নিজস্ব সংবাদদাতা • কাটোয়া |
দশ কামরার ট্রেন এখন দাঁড়িয়েছে সাত কামরায়। ভিড়ের চাপে মাঝে মধ্যেই ট্রেন থেকে পড়ে গিয়ে জখম হন যাত্রীরা। কামরা বাড়ানোর জন্য নিত্যযাত্রী সংগঠনের পক্ষে আবেদন জানানো হয়েছে বারবার। কিন্তু লাভ হয়নি কোনও। বুধবার হাওড়ার ডিআরএম অনির্বাণ দত্ত কাটোয়ায় রেল পরিদর্শনে এলে সকাল ৭টা থেকে ট্রেনের কামরা বাড়ানোর দাবিতে কাটোয়া-আজিমগঞ্জ শাখার শিবলুন স্টেশন অবরোধ করেন যাত্রীরা। নিত্যযাত্রী সংগঠন ডিআরএম-য়ের হাতে একটি স্মারকলিপি তুলে দেন। নিত্যযাত্রীদের সংগঠন বিবি লুপ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি পুরবধি মুখোপাধ্যায়ের দাবি, “ডিআরএম জানিয়েছেন, কামরার সমস্যা রয়েছে। অন্য সেকশন থেকে কামরা এনে যত দ্রুত সম্ভব সমস্যা মেটানো হবে।” ডিআরএম-য়ের এই আশ্বাসের পর প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর অবরোধ ওঠে। এর জেরে বিভিন্ন স্টেশনে আটকে পড়ে ডাউন আজিমগঞ্জ-কাটোয়া, হাওড়া-মালদহ ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস। অবরোধ তুলতে ঘটনাস্থলে যায় কেতুগ্রাম থানা, জিআরপি ও আরপিএফ (কাটোয়া)। |
পূর্ব রেলের বিবি লুপ লাইনের কাটোয়া-আজিমগঞ্জ শাখার নিত্যযাত্রী সংগঠনের দাবি, কাটোয়ামুখী আজিমগঞ্জ-কাটোয়া লাইনের দু’টি ট্রেন দশ কামরার ছিল। এই ট্রেন দু’টি সকালে কাটোয়ায় ঢোকে। রুজি রোজগারের জন্য মুর্শিদাবাদ ও ও বর্ধমানের কেতুগ্রামের একাংশের লোকজন এই ট্রেন দু’টিতে কাটোয়া আসেন। সংগঠনের সদস্যেরা জানান, ট্রেন দু’টি যখন দশ কামরার ছিল, তখনও ভিড় হত প্রচুর। হঠাৎ মাস কয়েক আগে কামরার সংখ্যা কমিয়ে সাতটি করা হয়। এর ফলে যাত্রীদের প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে বাদুড় ঝোলা হয়ে যাতায়াত করতে হয়।
নিত্যযাত্রী সংগঠন সূত্রে জানানো হয়, এই ভাবে ভিড়ের মধ্যে যাতায়াত করতে বাধ্য হওয়ায় চলন্ত ট্রেন থেকে পড়ে মৃত্যু হয়েছে মুর্শিদাবাদের কান্দি থানার এক বাসিন্দার। সম্প্রতি পা হারিয়েছেন কেতুগ্রামের বীরমপুর গ্রামের বধূ চন্দনা মাঝি। গুরুতর জখম হয়েছেন ওই এলাকারই গঙ্গাটিকুরি গ্রামের খোকন দাস। একই অবস্থা বীরভূমের আমোদপুর এলাকার এক যাত্রীর। তিনি বোনকে নিয়ে আসছিলেন কাটোয়া শহরের এক আত্মীয়ের বাড়িতে। ন্যারোগেজ ট্রেন ছেড়ে শিবলুনমুখী ব্রডগেজ ট্রেনে উঠে হাতল ধরে ট্রেনের পা’দানিতে দাঁড়িয়েছিলেন। ট্রেন ছাড়ার পরেই ভিড়ের চাপে পড়ে গিয়ে মাথায় গুরুতর আঘাত পান। শিবলুন গ্রামের বাসিন্দা, নিত্যযাত্রী সংগঠনের নেতা চঞ্চল পান বলেন, “ওই যাত্রীকে আমরাই কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করিয়েছিলাম।” |
অভিযোগ শুনছেন রেলের কর্তারা।—নিজস্ব চিত্র। |
নিত্যযাত্রীদের ক্ষোভ, যাত্রীরা বার বার দুর্ঘটনার কবলে পড়লেও রেল কর্তৃপক্ষের কোনও হুঁশ নেই। এ নিয়ে নিত্যযাত্রী সংগঠন রেলের বিভিন্ন স্তরে দাবি-দাওয়া জানালেও কামরার সংখ্যা বাড়েনি। সংগঠনের কাটোয়া-আজিমগঞ্জ শাখার সম্পাদক চরণ ঘোষ বলেন, “ডিআরএম আসার খবর শুনে তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য যাত্রীরা ট্রেন অবরোধে স্বতস্ফূর্তভাবে সামিল হয়েছিলেন।” কেতুগ্রামের অম্বলগ্রামের বাসিন্দা বিকাশ মজুমদার, মুর্শিদাবাদের টিঁয়াগ্রামের মুজিবর হক, বাজারসৌগ্রামের হরেকৃষ্ণ ঘোষদের দাবি, “এই লাইনে ওই দুই ট্রেনেই সব চেয়ে বেশি যাত্রী যাতায়াত করেন। অথচ, তাঁদের কোনও নিরাপত্তা নেই। প্রায়ই দুর্ঘটনায় পড়ছেন তাঁরা। তাঁদের দাবি, ভিড়ের চাপে অনেকেই ট্রেনে উঠতে পারেন না। অনির্বাণবাবু বলেন, “যা বলার নিত্যযাত্রী সংগঠনকে বলেছি। ওঁরা ভাল বলতে পারবেন।”
কয়লা আটক। পাণ্ডবেশ্বরের শোনপুর বাজারি প্রকল্পের কয়লা বোঝাই একটি বড় ডাম্পার আটক করল সিআইএসএফ। বুধবার সকালে বাঁকোলা রেলগেটের সামনে ওই ডাম্পারটি আটকানোর পর সিআইএসএফ সেটি অন্ডাল পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে। খনি কর্তৃপক্ষ অবশ্য বলেন, “গাড়িটি আমাদের কয়লা পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত হয়। তবে এ দিন যে কয়লা নিয়ে যাচ্ছিল, সেটা কাদের তা আমরা জানি না।” |