কাটোয়ায় বিদ্যুৎকেন্দ্র
অর্ধেক জমিতেই প্রকল্প, মন্ত্রীর দাবিতে বিভ্রান্তি
বাড়তি জমি মিলছে না। কাটোয়ায় অধিগৃহীত ৫৫৬ একর জমিতেই তাই উন্নত প্রযুক্তিতে ১৬০০ মেগাওয়াটের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে তুলবে এনটিপিসি। বুধবার বিধানসভায় এমনই দাবি করেছেন বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্ত। যদিও মহাকরণ সূত্রে খবর, এমন কোনও লিখিত প্রস্তাব বা প্রতিশ্রুতি আজ পর্যন্ত এনটিপিসি (ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কর্পোরেশন) রাজ্য সরকারকে দেয়নি।
কাটোয়ায় প্রস্তাবিত তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে এ দিন প্রশ্ন করেন সিপিএমের বিধায়ক শাজাহান চৌধুরি। তিনি জানতে চান, প্রকল্পের জন্য যে আরও ৫৫০ একর জমি অধিগ্রহণ করার কথা ছিল, তার কী হল?
তার উত্তরে দিতেই মন্ত্রী জানান, “এনটিপিসি ১৬০০ মেগাওয়াট প্রকল্পের জন্য মোট ১১০০ একর জমি চায়। তার মধ্যে বাম আমলেই ৫৫৬ একর জমি অধিগ্রহণ হয়ে গিয়েছিল। বাকি ৫৫০ একর জমি ওদের কিনতে বলা হয়েছিল। ওরা সেটা করতে পারেনি।”
এনটিপিসি কর্তৃপক্ষ সরকারকে আগেই জানিয়ে দিয়েছে, অধিগৃহীত জমি ছাড়া আরও অন্তত আড়াইশো একর জমি না পেলে প্রকল্পটি গড়া অসম্ভব। কারণ তারা যে নকশায় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি গড়ে তুলবে, সেখানে বেশির ভাগটাই দেশি কয়লা ব্যবহার করা হবে। আর এ দেশের কয়লায় প্রচুর ছাই থাকে। ফলে নকশা বদলে ৫৫৬ একর জমির মধ্যে কোনও ভাবে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি গড়ে তোলা গেলেও, ছাই ফেলতে বাড়তি জমি লাগবেই। কিন্তু এই বাড়তি জমি পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম, কারণ রাজ্যের নীতিগত সিদ্ধান্ত, ‘জোর করে’ কোনও প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হবে না। মণীশবাবুর অবশ্য দাবি, “নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করছে এনটিপিসি। ৫৫৬ একর জমিতেই তারা ৮০০ মেগাওয়াট করে দু’টি ইউনিট গড়ে তুলবে।” কিন্তু এত কম জমিতে তা-ও কি আদৌ সম্ভব? কারণ কর্মী আবাসন, হাসপাতাল-সহ নানা সামাজিক পরিকাঠামো গড়তেও বেশ কিছুটা জমির দরকার, যা প্রকল্পেরই অংশ।
তবে কি জোর করে তাপ বিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ে দেখাতে চায় সরকার? এ দিন বিদ্যুৎমন্ত্রীর ঘোষণার পরে সেই প্রশ্নও উঠে গেল।
শিল্প মহলের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ পর্ষদের (সেন্ট্রাল ইলেকট্রিসিটি অথরিটি) হিসেব মতো এক মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়তে কমপক্ষে ০.৭৫ একর জমি প্রয়োজন। সেই অঙ্কে ১৬০০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য কমপক্ষে ১২০০ একর জমি লাগে। তার জায়গায় ১১০০ একর জমিতেই প্রকল্পটি গড়তে রাজি হয় এনটিপিসি। এখন এর অর্ধেক জমিতে (৫৫৬ একর) প্রকল্প গড়তে গেলে বিদেশ থেকে উন্নতমানের কয়লা আমদানি করেই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালাতে হবে। কারণ বিদেশি কয়লায় ছাই অনেক কম থাকে। আর তা কার্যত অসম্ভব বলেই বিদ্যুৎ কর্তারা মনে করছেন। কারণ দামি বিদেশি কয়লায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ বাড়বে। তাতে ইউনিট প্রতি বিদ্যুতের দামও অনেক বেড়ে যাবে। আর দামি বিদ্যুৎ রাজ্য সরকার কিনতে চাইবে না। এনটিপিসি-র সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী কাটোয়ায় উৎপাদিত ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ৮০০ মেগাওয়াটই কিনবে রাজ্য। রাজ্যের এক বিদ্যুৎ কর্তা জানাচ্ছেন, “কয়লা আমদানি করে বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানোর কোনও পরিকল্পনা এনটিপিসি-র নেই বলেই আমরা জানি।”
কাটোয়ায় প্রস্তাবিত তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পটি প্রথমে গড়ার কথা ছিল রাজ্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আগের সরকারের আমলেই এনটিপিসি-র সঙ্গে চুক্তি করে রাজ্য। প্রকল্পের জন্য ওই সময়ই ৫৫৬ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। প্রয়োজন ছিল আরও ৫৫০ একর জমি। কিন্তু নতুন সরকার জানিয়ে দেয়, কাটোয়ায় আর কোনও জমি অধিগ্রহণ করা হবে না। তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য আরও জমির প্রয়োজন হলে এনটিপিসি-কেই সরাসরি জমি কিনতে হবে। প্রাথমিক ভাবে সেই কাজ শুরু করেছিল এনটিপিসি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সংস্থার পরিচালন পর্ষদের আপত্তি থাকায় তারা এই কাজে অনুমোদন পায়নি। সম্প্রতি তারা রাজ্যকে ফের চিঠি লিখে জানায়, প্রকল্পের বাড়তি জমি রাজ্যই অধিগ্রহণ করে দিক। রাজ্যও জবাব দিয়েছে, তারা রাজি নয়। ফলে জমি জটে এখন কাটোয়া তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের ভবিষ্যৎ কার্যত ঝুলেই রয়েছে। তবে মন্ত্রী এ দিন বিধানসভায় বলেছেন, সরকারের সহযোগিতা না পেয়ে কাটোয়া থেকে এনটিপিসি চলে গিয়েছে, এ খবর ভিত্তিহীন।
বিধানসভায় বিদ্যুৎমন্ত্রীর অর্ধেক জমিতেই প্রকল্প গড়ার এই দাবি প্রসঙ্গে এনটিপিসি কর্তৃপক্ষ কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তাঁদের ছোট্ট বক্তব্য, কাটোয়ায় তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়তে এনটিপিসি বিশেষ ভাবে আগ্রহী।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.