কেউ মশারি পাচ্ছেন না, কেউ ওষুধ পাচ্ছেন না। তা নিয়ে নেতা মন্ত্রীরা আশ্বাসও দিয়েছেন। কিন্তু কাজ হয়নি। শিলিগুড়িতে ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে রাজনীতি চলছে-ই বলে অভিযোগ উঠেছে। কোথাও তৃণমূলের পতাকা কাঁধে ব্লিচিং ছড়াতে দেখা যাচ্ছে দলের নেতা কর্মীদের। কোথাও স্লোগান দিয়ে, বিপক্ষ দলের নিন্দা করে এলাকা পরিষ্কার করতে দেখা যাচ্ছে বাম বা কংগ্রেস নেতা-কর্মীদের। ভুক্তভোগীর তাই আক্ষেপ, রাজ্যে শাসকদল থেকে কংগ্রেস বা বিরোধী বাম নেতা-কর্মীরা সকলেই নাটক করছেন। মন্ত্রীকে ব্লিচিং ছড়াতে দেখা যাচ্ছে অথচ যে রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তিনি, সেখানে রোগীরা কেউ মশারি পাচ্ছেন না, কাউকে প্যারাসিটামলের মতো ওষুধ বাইরে থেকে কিনে আনতে হচ্ছে বলে অভিযোগ। আক্রান্তদের চিকিৎসা যথাযথ মিলছে কি না সে ব্যাপারে তিনি এখনও ব্যবস্থা নিতে পারেননি।
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মশারি বা প্যারাসিটামলের মতো ওষুধ কাউকে বাইরে থেকে কেনার কথা নয়। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি। রোগী বা তাঁদের পরিবারের লোকদের যাতে কোনও সমস্যা না হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে তা গুরুত্ব দিয়ে দেখতে বলা হয়েছে।” মন্ত্রীর দাবি, আগের দিন ৪২, ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডে ব্লিচিং পাউডার ছড়ানো হলেও রবিবার ওই সমস্ত এলাকায় জমা জল বার করার ব্যবস্থা করা হয় এসজেডিএ’র তরফে। দিন ১৫ আগে শিলিগুড়ি শহর এবং লাগোয়া কয়েকটি এলাকায় ডেঙ্গি আক্রান্তের খবর মেলে। স্বাস্থ্য দফতরের তরফে দুই এক জায়গায় সন্দেহভাজন ডেঙ্গি রোগী রয়েছে বলে জানানো হলেও পরিস্থিতি যে তা নয় দিন কয়েকের মধ্যেই তা টের পাওয়া যায়। |
শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতাল, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং শহরের নার্সিংহোমগুলিতে ডেঙ্গি রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে ৪২ নম্বর ওয়ার্ডে লিম্বু বস্তির বাসিন্দা কিশোরী রেশমি মাঝির মৃত্যু হয়। তার পরেও ডেঙ্গি পরিস্থিতি মোকাবিলা নিয়ে শাসক দল তৃণমূল, কংগ্রেস, সিপিএমের রাজনীতি চলছে বলে অভিযোগ। প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য বলেন, “আমরাও চাই এ সময় রাজনীতি ভুলে একযোগে কাজ করা উচিত। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পুরসভা আর স্বাস্থ্য দফতরকে ভূমিকা নিতে হবে।” পুরসভার মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত বলেন, “এই পরিস্থিতিতে শিলিগুড়ি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে রবিবার রক্ত পরীক্ষা চালু রাখতে অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু এ দিন সে ব্যবস্থা বন্ধ ছিল। শহরের এই পরিস্থিতি আমরাও কোনও রাজনীতি তাই না।” শিলিগুড়ি ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশন -এর সভাপতি অভিজিৎ মজুমদারের কথায়, “এ পরিস্থিতিতে কে কী করছে না, তা নিয়ে দোষারোপ করলে চলবে না। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কী করতে হবে সেটাই জরুরি। সকলকেই একযোগে তা করতে এগিয়ে আসতে হবে। এটা রাজনীতি করার সময় নয়।”
এই দিন উত্তরবঙ্গ মোডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় ডেঙ্গি রোগীদের বিশেষ ওয়ার্ডে সকলে মশারি না টাঙিয়েই শুয়ে রয়েছেন। চিকিৎসক বা নার্সরাও তাদের মশারি ব্যবহার করতে বলছেন না। ডেঙ্গি বা জ্বরে আক্রান্ত অনেকেই মশারি পাননি। অনেককে প্যারাসিটামল ট্যাবলেট, বিভিন্ন ইঞ্জেকশন বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। ডেঙ্গি ওয়ার্ডে ভর্তি বিজয়কুমার যাদবের স্ত্রী কাঞ্চন দেবী বলেন, “প্যারাসিটামল ট্যাবলেট, ইঞ্জেকশন বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। নেতা মন্ত্রী ব্লিচিং ছড়াচ্ছেন, কিন্তু হাসপাতালের সমস্যা দেখছেন না কেন?” ৭ দিন ধরে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত উদয়বাবুকেও ওষুধ কিনতে হচ্ছে বলে অভিযোগ। হাসপাতালে নার্ভের রোগে অসুস্থ ছেলে বিশ্বজিৎকে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করিয়েছেন জোৎস্নারানি ঘোষ। ওয়ার্ডের করিডরে যেখানে জায়গা মিলেছে ডেঙ্গি আক্রান্ত অনেক রোগীই সেখানে মশারি ছাড়া থাকছেন। তাতে আতঙ্কিত জ্যোৎস্নাদেবী এ দিন বলেন, “বৃহস্পতিবার থেকে বিশ্বজিতের জ্বর শুরু হয়েছে। হাসপাতালে এসেই ওর ডেঙ্গি হল বলে সন্দেহ হচ্ছে। রোগীদের পরিস্থিতির দিকে মন্ত্রীদের নজর দেওয়া দরকার।” মেডিক্যালে ভর্তি রয়েছেন অরুণ সাহানি এবং তার পরিবারের ৬ জন। অরুণবাবুর ভাই সঞ্জয়বাবুর জন্য বৃহস্পতিবার রাত ১টা নাগাদ রক্ত জোগাড় করতে পরিবারের লোকদের হেনস্থা হতে হয়। অভিযোগ, ডোনার কার্ড বা অন্য বিভাগের রক্তের দাতা দিলেও হাসপাতাল থেকে রক্ত মিলবে না বলে জানানো হয়। বিজেপি’র দার্জিলিং জেলা সভাপতি নৃপেন দাসের অভিযোগ, “শিলিগুড়িতে পুর ভোটের এখনও এক বছর বাকি। অথচ ডেঙ্গি পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক মুনাফা লাভ করতে তৃণমূল, কংগ্রেস, বামফ্রন্ট সকলেই নাটক করছেন। বাসিন্দাদের জন্য তাঁরা কেউ ভাবছেন না। দু দিন আগে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ঘুরে গেলেন। তিনি তো সদর্থক কিছু করলেন না।” |