অফিসও খোলা দু’দিন, সুর বদল মোর্চার
স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্রমান্বয়ে বন্ধ উপেক্ষার প্রবণতা এবং মুখ্যমন্ত্রীর কড়া হুঁশিয়ারি, এই দ্বিমুখী চাপে শেষ পর্যন্ত সরকারি দফতরও খোলা রাখার কথা ঘোষণা করতে বাধ্য হল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা।
শনিবার মোর্চার তরফে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, আগামী ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর পাহাড়ে দোকান-বাজারের সঙ্গে খোলা থাকবে সরকারি অফিস-কাছারিও।
অথচ ২৪ ঘণ্টা আগে, শুক্রবার সন্ধ্যায় মোর্চা নেতাদের নির্দেশে গোর্খাল্যান্ড জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি জানিয়েছিল, ওই দু’দিন বন্ধ শিথিল হলেও অফিস খুলবে না। রাতারাতি এই অবস্থান বদল কেন?
মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরির জবাব, “আসলে কমিটির বৈঠকে অফিস-সহ সবই দু’দিন খোলা থাকবে বলে ঠিক হয়েছিল। ভুলবশত ঘোষণার সময়ে অফিসের কথা বাদ পড়ে গিয়েছিল।” সেই সঙ্গে, তিনি জানান, ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও খোলা থাকবে। আন্দোলনের পরের রূপরেখা কী হবে তা ১০ সেপ্টেম্বরের বৈঠকে ঠিক হবে বলে জানাচ্ছেন রোশন।
মোর্চার একটি সূত্র জানাচ্ছে, পাহাড়ে লাগাতার বন্ধ উপেক্ষা করার প্রবণতা বেড়ে চলায় দলের জনসমর্থন যে ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে তা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। উপরন্তু, লাগাতার দোকানপাট, অফিস, স্কুল বন্ধ থাকায় আগের মতো চাঁদাও মিলছে না। বন্ধ চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে যে চাঁদা দেওয়া কিংবা দলের ডাকে জনতাকে যখন-তখন রাস্তায় নামানো যাবে না, সেটাও ব্যবসায়ী ও সরকারি কর্মীদের অনেকেই খোলাখুলিই বলছেন। তাই জনসমর্থন অটুট রেখে দলের ভাঁড়ারে যাতে টান না পড়ে, তা নিশ্চিত করতে ফের সুর বদলে ফেলতে বাধ্য হল মোর্চা।
জীবিকার টানে। বন্ধের মাঝেই বসেছে বাজার। শনিবার দার্জিলিং ম্যালের কাছে রবিন রাইয়ের তোলা ছবি।
মোর্চার অন্দরের খবর, এমনিতেই রাজ্যের কড়া মনোভাব ও লাগাতার পুরনো মামলায় গ্রেফতারির ফলে গত এক মাসের মধ্যে দলের প্রায় ১২০০ নেতা-কর্মী জেলবন্দি। এরই মধ্যে শনিবার মোর্চাকে বেআইনি ভাবে মদত দেওয়ার অভিযোগে কালিম্পঙের এক ঠিকাদার অশোক পেরিওয়ালকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তা ছাড়া, এখন বহু এলাকায় নেতা না থাকায় সাধারণ কর্মীরা পথে নামছেন না। নিয়মিত মিটিং-মিছিল চালাতে যে অর্থের প্রয়োজন হয়, এলাকার নেতাদের একাংশ জেলে থাকায় সে টাকাও জোগাড় করা সমস্যা হয়ে যাচ্ছে।
তার উপরে কালিম্পঙে বন্ধ উপেক্ষা করে লেপচাদের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী যে সব কড়া পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করে গিয়েছেন, তা কার্যকর হলে বিস্তর সমস্যায় পড়ার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ী ও সরকারি কর্মীদের অনেকেই। সে জন্যই সব দিক সামাল দিতেই বন্ধ শিথিলের সময়ে অফিস খোলা রাখার সিদ্ধান্তে নিতে বাধ্য হয়েছেন মোর্চা নেতৃত্ব।
