এত দিন ফোনে চুরির অভিযোগ পেতে অভ্যস্ত ছিলেন কলকাতা পুলিশের ইনস্পেক্টর প্রবীর বারিক। বন্দর এলাকার একাধিক থানায় দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। এখন রয়েছেন সিকিউরিটি কন্ট্রোলে। কিন্তু বুধবার সন্ধ্যায় ফোনে একটা চুরির খবর শুনে হকচকিয়ে গিয়েছিলেন প্রবীরবাবু।
কারণ, এ বার ফোন করে চুরির কথা বলছে তাঁর ছেলে। চোর হানা দিয়েছে খোদ প্রবীরবাবুর ফ্ল্যাটেই। নিয়ে গিয়েছে একটি ল্যাপটপ ও চার-চারটি মোবাইল। প্রবীরবাবুর ফ্ল্যাটটি আবার পুলিশ আবাসনের ভিতরে। যে আবাসনের পাহারার দায়িত্বে রয়েছেন দু’জন কেয়ারটেকারও।
এ যেন বাঘের ঘরেই ঘোঘের হানা! পুলিশের ঘরের জিনিসপত্র হাতিয়ে দিব্যি চম্পট দিয়েছে চোর।
কী ভাবে চুরি হল পুলিশের ঘরে? পুলিশ জানায়, বুধবার সকাল ১০টা নাগাদ পাটুলি থানা এলাকার নেতাজিনগর পুলিশ আবাসনের ফ্ল্যাটে তালা দিয়ে বেরিয়েছিলেন প্রবীরবাবু। ওই ফ্ল্যাটে থাকেন বিপত্নীক প্রবীরবাবু ও তাঁর ছেলে সঙ্কেত। সঙ্কেত একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া। প্রতিদিন সকাল আটটা নাগাদ বেরিয়ে যান তিনি। বাবা ও ছেলের কাছে দু’টি চাবি থাকে।
বুধবার সন্ধ্যায় ফ্ল্যাটের চাবি খুলতে গিয়ে সঙ্কেত দেখেন, দরজায় তালা নেই। দরজা ভেজানো। প্রথমে সঙ্কেত ভেবেছিলেন, বাবা বোধহয় আগেই বাড়ি ফিরেছেন। কিন্তু ফ্ল্যাটে ঢুকে তিনি দেখতে পান, আলমারি খোলা। জিনিসপত্র মাটিতে ছড়িয়ে রয়েছে। বিছানাও লন্ডভন্ড। পাশের ঘরে থাকা ল্যাপটপটিও উধাও। |
প্রবীরবাবু জানান, আলমারির লকারে হাজার বিশেক টাকা ও গয়না ছিল। কিন্তু ওই লকারটি চোরেরা খুলতে পারেনি। বুধবার রাতেই পাটুলি থানায় অভিযোগ জানান প্রবীরবাবু।
পুলিশ জানিয়েছে, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু রোড লাগোয়া ওই পুলিশ আবাসনে ১৩টি ব্লক। প্রতিটি ব্লকে রয়েছে আটটি করে ফ্ল্যাট। ই-ব্লকের একটি ফ্ল্যাটের তিনতলায় প্রায় ২৩ বছর ধরে রয়েছেন প্রবীরবাবু। বছরখানেক আগে তাঁর স্ত্রী মারা গিয়েছেন।
প্রবীরবাবুর বাড়িতে চুরির ঘটনার পরে হতভম্ব হয়ে পড়েছে ওই আবাসনের বাসিন্দা পুলিশকর্মীদের পরিবারগুলিও। ওই আবাসনে আগে কোনওদিন এ রকম ঘটনা ঘটেনি বলে তাঁরা জানিয়েছেন। ১৩টি ব্লকের নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন দু’জন কেয়ারটেকার। তাঁদের চোখ এড়িয়ে কী করে দরজার তালা ভেঙে চুরি হল, বুঝে উঠতে পারছেন না কেউই। উত্তর কলকাতা এলাকার এক থানার ও সি-র স্ত্রী এ দিন বলেন, “আমাদের ফ্ল্যাটেও যে চুরি হতে পারে, তা কোনও দিন মাথাতেই আসেনি। এই ঘটনার পরে রীতিমতো চমকে গিয়েছি। খোদ পুলিশের ফ্ল্যাটেই চুরি হচ্ছে— এ কথা আত্মীয়স্বজনদের বলতেও পারছি না।” |