তখন বেশ রাত। হঠাৎ দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকলেন এক বৃদ্ধ। হাতে একটা প্লাস্টিকের ব্যাগ। দোকান বন্ধের তোড়জোড় করছিলেন মার্ক ম্যানিং। পেশায় পুরনো জিনিসের কারবারি। ওই বৃদ্ধ ম্যানিংকে জানালেন তিনি টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের কয়েকটি টুকরো বিক্রি করতে চান। এর জন্য ম্যানিংয়ের কাছে ১৫ লক্ষ টাকাও দাবি করেন। প্রথমে পাত্তা দিতে চাননি। কিন্তু ওই বৃদ্ধের গল্প শুনে আর তাঁর দেওয়া নথিপত্র দেখে ম্যানিংয়ের মনে হয় তিনি হয়তো সত্যি কথা বলছেন। তাই এক রকম ঝুঁকি নিয়েই বৃদ্ধের জিনিসগুলো কিনে নেন ম্যানিং। পরের দিন বিশেষজ্ঞদের দেখালে তাঁরা জানান, ওই টুকরোগুলো সত্যি সত্যিই টাইটানিকের টুকরো। এর মধ্যে জাহাজের সামনের অংশের ধাতুর মুখ, প্রথম শ্রেণির কেবিনের সিঁড়ির টুকরোও ছিল। আরও খোঁজ নিয়ে ম্যানিং জানতে পারেন টুকরোগুলোর বাজারদর প্রায় ১২ কোটির কাছাকাছি। |
ম্যানিংয়ের কথায়, “ব্যাপারটা জুয়াখেলা হয়ে গিয়েছিল। শুধু ওই বৃদ্ধের কথায় বিশ্বাস করে কিনে নিই। এখন দেখছি ভুল করিনি।” তবে এখনই ওই টুকরোগুলো বিক্রি করতে চান না ম্যানিং। তিনি বলেন, “আগে সাধারণ মানুষ জিনিসটাকে দেখুক। কয়েক দিন সংগ্রহশালায়ও রাখতে চাই।”
কিন্তু বৃদ্ধের কাছে কী ভাবে এল ওই টুকরোগুলো?
ম্যানিংয়ের কথায়, ওই বৃদ্ধ তাঁকে জানিয়েছিলেন, সিঁড়ির টুকরোটা প্রপিতামহের কাছ থেকে তিনি পেয়েছিলেন। তাঁর প্রপিতামহ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে এক নাবিকের কাছ থেকে ওই টুকরোটা পান ওই নাবিক টাইটানিক ডুবে যাওয়ার পরে তার উদ্ধারকাজে গিয়েছিলেন। ছোটবেলায় প্রপিতামহের কাছ থেকে টাইটানিকের সিঁড়ির অংশ উপহার পাওয়ার পর থেকেই টাইটানিকের প্রতি আগ্রহ বাড়তে থাকে ওই বৃদ্ধের। তিনি ম্যানিংকে জানিয়েছেন, আশির দশকে জর্জ তুলক সমুদ্রের গভীর থেকে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ তোলার সিদ্ধান্ত নিলে তিনি তুলকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তুলক পরে তাঁকে জাহাজের সামনের অংশের ওই ধাতুর টুকরোটা উপহার দেন। ম্যানিংকে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের টুকরোর পাশাপাশি তুলকের দেওয়া চিঠিও দিয়েছেন ওই বৃদ্ধ।
তিনি জানিয়েছেন, এত মূল্যবান জিনিস বাড়িতে রাখা ভয়ের বিষয়। যে কোনও মুহূর্তে চুরি হয়ে যেতে পারে। তা ছাড়া সাধারণ মানুষ নিজের চোখে নিদর্শনগুলো দেখুক এটাও চান তিনি। আর সেই কারণেই নাকি ম্যানিংকে নিদর্শনগুলো দিয়ে ঝাড়া হাত-পা হয়ে যেতে চাইছিলেন ওই বৃদ্ধ। |