ভয়ে কুঁকড়ে যাননি। অসম্মান করায় রেয়াত করেননি। সাহসে ভর করে হাতেনাতে মোটরসাইকেল-আরোহী তিন মত্ত দুষ্কৃতীকে ধরিয়ে দিলেন স্নাতক প্রথম বর্ষের এক ছাত্রী। শুক্রবার সন্ধ্যায়, আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রোডে এই তিন দুষ্কৃতী মোটরসাইকেলে হবু স্বামীর পিছনে বসা ওই ছাত্রীর কোমরে হেলমেট দিয়ে আঘাত করে। গালিগালাজও করে। হবু স্বামী ও আর এক মোটরসাইকেল আরোহী দম্পতি সাহায্য করায় সুবিধা হয় ওই ছাত্রীর।
বৃহস্পতিবার রাতে উলুবেড়িয়ায় ছ’নম্বর জাতীয় সড়কে কলকাতার কয়েক জন শিল্পীর উপরে মোটরসাইকেল বাহিনীর তাণ্ডবের পরে শুক্রবার ভর সন্ধ্যার এই ঘটনা আবার দেখিয়ে দিল, মোটরসাইকেল-আরোহী এক দল যুবক বেপরোয়া ও অপরাধপ্রবণ হয়ে উঠেছে।
ধৃত তিন যুবকের এক জন দেগঙ্গায় ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রাক্তন বিধায়ক মহম্মদ ইয়াকুবের ছোট ছেলে মহম্মদ জাহেদ। ইয়াকুবের অবশ্য দাবি, “জাহেদ আমার ছেলে হলেও ওর সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই।” বাকি দু’জন শেখ সব্বর ও মকসুদ খান। পুলিশ জানিয়েছে, তিন জনেই মত্ত অবস্থায় ছিল। এরা নির্মাণ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। ডি সি (সাউথ) মুরলীধর শর্মা জানান, ধৃতদের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানি, মহিলার উদ্দেশে অশ্লীল কটূক্তি ও কোনও হাতিয়ার দিয়ে আঘাত করার অভিযোগে মামলা রুজু করা হয়েছে।
তা ছাড়া, একটি মোটরসাইকেলে চালক-সহ দু’জনের বেশি ওঠা বেআইনি। হেলমেট না পরাও আইন বিরুদ্ধ। যে হেলমেট দিয়ে তরুণীকে আঘাত করে তার মাথায় হেলমেট ছিল না। পুলিশ এ বিষয়েও আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে। ধৃতদের ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
কী ঘটেছিল?
হবু বরের সঙ্গে ওই তরুণী বিয়ের কেনাকাটা সেরে আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু উড়ালপুল ধরে মোটরসাইকেলে ফিরছিলেন। তখন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা। উড়ালপুল থেকে নামার পরে পুলিশ ট্রেনিং স্কুলের সামনের ট্রাফিক সিগন্যালে তাঁদের মোটরসাইকেলটি দাঁড়িয়ে পড়ে।
ওই ছাত্রীর কথায়: “সিগন্যালে দাঁড়ানোর পরে আর একটি মোটরসাইকেল আমাদের ডান দিকে এসে দাঁড়ায়। তাতে তিন জন ছিল। হঠাৎই কোমরের ডান দিকে ভারী কিছুর আঘাত লাগে। তাকিয়ে দেখি, ওই মোটরসাইকেলে সবার পিছনে বসা ছেলেটির হাতে হেলমেট। বুঝতে পারলাম, ওই হেলমেট দিয়েই সে আমার কোমরে মেরেছে। ঘুরে তাকাতেই ওরা অশ্লীল ইঙ্গিত এবং গালিগালাজ করল। ওরা এতই মত্ত ছিল যে মোটরসাইকেলে ঠিকঠাক বসতেও পারছিল না।” পাশের মোটরসাইকেল আরোহী আর এক দম্পতি বিষয়টি বুঝতে পেরে ওই তিন যুবকের মোটরসাইকেলের সামনে দাঁড়িয়ে যান। ওই ছাত্রী তখন তাঁর হবু স্বামীকে সামনের মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাফিক পুলিশদের সব কথা জানাতে বলেন। তাঁদের অভিযোগের ভিত্তিতে ট্রাফিক পুলিশ মোটর বাইক-সহ ওই তিন মত্ত যুবককে আটক করে। খবর দেওয়া হয় হেস্টিংস থানায়। |