয়ার আদ্রায় রেলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এনটিপিসি-র যে ১,৩২০ মেগাওয়াটের তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ে তোলার কথা, সেখানে মূল অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে কয়লাই। অরূপবাবু জানান, আদ্রায় রেলের জমি থাকলেও কয়লা নেই। রেল মন্ত্রক কয়লাখনি পাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। তা মিললেই আদ্রা প্রকল্পের কাজ শুরু করা যাবে। এবং কাটোয়ায় কিছু প্রতিকূলতা থাকা সত্ত্বেও এনটিপিসি এখনই হাল ছাড়ার কথা ভাবছে না। বরং সিএমডি জানিয়েছেন, কাটোয়া প্রকল্প নিয়ে তিনি আশাবাদী। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সব সমস্যা সুরাহার রাস্তা মিলবে বলেই তিনি মনে করছেন।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.