তালিবান যেন মাওবাদী: সুস্মিতার দেওর
ড়ি দিয়ে বেঁধে, মারতে মারতে নিয়ে যাচ্ছে এক দল। মাথায় তাক করা একে-৪৭। তখনও সাহস হারাননি কাবুলিওয়ালার বাঙালি বৌ। প্রত্যয়ী কণ্ঠেই প্রশ্ন করেছিলেন, “আমার কসুর কী?” জবাব এসেছিল, “আমাদের বিরুদ্ধে ফিল্ম বানিয়েছ, কিতাব লিখেছো। আবার জিজ্ঞেস করছো, কসুর কী?”
তার পরেই একটি মাদ্রাসার কাছে নিয়ে গিয়ে হানাদাররা কুড়িটি বুলেটে ঝাঁঝরা করে দেয় সুস্মিতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওরফে ‘সাহাবকামালে’র শরীর।
সুস্মিতার স্বামী আহত জানবাজ খানের মুখে সেই অভিশপ্ত রাতের কাহিনি যেমনটি শুনেছেন, শনিবার সন্ধ্যায় আফগানিস্তান থেকে ফোনে সেই ভাবেই তার বর্ণনা দিলেন সুস্মিতার দেওর জার খান।
চেষ্টা করছিলাম দীর্ঘ ক্ষণ। অবশেষে সন্ধে সওয়া সাতটা নাগাদ মোবাইলে লাইন মিলল। সুস্মিতার স্বামী জানবাজ খানের নম্বর ওটা। তবে ফোন ধরলেন তাঁর খুড়তুতো ভাই জার খান। আফগানিস্তানে ওঁদের ওখানে তখন সওয়া ছ’টা। এ দিন ছিল ওঁদের ধর্মমতে সুস্মিতার পারলৌকিক ক্রিয়াকর্ম। শ’তিনেক লোক এসেছিলেন। ফোনে জার খান নিজের পরিচয় দিয়ে প্রথমেই জানতে চাইলেন, “আপ কৌন? নাম ক্যা?” আমার পদবি ‘খান’ হওয়ায় নিমেষে আমাকে ‘খান সাব’ বলে আলাপ শুরু করলেন তিনি। জেনে নিলেন আমার সাংবাদিক পরিচয়টাও। তার পর বললেন, “কলকাতার ফোন নম্বর দেখেই বুঝেছি। ওই কোডটা চেনা। কিন্তু কার নম্বর সেটা বুঝিনি বলে অসুবিধা হচ্ছিল। বারবার ফোন করছেন দেখে ধরলাম।”
“এটা তো জানবাজের নম্বর। ওঁর সঙ্গে কথা বলা যাবে না?”
জার খান বললেন, “জানবাজের শরীর খুব খারাপ। ফোনে কথা বলার অবস্থায় নেই। আমি ওর ভাই।” এ দিন দুপুরে সুস্মিতার ভাই গোপাল বন্দ্যোপাধ্যায়ও বাগুইআটির বাড়ি থেকে ফোনে এক বার ধরতে পেরেছিলেন জানবাজকে। তখনও জানবাজ নিজে বেশি কথা বলতে পারেননি। শুধু বলেছিলেন, “মেরা পাগলিকো (সুস্মিতাকে) মার দিয়ে তালিবান লোগোঁ নে।” গোপালবাবুর সঙ্গেও কথা বলেছিলেন জার খানই।
জার খানকে প্রশ্ন করি, কী হয়েছিল সে দিন?
বলে চলেন জার খান বুধবার রাত দেড়টা নাগাদ ৩০-৩৫ জন লোক জোর করে ঘরে ঢুকে জানবাজ ও সুস্মিতাকে বেধড়ক মারতে থাকে। তার পরে দু’জনের চোখ ও হাত বেঁধে নিয়ে যায়। হুমকি দেয়, “আরও চেঁচালে গুলি করে দেব।” আততায়ীরা দু’জনকে দু’দিকে নিয়ে চলে যায়। সকাল হতেই জানবাজ-সুস্মিতাকে খুঁজতে বেরিয়েছিলেন পরিবারের সকলে। বাড়ির কাছেই ঝোপের মধ্যে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় জানবাজকে পাওয়া যায়। কিন্তু সুস্মিতাকে তখন পাওয়া যায়নি। জার খানের কথায়, “খানিক পর গ্রামের কিছু লোক বলল, দু’কিলোমিটার আগে এক অউরতের বডি পড়ে আছে।” তাঁরা গিয়ে দেখেন এটাই ‘সাহাবকামাল’ সুস্মিতার দেহ। তত ক্ষণে জানবাজকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে হাসপাতালে। যাওয়ার পথে জানবাজ বারবার জানতে চাইছিলেন, “পাগলি কা হাল ক্যা হ্যায়, পাগলি কঁহা হ্যায় (পাগলি এখন কেমন আছে, ওর কী হয়েছে)?”
