নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
ইটাহারের কলেজের পরে এ বার শিলিগুড়ির একটি হাইস্কুলে তৃণমূলের তাণ্ডবের অভিযোগ উঠল। রবিবার শহরের একটি স্কুলের পরিচালন সমিতির অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচনে সিপিএম মনোভাবাপন্ন প্রার্থীরা জেতার পরে অফিস ভাঙচুর করে, প্রধানশিক্ষকের হাত মুচড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক তৃণমূল নেতা দেবাশিস দাস এবং তাঁর অনুগামীদের বিরুদ্ধে। পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ব্যবস্থা কেন নেওয়া হয়নি, তা নিয়েও ক্ষোভ রয়েছে স্কুলের শিক্ষক-কর্মী-অভিভাবকদের একাংশের। পরে যুব তৃণমূলের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি দেবাশিসবাবুর বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ করা হয়েছে। রাত পর্যন্ত তাকে অবশ্য গ্রেফতার করা হয়নি। পুলিশ কমিশনার কারলিয়াপ্পন জয়রামন বলেন, “পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ ঠিক নয়। তবে তেমন কোনও অভিযোগ কেউ করলে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তৃণমূল দাবি করেছে, তারা এই ঘটনায় জড়িত নয়। দেবাশিসবাবু বলেন, “অভিযোগ মিথ্যা। আমি ওই এলাকায় ছিলাম, তবে ঘটনায় জড়িত নই।” ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা সিপিএমের জোনাল কমিটির নেতা মুকুল সেনগুপ্ত বলেন, “দেবাশিস এবং তাঁর এক শাগরেদই সবার সামনে এ সব করেছে। এখন অস্বীকার করলে তিনিই মিথ্যে কথা বলছেন।” |
প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যের অভিযোগ, “পুলিশের মদতেই বিভিন্ন জায়গায় আমাদের হেনস্থা করা হচ্ছে। উল্টে আমাদের কর্মীদেরই গ্রেফতার করা হচ্ছে। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি। দোষীদের অবিলম্বে জামিনঅযোগ্য ধারায় গ্রেফতার করে শাস্তি দিতে হবে।” অশোকবাবুর অভিযোগ, মন্ত্রীর নির্দেশেই তাঁদের দলীয় কার্যালয়ে হামলা হয়েছিল, আর পুলিশ তাঁদের লোকদেরই গ্রেফতার করেছিল। ডাবগ্রামের ফুলবাড়ি এলাকাতেও মন্ত্রীর প্ররোচনায় তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা তাঁদের উপর হামলা করেছিল, সেক্ষেত্রেও পুলিশ তাঁদের কর্মী সমর্থকদের গ্রেফতার করেছিল। অশোকবাবুর বক্তব্য, “যাঁরা শিক্ষকের উপর হামলা করেছেন, তাদের মন্ত্রী চেনেন না? পুলিশের সামনে হামলা হল, পুলিশ করছিল কী? তা হলে কী নেতা হিসাবে দলের উপর তাঁর নিয়ন্ত্রণ নেই?” উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের দাবি, “অভিযুক্তরা কেউ আমাদের সমর্থক নয়। সকলকে ধরতে বলেছি।”
এ দিন ওই ঘটনার সূত্রপাত স্কুলের পরিচালন সমিতির নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর। প্রধান শিক্ষকের অভিযোগ, যাঁরা হেরে গিয়েছেন তাঁদের সমর্থনে এলাকার কয়েকজন স্কুলে ঢুকে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। তাঁরা অভিযোগ তোলেন নির্দিষ্ট সময়ের আগেই ভোট দেওয়ার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। প্রধান শিক্ষক বলেন, “এরপরেই ওরা টেবিলের উপরের ঘুঁষি মেরে কাচ ভেঙে দেয়। আমাকেও মারধর করে। হাত মুচড়ে দেয়। অন্য শিক্ষকরা এসে আমাকে বহিরাগতদের হামলা থেকে উদ্ধার করে।” স্কুলের অপর এক শিক্ষকের অভিযোগ, ঘটনার সময় সামনে প্রধাননগর থানার আইসি দাঁড়িয়েছিলেন। এবিটিএর জেলা সম্পাদক তমাল চন্দের কটাক্ষ, “এটাই তৃণমূলের সংস্কৃতি। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি। এই সরকারের পুলিশের উপর যে আস্থা রাখা যায় না, তা এ দিনের ঘটনাতেই স্পষ্ট।”
স্কুল সূত্রের খবর, এ দিন স্কুলের নির্বাচনে ১২ জন যোগ দেন। তাঁদের ৬ জন সিপিএম মনোভাবাপন্ন এবং বাকি ৬ জন তৃণমূল মনোভাবাপন্ন। মোট ভোটার ছিলেন ৩৭৩ জন। সকাল ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত পূর্ব ঘোষিত সূচি অনুযায়ী নির্বাচন ছিল। সাড়ে ১২টায় নির্বাচন শেষ হয়। এরপর দুপুর ২টো নাগাদ গণনা হয়। তাতে দেখা যায় সিপিএম মনোভাবাপন্ন ৬ জন প্রার্থীই জিতেছেন। ৩টে নাগাদ ভাঙচুর শুরু হয়। যদিও প্রধান শিক্ষকের দাবি, “সময়ের আগেই ভোট শেষ হয়েছে বলে যে অভিযোগ তা ঠিক নয়। নোটিস দিয়েই সমস্ত কিছু আগাম জানানো হয়েছিল। নিয়ম মেনেই ভোট হয়েছে।” |