রাজ্যে এইচআইভি আক্রান্তদের জন্য সমস্ত ড্রপ-ইন সেন্টার (ডিআইসিএস) জুলাই মাস থেকে বন্ধ করে দিয়েছে ‘জাতীয় এডস নিয়ন্ত্রণ সংস্থা’(ন্যাকো)।
কলকাতা, বর্ধমান, দার্জিলিং, পুরুলিয়া, জলপাইগুড়ি, পূর্বমেদিনীপুর, উত্তর দিনাজপুর ও মুর্শিদাবাদের মতো যে জেলাগুলিতে এইচআইভি আক্রান্তের হার বেশি ছিল সেখানেই ন্যাকো-র এই কেন্দ্রগুলি ছিল। এর পাশাপাশি ‘রাজ্য এডস নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থা’ বা ‘স্যাক্স’ বাকি জেলাগুলিতে এই কেন্দ্র চালাতো। গত ৪ জুলাই চিঠি পাঠিয়ে ন্যাকো তাদের সেন্টারগুলো বন্ধ করার সিদ্ধান্ত জানানোর পরে স্যাক্সও বাদবাকি জেলায় তাদের সেন্টারগুলি বন্ধ করেছে। স্যাক্সের কর্তাদের কথায়, “ন্যাকো ডিআইসিএস না চালালে আর আমরা চালাই কী করে?” এর ফলে এইচআইভি আক্রান্ত মানুষেরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
কেন এই দুর্ভোগ?
স্যাক্স সূত্রের খবর, ডিআইসিএস-গুলি চালানোর ভার ছিল বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও এইচআইভি আক্রান্তদের সংগঠনের উপর। এর জন্য ন্যাকো থেকে তারা টাকা পেত। এই কেন্দ্রে এইচআইভি নিয়ে প্রচার, চিকিৎসা সংক্রান্ত তথ্য জানানো, কন্ডোম বিলি, আক্রান্তদের কাউন্সেলিং, বৈষম্যমূলক ধারণা দূর করা, আক্রান্তদের পুষ্টিকর খাদ্যের ব্যবস্থা, সেমিনার-ওয়ার্কশপের আয়োজনের মতো কাজ করা হত। স্যাক্সের টার্গেটেড ইন্টারভেনশন-এর দায়িত্বে থাকা যুগ্ম অধিকর্তা দীপ্তেন্দ্র গোস্বামীর কথায়, “ন্যাকো জানিয়েছে এর বদলে ৫টি জেলায় নতুন ‘কেয়ার সাপোর্ট’ কর্মসূচি দ্রুত চালু হবে। অন্য জেলাগুলিতে শুরু হবে হেল্প ডেস্ক। আশা করা হচ্ছে তাতে সমস্যা মিটবে। তবে অনেক এইচআইভি-আক্রান্ত মানুষ এই ডিআইসিএসগুলিতে কাজ করে রোজগার করতেন। তাঁরা অসুবিধায় পড়েছেন।”
পূর্বাঞ্চলে এইচআইভি সেন্টিলেন সার্ভিল্যান্স-এর দায়িত্বে থাকা এম কে সাহা-র কথায়, “ন্যাকো তথ্যপ্রমাণ ঘেঁটে দেখেছে, এতদিন এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলি যা পরিসংখ্যান দিয়েছে তার অনেকটাই জলমেশানো। বেশি টাকা পেতে তারা যত আক্রান্তকে পরিষেবা দিয়েছে তার থেকে অনেক বেশি দেখিয়েছে। তাই ন্যাকো তাদের একেবারে ছেঁটে বাদ দিয়েছে। ডিআইসিএস প্রকল্পটাই বন্ধ করা হয়েছে। এতে আর্থিক নয়ছয় বন্ধ হবে।”
বর্ধমানের ডিআইসি দেখার ভার ছিল ‘সোসাইটি অব পিপল লিভিং উইথ এইআইভি-এডস’-এর। তার সম্পাদক পরিমল দে ন্যাকোর অর্থ সাহায্য বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখেছেন। এই চিঠির প্রতিলিপি দেওয়া হয়েছে রাজ্য ও জেলা স্বাস্থ্যদফতরের আধিকারিকদের, জেলাশাসক ও অতিরিক্ত জেলাশাসকদের। এই চিঠিতে তিনি জানিয়েছেন, বর্ধমান এডস সংক্রমণের দিক থেকে অতি স্পর্শকাতর জেলাগুলির অন্যতম। ন্যাকোর ওই সাহায্য না পেলে তাঁদের পক্ষে এডস আক্রান্তদের পাশে দাঁড়ানো সম্ভব হবে না।
ন্যাকোর ওই অর্থ দিয়ে ডিআইসিগুলি কী পরিষেবা দিত?
একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জানিয়েছে, ন্যাকোর অর্থ দিয়ে ডিআইসিএস-এর তরফে তারা আক্রান্তের বাড়ি বা পাড়ায় বা গ্রামে সচেতনতা বৈঠক করত। পরিবার বা স্থানীয় বাসিন্দাদের রোগীর অধিকার সম্পর্কে বোঝাত। আক্রান্তকে সম্পত্তি বা পারিবারিক অন্যান্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হলে আইনি সহায়তাও দিত। এই টাকা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁদের পক্ষে ওই পরিষেবাগুলিও আর দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। |