দু’দুবার বাধা এসেছিল দেশ ছাড়ার সময়। কাবুল বিমানবন্দর থেকে ফেরত আসতে হয়েছিল দিল্লিতে। দেশ ছাড়ার শেষ দিনটিতে সব মিলিয়ে সুস্মিতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ঘটনাচক্রে বেশ কয়েক বার বিপাকে পড়তে হয়।
শেষ পর্যন্ত অনেক ঝকমারি করে তিনি পৌঁছন কাবুলে তাঁর স্বামী জানবাজের কাছে।
সুস্মিতার বন্ধুরা এখন আক্ষেপ করছেন, উজান ঠেলে মরতেই যেন গেলেন সুস্মিতা!
দিনটা ছিল চলতি বছরের অগস্ট মাসের তিন তারিখ। দিল্লি থেকে কাবুলের বিমান ছাড়ার সময় ছিল সকাল ন’টা পনেরো। বেশ কয়েক ঘণ্টা আগেই দিল্লির বন্ধু পার্থ মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে বিমানবন্দরে চলে এসেছিলেন সুস্মিতা। কিন্তু কাস্টমস বিভাগে এসেই বিপত্তির মুখে পড়তে হয়েছিল তাঁকে। কারণ যত ওজনের জিনিস সঙ্গে নেওয়া যায়, তার চেয়ে অনেক বেশি জিনিস হয়ে গিয়েছিল তাঁর।
|
ব্যবসা সূত্রে দিল্লি থাকেন পার্থবাবু। দিল্লিতেই বছর বারো আগে তাঁর সঙ্গে সুস্মিতার আলাপ। তার পর থেকে পার্থবাবুদের পারিবারিক বন্ধু হয়ে যান সুস্মিতা। শনিবার দুপুরে কালিন্দী হাউসিংয়ে তাঁর পৈতৃক ফ্ল্যাটে বসেই পার্থবাবু বলছিলেন সে দিনের কথা। কাস্টমসে মালপত্র আটকানোর পরে চমকে গিয়েছিলেন পার্থবাবু। এত জিনিস কেন? সুস্মিতা উত্তর দিয়েছিলেন, “সামনেই ঈদ। বাড়ির সবার জন্য উপহার নিয়ে যাচ্ছি। দেওরের ছেলেমেয়েগুলোর জন্য ভাল ভাল জামাকাপড় কিনেছি। কাবুলে তো এ সব পাওয়া যায় না।’’
পার্থবাবু জানাচ্ছেন, কাস্টমস বিভাগ আটকে দেওয়ার পর দেখা গেল অতিরিক্ত জিনিস নেওয়ার জন্য যে টাকা লাগবে, তা নেই সুস্মিতার কাছে। পার্থবাবু বলেন, ‘‘আমার কাছেও অত টাকা নেই। কী করা যায়? শেষ পর্যন্ত আমার এক পরিচিত প্রাক্তন সাংসদকে ফোন করি। তিনিই বিমানবন্দরের কাস্টমস কমিশনারকে ফোন করে টাকার পরিমাণ কমিয়ে দিতে অনুরোধ করেন। শেষ পর্যন্ত চার হাজার টাকা ধার্য করে কাস্টমস বিভাগ।’’ |
কাস্টমসের ঝামেলা মেটার পরেও কিন্তু সুস্মিতার যাত্রাপথ সুগম হয়নি। ন’টা পনেরোর বিমান কাবুলে গিয়ে ফের যাত্রী সমেত ফিরে আসে। পার্থবাবু জানাচ্ছেন, যে সংস্থার বিমানে সুস্মিতা কাবুল যাচ্ছিলেন, সেই সংস্থার সঙ্গে কাবুল এয়ারপোর্ট অথরিটির কিছু সমস্যা হওয়ায় কাবুলে তারা বিমান নামতে দেয়নি। পার্থবাবু বলেন, ‘‘প্লেন ছাড়ার ঘণ্টা তিনেক পরে সুস্মিতা ফের আমাকে ফোন করে। ভাবলাম পৌঁছনোর খবর দিচ্ছে। কিন্তু আমাকে অবাক করে ও বলে, আমি আবার দিল্লিতে। কী হয়েছে জানতে আমি আবার এয়ারপোর্ট ছুটে যাই। গিয়ে দেখি যে বিমানে ওরা গিয়েছিল সেই সংস্থা ওদের দিল্লিতে একটা হোটেলে রাখার ব্যবস্থা করেছে।’’
এক বার নয় দু’দুবার সুস্মিতার বিমান দিল্লি ফেরত আসে বলে জানাচ্ছেন পার্থবাবু। শেষ পর্যন্ত পাঁচ তারিখ সকালে সুস্মিতা কাবুলে স্বামীর কাছে পৌঁছতে পেরছিলেন। পার্থবাবু বলেন, ‘‘খুব চিন্তায় ছিলাম। কারণ সুস্মিতার কাছে টাকা প্রায় ছিল না বললেই চলে। কাস্টমসের ওই চার হাজার টাকাও আমরা ভাগাভাগি করে দিয়েছিলাম। কাবুলে নামার পর বিমানবন্দর থেকে ফোন করে জানিয়েছিল, জানবাজ নিতে এসেছে। আর চিন্তার কিছু নেই।’’
তালিবান শেষ অবধি সুস্মিতাকে নিয়ে চিন্তা করার সব সুযোগই কেড়ে নিল।
|