জল বাড়ছেই মালদহ জেলার ফুলহারে। শুক্রবারও অসংরক্ষিত এলাকায় বিপদসীমার ৪৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছে ফুলহার নদী। দুদিন বাদেও খোঁজ মেলেনি ফুলহারের জলে ডিঙি উল্টে নিখোঁজ যুবক বেদান্ত মন্ডলেরও। গত বুধবার ডিঙিতে চেপে আসবাবপত্র নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার সময় ডিঙি উল্টে ফুলহারে তিনি তলিয়ে যান। জলস্তর না কমায় মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর ও রতুয়ার বিস্তীর্ণ এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। রতুয়ায় দুর্গতদের মধ্যে ত্রাণের ত্রিপল বিলি করার কাজ শুরু হলেও হরিশ্চন্দ্রপুরে ত্রাণ বিলি করা হয়নি বলে অভিযোগ তুলেছেন হরিশ্চন্দ্রপুরের বিধায়ক তজমুল হোসেন। বিধায়ক বলেন, “প্রশাসনকে বলেও লাভ হচ্ছে না। ত্রাণ না পেয়ে দুর্গতরা বিপাকে পড়েছেন। খাদ্যাভাবে প্রতিদিনই গবাদি পশু মারা যাচ্ছে। ব্যবস্থা করা হয়নি নৌকারও।”
সেচ দফতর জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ফুলহারের উচ্চতা ছিল ২৭.৯২ সেন্টিমিটার। যা অসংরক্ষিত এলাকায় লাল সীমা ও সংরক্ষিত এলাকায় হলুদ সীমার থেকে ৪৯ সেন্টিমিটার বেশি। গত ২৪ ঘন্টায় ফুলহারের জল ৯ সেন্টিমিটার বেড়েছে। সেচ দফতরের নির্বাহী বাস্তুকার (মহানন্দা) সুজিত কুমার বসু বলেন, “আমরা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছি। নদীর জল কমেনি।”
গত দেড়মাস আগে ফুলহারের জলে প্লাবিত হয় হরিশ্চন্দ্রপুর-২ ব্লকের ইসলামপুর এবং দৌলতনগর। এ ছাড়া রতুয়া-১ ব্লকের বিলাইমারি ও মহানন্দটোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরাট এলাকা। জল সামান্য কমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আগেই এলাকাগুলি ফের প্লাবিত হয়ে পড়ে। টানা দেড়মাস ধরে দুর্ভোগে এলাকাগুলির বাসিন্দারা। সঙ্গে বেশ কিছু এলাকায় চলছে নদী ভাঙনও। প্রশাসনের হিসাবেই রতুয়ায় বিপন্ন হয়েছেন ৫৬ হাজার বাসিন্দা।
এখনও গঙ্গার জলস্তর চরমবিপদ সীমার ৬৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছে। এতে মানিকচক, কালিয়াচক ২ ও ৩, রতুয়া ১ এলাকায় লাল সতর্কতা জারি রয়েছে। গঙ্গার জলস্তর না বাড়লেও জেলার চারটি ব্লকে ৯০ টি গ্রামে বন্যার অবনতি হয়েছে। রতুয়ার কংগ্রেস বিধায়ক সমর মুখোপাধ্যায় এদিন জেলাশাসকের সঙ্গে দেখা করে বন্যা কবলিত এলাকায় ত্রাণ পাঠানোর অনুরোধ করেছেন। বিধায়ক বলেন, “মহানন্দাটোলা, বিলাইমারি জলের তলায়। এলাকার মানুষ গাছে মাঁচা করে কেউবা বাড়ির ছাদে আশ্রয় নিয়েছে। আটদিন ধরে দুইটি পঞ্চায়েতের ৫০ হাজারের বেশি মানুষ জলবন্দি হয় রয়েছে। এখনও ত্রাণের ব্যবস্থা নেই।”
সেচ দফতরেরে নির্বাহী বাস্তুকার (গঙ্গা) অমরেশ কুমার সিংহ বলেন, “গঙ্গার জল বাড়েনি। আজ, শনিবার বিকাল থেকে গঙ্গার জল কমার সম্ভাবনা রয়েছে।” মালদহের জেলাশাসক গোদালা কিরণকুমার বলেন, “ত্রান বিলি করার কাজ শুরু হয়েছে। সব জায়গায় প্রকৃত দুর্গতদের প্রত্যেককেই ত্রাণ দেওয়া হবে। যেখান যেখান থেকে অভিযোগ আসছে, সেখানেই তদন্তের জন্য অফিসারদের পাঠানো হচ্ছে।”
অন্যদিকে, জলপাইগুড়ি জেলার কুমারগ্রাম ও আলিপুরদুয়ার ২ ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকায় সংকোশ, রায়ডাক, জয়ন্তি ও ধারসি নদীর ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে ভলকা, পশ্চিম চ্যাংমারি ও পূর্ব চকচকা, শামুকতলা মহাকালগুড়ি তুরতুরি টটপাড়া এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ভাঙন ব্যাপক আকার নিয়েছে ভলকা মৌজার নিমাইপাড়া, ধন্দ্রাপাড়া ও রিটার্নপাড়া এলাকায়। অন্তত ১০০টি পরিবার ভাঙনের আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। দু’বছর আগে ভাঙনে সর্বস্ব হারিয়ে ১৫টি পরিবার অন্যত্র সরে আসে। কিন্তু পরিবারগুলি ফের ভাঙ্গনের মুখে পড়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তাঁরা।
আলিপুরদুয়ার ২ ব্লকের বানিয়াডাবরি পুখুরিয়া বানিয়াগাঁও এলাকায় জয়ন্তী নদীর বাঁধ ভেঙে জল ঢুকে প্রায় ৫০টি বাড়ি জলমগ্ন হয়েছে। কৃষি জমিও ব্যপক ক্ষতি হয়েছে। আলিপুরদুয়ার সেচ দফতরের বাস্তুকার অলকানন্দ রায় জানিয়েছেন, ভাঙন মোকাবিলায় দ্রুত প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে। |