আবার সেই বিধানচন্দ্র রায় (বি সি রায়) শিশু হাসপাতাল। আবার পরপর শিশুমৃত্যুর অভিযোগ। স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৩ সেপ্টেম্বর, মঙ্গলবার থেকে ৬ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার রাত পর্যন্ত ৩২টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। পরিস্থিতি সামলাতে অন্যান্য হাসপাতাল থেকে ডাক্তারদের ওই হাসপাতালে নিয়ে আসা হচ্ছে। প্রত্যেক চিকিৎসক ও নার্স সকাল থেকে এসে সন্ধ্যা ৬টা-৭টা পর্যন্ত থাকছেন।
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের বিশেষ টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান ত্রিদিব বন্দ্যোপাধ্যায় শিশুমৃত্যুর কথা স্বীকার করে বলেন, “গত কয়েক দিনে এই হাসপাতালে একটু বেশি সংখ্যায় শিশু মারা গিয়েছে। সাধারণত এখানে দিনে ২-৩টি শিশু মারা যায়। সেখানে গত মঙ্গলবার ৮টি, বুধবার ৮টি, বৃহস্পতিবার ১০টি এবং শুক্রবার রাত আটটা পর্যন্ত ৬টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে।”
তবে হাসপাতালের গাফিলতি মানতে রাজি নন ত্রিদিববাবু। তিনি বলেন, “ওই শিশুদের অনেককেই মরণাপন্ন অবস্থায় জেলা থেকে রেফার করা হয়েছিল। অনেকের ওজন ছিল ভীষণ কম। বাঁচানো এক রকম অসম্ভব ছিল।”
কিন্তু সব শিশুই কি অত্যাধিক কম ওজনের ছিল? সুপার দিলীপকুমার পাল বলেন, “সব শিশু কম ওজনের ছিল না। অধিকাংশই শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, হৃদ্রোগ, যকৃতের রোগ নিয়ে ভর্তি হয়েছিল।”
তা হলে তাদের কেন বাঁচানো গেল না? চিকিৎসকদের একাংশের অভিযোগ, “হাসপাতালে ব্লাডব্যাঙ্ক চালু হয়নি। মানিকতলা ব্লাডব্যাঙ্ক থেকে রক্ত আনতে সময় লাগছে। নতুন অর্ডার দিয়ে বেশ কিছু ওয়ার্মার কেনা হয়েছে। সেগুলির মান ভাল নয়। তাতে শিশুকে রাখলে সে যথেষ্ট উত্তাপ পাচ্ছে না। স্যালাইন দেওয়ার ইনফিউশন পাম্পও একটার পর একটা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। ভাল পরিষেবা কী করে দেওয়া যাবে?”
ত্রিদিববাবু অবশ্য দাবি করেন, “বি সি রায় হল রাজ্যে শিশুদের একমাত্র রেফারাল হাসপাতাল। ফলে শিশুর অবস্থা অতিরিক্ত খারাপ হলেই বিভিন্ন হাসপাতাল এখানে পাঠায়। আমরা প্রত্যাখ্যান করতে পারি না। আমরা ভর্তি না নিলে তারা রাস্তাতেই মারা যাবে। ডেথ সার্টিফিকেট পেতে পরিবারের অসুবিধা হবে। আমরা ভর্তি নিই বলেই এক-এক সময়ে এই হাসপাতালে শিশুমৃত্যু বেড়ে যায়। একে ক্লাস্টার এফেক্ট বলে।”
হাসপাতালের অধ্যক্ষা মালা ভট্টাচার্য আবার দাবি করেন, প্রতি বছরই বর্ষায় বিভিন্ন রোগের প্রকোপ দেখা দেওয়ায় সেপ্টেম্বর মাসে শিশুমৃত্যু বাড়ে। তবে এই হাসপাতালে সিক নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট-সহ ১৯৫টি বিশেষ শয্যা রয়েছে। সেখানে অত্যাধুনিক চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে চিকিৎসকদের একাংশের অভিযোগ, “প্রতিদিন অবস্থা সামলানোর নামে কিছু ডাক্তার ঘণ্টার পর ঘণ্টা আলোচনা করে সময় নষ্ট করছেন। এতে রোগী পরিষেবা ধাক্কা খাচ্ছে।” |