স্নাতকোত্তর মেডিক্যাল পড়তে ইচ্ছুক ছাত্রছাত্রীদের পাশে দাঁড়াতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার। তাই রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের আওতায় এমডি-এমএসের সমতুল একটি পাঠ্যক্রম খুলতে চেয়ে মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া বা এমসিআইয়ের কাছে প্রস্তাব পাঠাচ্ছে স্বাস্থ্য দফতর। এমবিবিএস করার পরেও যাঁরা নানা কারণে এমডি বা এমএস পড়তে পারছেন না অথবা স্নাতকোত্তরে ভর্তি হয়েও যাঁরা সমস্যায় পড়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে মুশকিল আসানের ভূমিকা নেওয়াই সরকারের উদ্দেশ্য।
স্নাতকোত্তর স্তরে পঠনপাঠন চালাতে ইচ্ছুক কিছু মেডিক্যাল পড়ুয়া সম্প্রতি সমস্যায় পড়ায় সরকার এই ধরনের পাঠ্যক্রমের ব্যাপারে চিন্তাবাবনা শুরু করে। কলকাতা হাইকোর্ট ওই এমডি, এমএস পড়ুয়াদের ভর্তি অবৈধ বলে রায় দিয়েছিল। পড়ুয়ারা তার পরে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। কিন্তু শীর্ষ আদালতও তাঁদের আর্জি খারিজ করে দেওয়ায় অগাধ জলে পড়ে যান ১৫৯ জন চিকিৎসক। তাঁদের মধ্যে আবার সব চেয়ে বেশি অসুবিধা হয়েছিল ৩৮ জনের। তাঁরা কোনও ভাবেই আর মেডিক্যালে স্নাতকোত্তর পড়ার সুযোগ পাননি। বিশেষত তাঁদের কথা ভেবেই এমসিআইয়ের কাছে নতুন পাঠ্যক্রমের প্রস্তাব পাঠানোর কথা ভেবেছে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর। সেটা চালু হলে অবশ্য ওই পড়ুয়াদের সঙ্গে সঙ্গে ফি-বছর আরও অনেক মেডিক্যাল ছাত্রছাত্রীর জন্য স্নাতকোত্তর স্তরের দরজা খুলে যাবে।
কী থাকছে ওই প্রস্তাবে?
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের অধীনেই খোলা হবে এমডি-এমএসের সমতুল পাঠ্যক্রম। যৌথ ভাবে সেটি তৈরি করবে রাজ্য স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল। স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ই পরীক্ষা নেবে ও শংসাপত্র দেবে। কয়েক বছর আগে বম্বে হাইকোর্ট মহারাষ্ট্রের মেডিক্যাল কাউন্সিলের পক্ষে এই ধরনেরই একটি রায় দিয়েছিল। সেই রায়ের উল্লেখ করে রাজ্য সরকারের প্রস্তাবে বলা হচ্ছে, প্রায় ৮৫টি আসনে ভর্তির ছাত্রছাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। এ দিকে রাজ্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের বড়ই অভাব। এই অবস্থায় রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের পরিচালনায় স্নাতকোত্তর পাঠ্যক্রম চালু হলে অনেক বিশেষজ্ঞ ডাক্তার পাওয়া যাবে। যে ৩৮ জন পড়ুয়া কোথাও ভর্তি হতে পারছেন না, সুযোগ পাবেন তাঁরাও।
এই সমস্যার সূত্রপাত অনেক আগে। গ্রামে কাজ করার জন্য চিকিৎসকদের উৎসাহ দিতে রাজ্য সরকার ঘোষণা করেছিল, ‘প্রত্যন্ত ও পিছিয়ে পড়া’ এলাকায় কাজ করলে মেডিক্যালের স্নাতকোত্তর পাঠ্যক্রমে ভর্তির ক্ষেত্রে বাড়তি ৩০ নম্বর দেওয়া হবে। কিন্তু গোল বাধে ‘প্রত্যন্ত ও পিছিয়ে পড়া’ এলাকা বাছাই নিয়ে। ওই সব এলাকার সরকারি তালিকা প্রকাশের পরে দেখা যায়, তাতে নানা অনিয়ম রয়েছে। তার প্রতিকার চেয়ে মামলার পর মামলা হয়। স্নাতকোত্তরে ভর্তির প্রক্রিয়া থমকে থাকে।
তার পরে হাইকোর্টের একটি নির্দেশেই গত মার্চে ৬৯ জন নতুন পড়ুয়া স্নাতকোত্তরে ভর্তি হন এবং আগে ভর্তি হওয়া ৯০ জন পড়ুয়া তাঁদের বিষয় পরিবর্তন করেন। কিন্তু তার পরিপ্রেক্ষিতে ফের মামলা হয়। শেষ পর্যন্ত কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী ভর্তির প্রক্রিয়া ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। এ ক্ষেত্রে ২০১২-র পাঠ্যক্রমের জন্য পড়ুয়ারা ভর্তি হয়েছেন গত মার্চে। অর্থাৎ আট মাস পরে। সুতরাং ভর্তির ওই প্রক্রিয়াটাই বেআইনি। |