জঞ্জালে রোগ বাড়ছে শহরে
ডাম্পিং গ্রাউন্ডের দূষণ থেকে এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে শ্বাসকষ্ট এবং ফুসফুসের রোগ সংক্রমণ ছড়াচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পুরসভার ৪২ নম্বর ওয়ার্ডে থাকা ওই ডাম্পিং গ্রাউন্ড লাগোয়া এলাকায় সমীক্ষা চালিয়ে ওই ব্যাপারে স্পষ্ট তথ্যও মিলেছে বলে একটি সমীক্ষক দলের দাবি। সম্প্রতি এলাকার এক কলেজ এবং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার যৌথ উদ্যোগে সমীক্ষা হয়। সমীক্ষক দলে ছিলেন ইন্ডিয়ান স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের উত্তরবঙ্গের মুখ্য সংযোজক এ সাঁতরা, বিশেষজ্ঞ দীপক কুমার দাশগুপ্ত। তাঁরা জানান, ডাম্পিং গ্রাউন্ডে বিজ্ঞানসম্মত ভাবে আবর্জনা না ফেলার জন্য বায়ূ দূষণ থেকেই ওই রোগ সংক্রমণ হচ্ছে। সমীক্ষা রিপোর্টে তা জানানো হয়েছে। শ্বাসকষ্টজনিত রোগ, হাঁপানি কিংবা ফুসফুসের সংক্রমণের পাশাপাশি অল্প পরিমাণে হলেও বাসিন্দাদের মধ্যে চর্ম রোগ হতেও দেখা যাচ্ছে। উদ্যোক্তারা বিষয়টি উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর এবং পুর কর্তৃপক্ষকেও জানিয়েছেন। সমস্যা মেটাতে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে ডাম্পিং গ্রাউন্ডে আবর্জনা ফেলার ব্যবস্থা করা উচিত বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব এ ব্যাপারে বিস্তারিত খোঁজ নেবেন বলে জানিয়েছেন। এলাকার দূষণ পরিস্থিতি নিয়ে সরব বাসিন্দারা। সচেতনতা জাগরণ কমিটি নামে এক সংগঠন গড়ে বিজ্ঞানসম্মত ভাবে ময়লা না ফেলার বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরাও।
সমীক্ষক দলের সদস্য ইন্ডিয়ান স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনের উত্তর বঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্তদের অন্যতম দীপকবাবু জানান, ডাম্পিং গ্রাউন্ডের জন্যই বায়ূ দূষণ ঘটছে। অক্সিজেনের পরিমাণ যেখানে ন্যূনতম ৬৫-৭৫ শতাংশ থাকা উচিত, সেখানে ডাম্পিং গ্রাউন্ড এবং লাগোয়া এলাকার বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ ৫৫ শতাংশ। কার্বন মোনো অক্সাইডের পরিমাণ বেড়েছে। তা থেকে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানির মতো রোগ ছড়াচ্ছে। তিনি বলেন, “সমস্যা মেটাতে ব্যবস্থা না-নেওয়া হলে গর্ভবতীদের মাধ্যমে সন্তানরা একই অসুখে ভুগতে পারেন। ডাম্পিং গ্রাউন্ডে আবর্জনা ফেলার কাজ বিজ্ঞানসম্মত ভাবে না হওয়াতেই রোগ সংক্রমণ ছড়াচ্ছে।”
পুর ভাগাড়। —নিজস্ব চিত্র
ডাম্পিং গ্রাউন্ডের দূষণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে পুর কর্তৃপক্ষ গড়িমসি করছেন বলে বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। পুরসভার মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত বলেছেন, “ডাম্পিং গ্রাউন্ডের সমস্যার বিষয়টি মেটাতে আমরাও সচেষ্ট। ইতিমধ্যেই ডাম্পিং গ্রাউন্ডে পাঁচিল তৈরি করা হয়েছে। পাঁচিলের ধারে গাছ লাগানোর পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে।” পাশাপাশি বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ করে সার তৈরির চেষ্টা চলছে। তা বড় আকারে করার বা বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ তৈরির পরিকল্পনা নিয়েও ভাবনা চিন্তা অনেক দূর এগিয়েছে বলে তিনি জানান। তবে সে সমস্ত পরিকল্পনা কবে বাস্তবায়িত হবে তা নিয়েই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন সচেতনতা জাগরণ কমিটির সদস্যরা।
ডাম্পিং গ্রাউন্ড লাগোয়া এলাকার কাছে থাকা সেলিসিয়াস কলেজ এবং বি সি পি এস স্কুল ফর নর্থ ইস্টার্ন ইকনমিক ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির পক্ষে যৌথ ভাবে একটি সমীক্ষা করা হয়েছে। উদ্যোক্তারই জানিয়েছে, গত নভেম্বর মাসে ওই কাজে সমীক্ষক দল এলাকা পরিদর্শন করেন। উদ্যোক্তাদের অন্যতম বিজন চক্রবর্তী জানান, ডাম্পিং গ্রাউন্ডের আশেপাশে ৩ কিলোমিটার পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি বাড়ি ঘুরে তারা সমীক্ষা করেছেন। জ্যোতিনগর এলাকা, ৩৮, ৩৯, ৪০, ৪১ ওয়ার্ডে তারা গিয়েছেন। বিশেষ করে বস্তি এলাকাগুলি ঘুরে ১০০ জন বাসিন্দার সঙ্গে তারা কথা বলে তথ্য নথিভুক্ত করেছেন। যার মধ্যে তাদের পরিবারের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি, কার কী রোগ রয়েছে, বিশেষ করে কেউ ফুসফুসের অসুখে বা শ্বাসকষ্ট ডনিত রোগে ভুগছেন কি না তা জানা হয়েছে। রোগ সংক্রমণের কথা কেউ জানালে তাঁরা চিকিৎসকদের দেখাচ্ছেন কি না। দেখালে তার নথি পরীক্ষা করেছেন। চিকিৎসা করিয়ে কেউ সুস্থ হয়ে থাকলে তাও নথিভুক্ত করা হয়েছে। এলাকার বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইড, কার্বন মোনো অক্সাইড, অক্সিজেনের পরিমাণ নেওয়া হয়েছে। এ সব বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করার পরই তা থেকে রিপোর্ট তৈরি করেছেন সমীক্ষকরা। এলাকার প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষই শ্বাসকষ্ট জনিত অসুখে এবং ফুসফুসের রোগে ভুগছেন বলে ওই দলের সমীক্ষকেরা দাবি করেছেন।

সমীক্ষা-রিপোর্ট
• বিজ্ঞানসম্মত ভাবে আবর্জনা না ফেলার কারণেই বায়ু-দূষণ হচ্ছে।
• অক্সিজেনের পরিমাণ যেখানে ৬৫ থেকে ৭৫ শতাংশ থাকা উচিত সেখানে এই এলাকার বাতাসে ৫৫ শতাংশ অক্সিজেন রয়েছে। বেড়ে গিয়েছে কার্বন মনো অক্সাইড।
• ভাগাড় সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসের সংক্রমণ ও ত্বকের নানা রোগে ভুগছেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.