কেন এমন হল, কিছু আঁচ করতে পারেন? জার খানের উত্তরে উঠে এল মাওবাদী আর আল কায়দার সঙ্গে তালিবানের তুলনা। বোঝা গেল, জানবাজ-সুস্মিতার কাছ থেকে কলকাতার খবরাখবর অনেকটাই তাঁর জানা। নিজেও বছর কয়েক আগে কলকাতায় এসেছিলেন বলে জানালেন। তখন থেকেই হিন্দিতে সড়গড়। বললেন, “দেখিয়ে তালিবান লোগ আপ লোগোকা মাওবাদী জ্যায়সা হ্যায়। ওরা কোথায় থাকে, কী ভাবে অ্যাকশন করে, জানি না। কারও উপরে রাগ হলে তাকে রাস্তাতেই গুলি করে দেয়। আল কায়দা জ্যায়সা।”
আফগানিস্তানের খান পরিবারে সুস্মিতা কেমন ছিলেন? খুড়তুতো দেওরের বক্তব্য, “খুব ভাল। ভীষণ আপন। আমার সঙ্গে বৌদির সম্পর্ক ছিল ভাই-বোনের মতো। বলতেন, তোমার মা তো আমারও মা।” কথায় কথায় জানালেন, এ বারও কলকাতা থেকে আসার সময়ে সুস্মিতা তাঁর জন্য অনেক উপহার নিয়ে এসেছিলেন। “উনি জানতেন, আমার ফেভারিট কী কী। মেরে লিয়ে পারফিউম, রিবক কা শ্যু, পাঠান স্যুট সব লে আয়ি থি।”
কলকাতা চায় সুস্মিতার দেহ সেখানে নিয়ে যাওয়া হোক। আপনারা কী বলেন?
জার খান জানালেন, “এমনি তো আপত্তি নেই। কিন্তু ক্ষতবিক্ষত ওই দেহ কবর থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া কি সম্ভব?” এ দিন সকালে গোপালবাবু ও তাঁর স্ত্রী দেবলীনাদেবী মহাকরণে যান মুখ্যমন্ত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে। সে সময় মুখ্যমন্ত্রী মহাকরণে ছিলেন না। তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর বিশেষ সচিব গৌতম স্যানালের সঙ্গে দেখা করেন। মহাকরণে আসার আগে সুস্মিতার ভাই ও তাঁর স্ত্রী নিজাম প্যালেসে গিয়ে মুকুল রায়ের সঙ্গেও সুস্মিতার মরদেহ নিয়ে আসার ব্যাপারে আলোচনা করেন। পরে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে মমতা বলেন, “খুবই মর্মান্তিক ঘটনা। আমরা বিদেশ মন্ত্রককে চিঠি লিখেছি। যে কোনও ভাবে ওঁর দেহ যাতে ফিরিয়ে আনা যায়, তার জন্য রাজ্য সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।”
গোপালবাবু জানিয়েছেন, তিনি যখন জার খানের সঙ্গে কথা বলছিলেন, ফোন কেটে যায় এক বার। তখন জার খানই ঘুরিয়ে গোপালবাবুকে ফোন করেন। গোপালবাবুকে জার খান জানিয়েছেন যে, তাঁরাও সুস্মিতাকে দ্বিতীয় বার আফগানিস্তানে ফিরতে নিষেধই করেছিলেন।
পরিবারটি এখন চরম আতঙ্কে ভুগছে। তালিবান তাঁদের আবারও আক্রমণ করবে না তো?

এই সংক্রান্ত খবর:

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.