ফের আফগানিস্তানে ফিরে যাচ্ছেন, আপনার ভয় করছে না?
আবাসনের বাসিন্দাদের এই প্রশ্নের জবাবে সুস্মিতা বলেছিলেন, ভয়ের কী আছে? যা হবে দেখা যাবে।
সুস্মিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা উঠলে এ রকম এক ডাকাবুকো মহিলার কথা মনে পড়ে তাঁর প্রতিবেশীদের। দমদমের শ্যামনগরের ওই আবাসনে পাঁচতলার একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতেন ‘কাবুলিওয়ালার বাঙালি বৌ’। আবাসনের ৩০ নম্বর ব্লকের ৫ বি ফ্ল্যাটটি এখন তালাবন্ধ। প্রতিবেশীরা জানালেন, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে এই ফ্ল্যাট ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন সুস্মিতা। সঙ্গে ছিলেন তাঁর বাবা। ওই ফ্ল্যাটে এখন অন্য ভাড়াটে থাকেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আততায়ীদের গুলিতে সুস্মিতার মৃত্যুর খবর আসার পর থেকেই তাঁর আবাসনের ফ্ল্যাটের সামনে জটলা করে দাঁড়িয়েছিলেন আশপাশের কয়েক জন বাসিন্দা। তাঁরা জানালেন, অন্য আবাসিকদের সঙ্গে খুব বেশি মিশতেন না সুস্মিতা। তবে দেখা হলে হেসে কুশল জিজ্ঞেস করতেন। তাঁর সঙ্গে ওই বাড়িতে তাঁর স্বামী এবং বাবা থাকলেও বাজারহাট দোকানপাট নিজেই করতেন। এক আবাসিক বলেন, “বহুদিন দেখেছি, বাজারহাট করে জিনিসপত্র নিয়ে একাই রিকশা করে ফিরছেন উনি।” |
নানা প্রয়োজনে সুস্মিতার সঙ্গে কথা হত ওই আবাসনের কেয়ারটেকার রাজু সাহার। আবাসনের সামনে দাঁড়িয়ে রাজু এ দিন বললেন, “আমাকে আর আমার কয়েক জন বন্ধুকে উনি ওনার লেখা ‘কাবুলিওয়ালার বাঙালি বউ’ বইটা দিয়েছিলেন। পড়ে তো আমি অবাক। আফগানিস্তানের সমাজের সঙ্গে আমাদের সমাজের কত তফাত, তা ওঁর লেখা পড়ে বুঝতে পেরেছি। কী অসম্ভব সাহসী ছিলেন উনি!” রাজু জানালেন, উপহার দেওয়ার কিছুদিন পরেই সুস্মিতা জিজ্ঞেস করেন তিনি বইটি পড়েছেন কি না। “হ্যাঁ বলার পরে যখন গল্পটা নিয়ে খুঁটিনাটি জিজ্ঞেস করতে থাকি, তখন উনি অসম্ভব খুশি হয়েছিলেন,” বলছিলেন তিনি।
আবাসনের আর এক বাসিন্দা সমর বিশ্বাস বলেন, “বইটা পড়ে ওঁর প্রতি শ্রদ্ধা বেড়ে গিয়েছিল। উনি একটু কম কথা বলতেন। তবে শরীরচর্চা করতে নিয়মিত আমাদের আবাসনের জিমে যেতেন। আবাসনের ক্লাবেও যেতেন।” |
সাধারণ ভাবে কম কথা বললেও যে কয়েক জন আবাসিকের সঙ্গে নিয়মিত কথা হত, তাঁরাই জানালেন কোনও কিছুতেই দমে যাওয়ার পাত্রী ছিলেন না সুস্মিতা। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে তিনি যখন চলে যান, তার মাসখানেক আগে থেকেই তাঁর ফ্ল্যাটে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে কিছু সমস্যা হচ্ছিল। ফলে তাঁর ফ্ল্যাটে বিদ্যুৎ-সংযোগ কেটে যায়। রাজু বলেন, “মোমবাতি জ্বালিয়েই উনি রাতের পর রাত কাটিয়েছেন। ফ্ল্যাটে ওঁর স্বামী এবং বাবা থাকলেও শেষের দিকে স্বামী চলে গিয়েছিলেন। অনেক সময়ে ফ্ল্যাটে একাই থাকতেন উনি।”
সুস্মিতার ঠিক পাশের ফ্ল্যাটেই থাকেন বিপ্লব দত্ত। তাঁরা অবশ্য সুস্মিতার খুন হওয়ার খবর জানতেন না। রাতে খবরটা জানার পরে রীতিমতো বিস্মিত বিপ্লববাবু ও তাঁর পুত্রবধু রুষা। পেশায় স্কুলশিক্ষিকা রুষা বলেন, “আমরাও এখানে নতুন। যে ক’দিন আমাদের প্রতিবেশী হিসেবে ছিলেন, খুব বেশি কথা হয়নি।” তবে জানালেন, যেটুকু কথা হয়েছিল, তাতে মনে হয়েছিল ভীষণ সাহসী মহিলা ছিলেন সুস্মিতা। যে কোনও বিষয়েই তাঁর মতামত ছিল স্পষ্ট। অসমসাহসী সুস্মিতার এমন মৃত্যুতে তাই হতবাক পড়শিরাও। |