নিজস্ব সংবাদদাতা • দার্জিলিং |
ক্রমেই চাপ বাড়ছে মোর্চার উপরে। এর আগে হাইকোর্ট বলেছিল, বন্ধ বেআইনি। সেই রায়কে অস্ত্র করে পাহাড়ে কড়া পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ধরপাকড়ও চলতে থাকে। এ বারে রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান তথা প্রাক্তন বিচারপতি অশোককুমার গঙ্গোপাধ্যায়ও বললেন, যে কোনও বনধই বন্ধ হওয়া উচিত। তাঁর মতে, “বনধে কোনও সমাধান সূত্র মেলে না।” রবিবার শিলিগুড়ি সার্কিট হাউসে বসে তিনি আরও বলেন, “এই ধরনের টানা বন্ধ সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের ক্ষতি করে।”
উত্তরবঙ্গে কমিশনের জন শুনানিতে যোগ দিতে রবিবার শিলিগুড়িতে আসেন কমিশনের চেয়ারম্যান-সহ অন্য সদস্যরা। এ দিনই তাঁরা কোচবিহারে চলে যান। অশোকবাবুর মন্তব্য প্রসঙ্গে মোর্চার সহকারী সম্পাদক জ্যোতিকুমার রাই বলেন, “গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পাহাড়ের সাধারণ বাসিন্দারা স্বেচ্ছায় কষ্ট এবং ত্যাগ স্বীকার করছেন। আমরা কোনও ভাবে বলপ্রয়োগ করিনি। কারও উপর জোর করে কিছু চাপিয়েও দিইনি।” তাঁর বক্তব্য, “রাজ্য সরকারই মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। অবৈধ ভাবে মোর্চা নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করেছে রাজ্য সরকার। কোনও মামলায় তাঁরা জামিন পেলে আবার অন্য মামলায় ফাঁসিয়ে তাঁদের গ্রেফতার করা হচ্ছে।” |
আজ, সোমবার ও কাল মঙ্গলবার বনধ শিথিল করা হয়েছে। পাহাড়ের মানুষ এখন সাগ্রহে তাকিয়ে রয়েছেন মঙ্গলবার মোর্চার নেতৃত্বাধীন গোর্খাল্যান্ড জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটির বৈঠকের দিকে। বনধ আর কত দিন চলবে, তা নিয়ে ওই বৈঠকেই সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা।
পাকাপাকি ভাবে বনধ তুলে অন্য ভাবে আন্দোলন চালানোর জন্য মোর্চার উপরে ঘরে-বাইরে চাপ বাড়ছে। রাজ্যের সঙ্গে কেন্দ্রও মোর্চাকে জনজীবন স্বাভাবিক রাখতে বলেছে। পাহাড়বাসীদেরও অনেকের আশা, এ বার সে ভাবেই আন্দোলনের পথে হাঁটবে মোর্চা। দীর্ঘদিন ধরে টানা বনধ থাকার পরে ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খোলার কথা ইতিমধ্যেই ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু তাতে দেখা দিয়েছে অন্য সমস্যা। পড়ুয়ারা কী ভাবে যাবে স্কুল-কলেজে, কী ভাবে বাইরের ছাত্রছাত্রীরা পাহাড়ে ফিরে আসবে এই নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তা ছাড়া, সরকারি অফিস এবং রেশন দোকান দীর্ঘদিন বনধের কবলে থাকলে ভাঁড়ারের টান সামলানো অসম্ভব হয়ে পড়বে বলেও আশঙ্কা করছিলেন অনেক পাহাড়বাসী। তাই আগের অবস্থান আরও নরম করে সোম ও মঙ্গলবার পাহাড়ে স্কুল-কলেজ, দোকানপাটের সঙ্গে সরকারি অফিসকেও বনধের বাইরে রাখার সিদ্ধান্ত নেয় মোর্চা।
মোর্চা নেতারা অবশ্য এ দিন দাবি করেছেন, সমাজের বিভিন্ন স্তরে সমর্থকেরা অর্থ এবং খাদ্যশস্য সরবরাহ করে গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তুলতে চাইছেন। দার্জিলিং সদরের মোর্চা সমর্থকেরা এ দিন মোর্চা প্রধান বিমল গুরুঙ্গের হাতে এই চাল এবং অর্থ তুলে দিয়েছেন। ওই সংগ্রহ করা রসদ বনধর সময়ে দরিদ্র বাসিন্দাদের মধ্যে বিলি করা হবে বলে মোর্চা সূত্রে জানানো হয়েছে। মোর্চার দার্জিলিং সদর ১ ইউনিটের সম্পাদক ডুক শেরিং লেপচা বলেন, “দলের নেতাদের কথায় আমাদের সমর্থকেরা ওই সাহায্য দিয়েছেন।” মোর্চা দাবি করেছে, এ দিন তাঁদের সদর ইউনিট ১ হাজার ৪৫০ কেজি চাল এবং নগদ ৫০ হাজার টাকা সংগ্রহ হয়েছে। পাহাড়ে মোর্চা বিরোধী দলগুলির পক্ষে অবশ্য জানানো হয়েছে, ভাঁড়ারে টান পড়েছে বলে খাদ্যশস্য সংগ্রহের অভিযানে নামতে হয়েছে গুরুঙ্গদের। গুরুঙ্গের যদিও দাবি, “গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে অন্তিম লড়াই চলছে। আমাদের অনেক সাহায্য দরকার। স্কুল পড়ুয়ারা টাকা তুলে দিচ্ছে। চা বাগানের শ্রমিকেরা এক দিনের মজুরি দিচ্ছেন। আমরা তাই আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া ছাড়া, অন্য কিছু এই মুহূর্তে ভাবতে পারছি না।”
পাহাড়ে বন্ধ নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ৩ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করা হয়েছে বলেও মোর্চা সূত্রে জানানো হয়। মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি বলেন, “১৬ সেপ্টেম্বর আবেদনের উপর শুনানি হবে। আবেদনে জানানো হয়েছে, পাহাড়ে যে বন্ধ চলছে, তা সাধারণ বাসিন্দারাই স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে করছেন। বন্ধে কোনও বলপ্রয়োগ করা হচ্ছে না। জরুরি পরিষেবাও স্বাভাবিক রয়েছে। পাহাড়ের দিন মজুর তথা চা শ্রমিকদের যে বন্ধের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে, তাও আবেদনে জানানো হয়েছে।”
|