দুঃখের ঘর থেকে আমদানি
হাসির গোপাল ভাঁড়

সারা বছরই কাটে ব্যাঙের আধুলি গুনে।
ঘরে চাল বাড়ন্ত। পরনের জামা, গিন্নির শাড়ি, ছেলেমেয়ের ফ্রক-হাফপ্যান্ট জীর্ণ হয়। খড়ের চাল চুঁইয়ে ঘরে আসে বর্ষা।
কিন্তু বর্ষা থেকেই ঘুরে দাঁড়ানোর শুরু ওঁদের। পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি থেকে ওঁরা ছড়িয়ে পড়েন রাজ্যের নানা প্রান্তে। দক্ষ আঙুলে একটু একটু ফুটে উঠতে থাকে নানা নকশা, হরেক মূর্তি। লোকে দেখে বাহবা দেয়। তাতে অবশ্য পেট ভরে না।
বর্ধমান শহরের লালটু স্মৃতি সঙ্ঘের মণ্ডপে এ বার হাসির আলো ফোটাচ্ছে কাঁথির সেই সব আঙুল। যে ভাবে বুকের ব্যথা বুকেই চেপে জনতাকে হাসায় ‘মেরা নাম জোকার’! দিনে-দিনে একটু-একটু করে ফুটে উঠছে গোপাল ভাঁড়ের চেহারা।
সঙ্গী হচ্ছে ছড়া,
খোলো মনের দ্বার
আসছে গোপালভাঁড়!

একটা গোপাল নয়। একেবারে হারাধনের দশটি... রাজা কৃষ্ণচন্দ্র দেখলে চোখ কপালে তুলতেন কী না, কে বলবে! কিন্তু মণ্ডপ জুড়ে অন্তত দশটি ছোট থেকে বড় মূর্তি। সব গোপালের। তার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে বিভিন্ন আকারের হাঁড়ি। তার কোনওটা গোপালের মাথা, কোনওটা আবার ভুঁড়ি। যে দিকে তাকাও হাসির ছড়াছড়ি!
অন্যতম শিল্পী রবিশঙ্কর বেরা কাঁথির প্রভাতকুমার কলেজের বিএ ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র। বাড়িতে নিত্য টানাটানির সঙ্গে ‘যুদ্ধু’ করেই তাঁর নিত্য চলা। বাবা অশ্বিনী বেরা পেশায় রাজমিস্ত্রি। বাড়িতে অবিবাহিত বোন। তার বিয়ের জন্যও টাকা জমাতে হচ্ছে। একের পর এত হাঁড়িতে তুলির টানে তিনি ফুটিয়ে তুলছেন হাসির রাজার ‘হাঁড়িমুখ’। আসলে গোপালের মুচকি হাসিতেই জোগাড় হেচ্ছে তাঁর সারা বছরের লেখাপড়ার টাকা। টানা পাঁচ বছর ধরে এ ভাবেই তিনি পড়া চালিয়ে আসছেন।
ছবি তুলেছেন উদিত সিংহ
রবিশঙ্করের কথায়, “সারা বছরই টাকার চিন্তা মাথা জুড়ে থাকে। প্রতিটি পয়সা হিসেব করে খরচ করতে হয়। শুধু এই কাজের দিনগুলিতে উদ্যোক্তাদের তোয়াজে মনে হয়, আমরাও মানুষ।” আর এক শিল্পী, কাঁথির দারিয়াপুরের বেনু বেরা এই কাজে আছেন টানা আঠারো বছর। কিন্তু এ বার তাঁর মেজাজ বেশ ফুরফুরে। একগাল হেসে বলেন, “অভাব আমাদের নিত্যসঙ্গী। কিন্তু এ বার এমন একটা কাজ পেয়েছি, যাতে হাসি মিশে আছে। কাজ করতে করতে গোপাল ভাঁড়ের কত গল্পই যে মনে পড়ছে! নিজের মনেই হাসছি।”
পুজো কমিটির সম্পাদক তন্ময় সামন্তের ব্যাখ্যা, “আসলে আমরা দশটা গল্প তুলে ধরছি। তার মধ্যে পিসিমাকে লাউচিংড়ি খাওয়ানো থেকে গোপালের পাঠশালায় পড়া, লেবু চুরি, মাছির সন্দেশ খাওয়া, গোপালের দুঃখ এ সব রয়েছে। প্রতিটি মূর্তির নিচে গল্পটাও লেখা থাকবে।” এই চেষ্টা যে দর্শক টানবে, তা শিল্পীরাও ভাল মতোই জানেন। প্রবীন শিল্পী বাসুদেব ঘরাইয়ের মনে পড়ে, “১৯৮২ সালে এক বার কাঁথিতেই গোপাল ভাঁড়কে নিয়ে মণ্ডপসজ্জা করেছিলাম। ঠাকুর দেখতে আসা বাচ্চা-বুড়োকে প্রাণ ভরে হাসতে দেখে মনটা ভরে গিয়েছিল। ফের গোপাল গড়তে হবে শুনে তাই হাসতে-হাসতে রাজি হয়ে গিয়েছি।”
ওঁদের হাতের গুণে হয়তো ষষ্ঠীতেই হেসে উঠবে গোটা মণ্ডপ। বাচ্চারা হাততালি দেবে। বড়রাও হাসবেন। কেউ খিলখিলিয়ে, কেউ মুখ টিপে।
তবে সেই হাসি-হাততালি হয়তো ওঁদের কানে পৌঁছবে না। কাজ সেরে পারানির কড়ি গুনে নিয়ে ওঁরা হয়তো তত ক্ষণে রওনা দিয়েছেন কাঁথির পথে।
পুজোর দিনে নিজের ঘরেও একটু হাসি ফোটাতে হবে যে!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.