পুলিশকে আর ভয়ই পাচ্ছে না চোরেরা! প্রমাণ মিলল আরও এক বার।
নেতাজিনগরের পরে এ বার সিঁথির হরেকৃষ্ণ শেঠ লেন। মঙ্গলবারই চুরি হয়েছিল নেতাজিনগরের কলকাতা পুলিশ আবাসনে। আর শনিবার সকালে জানা গেল, সিঁথির হরেকৃষ্ণ শেঠ লেনে চুরি হয়ে গিয়েছে তিন-তিনটি বাড়িতে। তার মধ্যে একটি কলকাতা পুলিশের এক অফিসারের। দুষ্কৃতীরা তাঁর বাড়ি থেকে বেশ কয়েক হাজার টাকা ও কয়েক ভরি সোনার গয়না হাতিয়েছে। পুলিশ জানায়, আরও দু’টি বাড়ি থেকেও দুষ্কৃতীরা টাকা ও সোনার গয়না নিয়ে গিয়েছে বলে থানায় অভিযোগ জমা পড়েছে। তবে রাত পর্যন্ত কেউই ধরা পড়েনি।
২৯/৩ ডি হরেকৃষ্ণ শেঠ লেনের দোতলা একটি বাড়ির একতলায় দু’টি ঘর নিয়ে ভাড়া থাকেন ওয়্যারলেস দফতরের সার্জেন্ট সম্রাট ঘোষ ও তাঁর স্ত্রী শাশ্বতী। পাশেই একটি সরকারি আবাসনে থাকেন সম্রাটের বাবা-মা। রোজ সেখান থেকে রাতের খাবার খেয়ে ভাড়া বাড়িতে শুতে আসেন ওই দম্পতি। সম্রাট এ দিন জানান, শুক্রবারও স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে বাবার বাড়িতে রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলেন তিনি। তবে ওই রাতে সেখানেই থেকে যান তাঁরা। শনিবার সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ বাড়িওয়ালা শৈলেশচন্দ্র সেন সম্রাটকে ফোন করে জানান, তাঁর ঘরের সদর দরজার হুড়কোর আংটা, তালা ভাঙা। এর পরে ঘরে ঢুকে ওই দম্পতি দেখেন, আলমারি লন্ডভন্ড। তছনছ করা হয়েছে বিছানা। গয়নার খালি বাক্সগুলি ছড়ানো ঘরময়। শাশ্বতী বলেন, “আমার বিয়ের সব গয়না, নগদ টাকা চুরি হয়েছে। এ ছাড়া, প্লাস্টিকের একটি কৌটোয় কয়েক হাজার টাকা জমিয়েছিলাম, সেই কৌটো ভেঙে টাকা নিয়ে গিয়েছে চোরেরা।” |
সিঁথি থানা সূত্রের খবর, ওই বাড়ির বারান্দা থেকে লোহার একটি রড উদ্ধার হয়েছে। অনুমান, সেটি দিয়েই হুড়কোর আংটা ও তালা ভাঙা হয়েছে। পুলিশ জানায়, দুষ্কৃতীরা ঘরে ঢুকে তোষকের তলা ঘেঁটে কোনও ভাবে আলমারির চাবি পেয়ে যায়। আর আলমারি খুলে লকারের চাবিও পেয়ে যায় তারা।
ওই বাড়িরই একতলায় সামনের দিকের একটি আলাদা অংশে থাকেন মাছ ব্যবসায়ী মিন্টু ওরফে বাপি ভুঁই। চুরি হয়েছে তাঁর বাড়িতেও। তাঁর স্ত্রী রিঙ্কি জানান, তাঁর স্বামী প্রতিদিন ভোরে ব্যবসার কাজে বেরিয়ে যান। এ দিন সকাল আটটা নাগাদ ঘুম ভাঙার পরে রিঙ্কি দেখেন, কাজে যাননি মিন্টু। এর পরে পুরসভার সাফাই-গাড়ির আওয়াজ পেয়ে তিনি রান্নাঘর থেকে আবর্জনার থলি বার করে দিতে গিয়ে দেখেন, রাস্তার ধারের ওই ঘরের দরজা হাট করে খোলা, আলমারিও খোলা রয়েছে। রিঙ্কি বলেন, “ওই দরজার ছিটকিনির দিকে ভাল করে তাকিয়ে দেখি, সেটি ভাঙা। দরজার খিলটাও খুলে পড়ে রয়েছে পাশের বিছানায়। আলমারি থেকে উধাও স্বামীর ব্যবসার বেশ কয়েক হাজার টাকা এবং গয়না।” তিনি জানান, চোরেরা ঘরের ভিতরে সিগারেট খেয়ে তার টুকরোও ফেলে গিয়েছে। অথচ, তাঁরা তা ঘূণাক্ষরেও টের পাননি।
রিঙ্কির শাশুড়ি প্রতিমাদেবী জানান, যে ঘরে চুরি হয়েছে, রাতে ওই ঘরেই ঘুমোন তিনি। শুক্রবার তিনি মধ্যমগ্রামে আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়েছিলেন। চুরির খবর পেয়ে তাড়াতাড়ি ফিরে আসেন। প্রতিমাদেবীর সন্দেহ, দুষ্কৃতীরা কোনও ভাবে জানতে পারে, পাশের ঘরের দম্পতি এবং তিনি রাতে বাড়িতে থাকবেন না। রিঙ্কির সন্দেহ, তাঁদের রাস্তার ধারের জানালাগুলি রাতে খোলা থাকায় দুষ্কৃতীরা ঘরের ভিতরে ঘুমের ওষুধ ছড়িয়ে দিয়ে ভিতরে ঢোকে। তবে পুলিশ জানায়, ঘুমের ওষুধ ছড়ানো হয়েছিল কি না, তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাবে না। এলাকার বাসিন্দা, রাজ্য পূর্ত দফতরের কর্মী দীপঙ্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, “দীর্ঘ দিন এই এলাকায় রয়েছি। ছিঁচকে চুরি এক-আধ বার হয়তো হয়েছে, কিন্তু এত বড় চুরি হয়েছে বলে শুনিনি।”
এ দিকে, ওই বাড়ির ঠিক উল্টো দিকে তিনতলা একটি বাড়িতেও দুষ্কৃতীরা হানা দেয় বলে জানায় পুলিশ। ওই বাড়িতে চার ভাই থাকেন। তাঁদেরই এক জন অঞ্জন ঘোষের ঘর থেকে দুষ্কৃতীরা কয়েক হাজার টাকা চুরি করেছে বলে অভিযোগ। অঞ্জনবাবু বলেন, “আমার শ্যালক বাগবাজারে থাকতেন। শুক্রবার তিনি মারা যাওয়ায় রাতে স্ত্রীকে নিয়ে সেখানে থেকে যাই। শনিবার ভোরে ভাইয়ের স্ত্রীরা ফোন করে জানান, দরজার তালা ভাঙা।” পুলিশ জানায়, দুষ্কৃতীরা অঞ্জনবাবুর দুই ভাইয়ের ঘরে হুড়কো আটকে দিয়েছিল। অন্য এক ভাই ভোরে হুড়কো খুলে সকলকে বার করেন।
পুলিশের অনুমান, এই তিনটি ঘটনায় দুষ্কৃতীরা এলাকার না হলেও পাড়ার দুষ্কৃতীদের সাহায্য নিয়েছে। কারণ সব ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, পরিবারের কেউ না কেউ ঘরে নেই। নির্দিষ্ট খবরের ভিত্তিতেই চুরি হয়েছে। |