৩ সেপ্টেম্বর কালিম্পঙে লেপচাদের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীকে অভ্যর্থনার বহর দেখেও কিঞ্চিৎ শঙ্কিত মোর্চা নেতৃত্ব। তাঁদের অনেকেই একান্তে স্বীকার করেছেন, ওই অনুষ্ঠানে লেপচারা তাঁকে ‘ভাগ্যবিধাতা’ হিসেবে সম্মান জানান। সেই সভায় মুখ্যমন্ত্রীও জানিয়ে দেন, বন্ধ না তুললে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সরকারি কর্মীরা লাগাতার বন্ধের অছিলায় গরহাজির থাকলে তাঁদের জায়গায় পাহাড়ের বেকার যুবক-যুবতীদের নিয়োগ করা হবে। রেশন দোকান না খোলা হলে ডিস্ট্রিবিউটর, ডিলারদের লাইসেন্স বাতিল করে তা পাহাড়ের মহিলাদের দেওয়া হবে। কোনও স্কুলে প্রার্থনার পরে গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে পড়ুয়াদের মধ্যে প্রচার হলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাজেয়াপ্ত করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
সেই কড়া বার্তায়, পাহাড়ের সরকারি কর্মীদের অনেকেই মোর্চার অফিসে গিয়ে ভেঙে পড়েন বলেও জানা গিয়েছে। অনেকেরই বক্তব্য, এক বার চাকরি থেকে সরালে মামলা করে তা ফেরত পেতে বছর গড়িয়ে যেতে পারে। তাই গোর্খাল্যান্ডের দাবির প্রতি সমর্থন থাকলেও কর্মহীন অবস্থায় আন্দোলন সম্ভব নয়। বহু রেশন ডিলার, ডিস্ট্রিবিউটরই মোর্চার এক শীর্ষ নেতার কাছে ‘লাইসেন্স’ বাতিলের দুশ্চিন্তার কথা জানান বলে খবর। তাঁরা জানিয়ে দেন, রুটিরুজি বন্ধ হলে চাঁদাও দিতে পারবেন না।
মোর্চার সূত্রেই খবর, এরপরেই দলের পক্ষ থেকে তাঁদের ব্যবসা যাতে চলতে পারে সে আশ্বাস দেওয়া হয়।
এখানেই শেষ নয়, আগামী দিনে আন্দোলন কোন পথে হবে তা নিয়েও মোর্চার মধ্যে মতভেদও প্রকাশ্যে এসেছে। এ দিন দার্জিলিং মোটর স্ট্যান্ডে একটি সভায় অল ট্রান্সপোর্ট জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটির সভাপতি নরবু লামা বলেন, “সরকারি বাস ছাড়া অন্য যে কোনও গাড়ি পাহাড়ে চললে তা আটকে তল্লাশি চালাব। দেখব, বন্ধ উপেক্ষা করে কেউ সমতলে রসদ সংগ্রহে যাচ্ছে কি না। তা হলে আমরা তাঁদের আটকে দেব।” কিন্তু, মোর্চার সহকারী সভাপতি জ্যোতিকুমার রাই এরপরেই জানিয়ে দেন, কোনও পিকেটিং-এর প্রশ্ন নেই। তিনি বলেন, “পরিবহণ সংগঠনের পক্ষ থেকে গাড়ি আটকানো হবে না। সংগঠনের নেতা-সদস্যরা নিশ্চয়ই দলের নির্দেশ মেনে চলবেন।”
প্রবল চাপে ক্রমাগত কোণঠাসা মোর্চার আন্দোলনের দিশা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে পাহাড়ের নেতাদের মধ্যে। অখিল ভারতীয় গোর্খা লিগের সাধারণ সম্পাদক প্রতাপ খাতি বলেন, “এক বার একটা সিদ্ধান্ত হচ্ছে। পর দিন তা বাতিল করা হচ্ছে। এতে আন্দোলনের দিশা নিয়ে প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে। জিটিএ স্তব্ধ করাটাই যদি মূল লক্ষ্য হয়, তা হলে তা গড়ার জন্য এত ছোটাছুটি করলেন কেন মোর্চা নেতারা?”
ঘরে বাইরে এ প্রশ্নেই এখন জেরবার তাঁরা।

পুরনো খবর:





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.