১৩ পৃষ্ঠার ‘সুইসাইড নোট’-এ আর্ট স্কুলের মধ্যে সেখানেই কর্মরতা তরুণী বধূকে যৌন হেনস্থার চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ওই বধূ আত্মঘাতী হওয়ার পরে তাঁর হাতে লেখা সেই ‘নোট’ হাতে পেলেও পুলিশ অভিযুক্ত আর্ট স্কুলের কর্ণধার সোমেশ ঘোষের বিরুদ্ধে কেন কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির ধারা প্রয়োগ করেনি তা নিয়ে মৃতার পরিবার ও শুভার্থীদের তরফে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। শুক্রবার শিলিগুড়িতে একটি সাংবাদিক বৈঠক ডেকে পুলিশের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন মৃতার স্বামী, দিদি ও শুভার্থীরা। তাঁদের অনেকেরই আশঙ্কা, আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলার সঙ্গে কর্মক্ষেত্রে যৌন হেনস্থার চেষ্টার ধারা প্রয়োগ না-করায় ভবিষ্যতে বিষয়টি লঘু হয়ে যেতে পারে।
পুলিশ সূত্রের খবর, ৩১ অগস্ট রাতে ওই তরুণী বধূ আত্মঘাতী হন। তাঁর ঘর থেকেই পুলিশ ‘সুইসাইড নোট’ উদ্ধার করে। পরে মৃতার পরিবারের তরফে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ দায়ের হয় সোমেশবাবুর বিরুদ্ধে। পুলিশ এখনও সোমেশবাবুকে ধরতে পারেনি। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার কারলিয়াপ্পন জয়রামনের দাবি, “যে হেতু ৩০৬ ধারায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা দায়ের হয়েছে, তাই আমরা অন্য কোনও ধারা প্রয়োগ করিনি। আগে যাই ঘটুক পরিণতি শেষ পর্যন্ত মৃত্যু হওয়ায় সেটিকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।” এ দিন শিলিগুড়ি থানায় অভিযুক্ত সোমেশ ঘোষের পরিবারের তরফে একটি সিডি জমা দেওয়া হয়। তাতে মৃতার সঙ্গে সোমেশবাবুর কথোপকথন রেকর্ড করা রয়েছে বলে বাড়ির লোকজনের দাবি। সোমেশবাবুর পরিবারের তরফে দাবি করা হয়েছে, ওই তরুণী বধূ যে আত্মঘাতী হবেন তা আগাম জানিয়েছিলেন।”
এই ঘটনায় প্রবীণ আইনজীবীদের অনেকে তো বটেই, সরকারি কৌঁসুলিরাও সরব হয়েছেন। আইনজীবীদের একাংশের মতে, ওই মহিলা আত্মঘাতী হলেও কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের যৌন হয়রানির ব্যাপারে যে আইন রয়েছে তা প্রয়োগ করা জরুরি। দার্জিলিং আদালতের সরকারি আইনজীবী বিনোদ অগ্রবাল বলেন, “একজন একটি মামলায় অভিযুক্ত হলে অন্য ধারা প্রয়োগ করা যাবে না এটা কোনও যুক্তি হতে পারে না।” পাশাপাশি, শিলিগুড়ি আদালতের সরকারি কৌঁসুলি সুদীপ বসুনিয়া বলেন, “অভিযোগ থাকলে একই ব্যক্তিকে একটি মামলায় ধরা হলেও পুলিশ একাধিক ধারা প্রয়োগ করতেই পারে।”
শিলিগুড়ি তথা উত্তরবঙ্গের প্রবীণ আইনজীবী মিলন সরকার মনে করেন, ঘটনা পরম্পরার ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য মামলায় একাধিক ধারার প্রয়োগ হতেই পারে। তাঁর মতে, “কী কারণে এক বধূ আত্মহত্যা করতে বাধ্য হলেন সেই প্রেক্ষাপটটা মামলা রাখা জরুরি। কর্মক্ষেত্রে যৌন হেনস্থার অভিযোগ থাকলে আমার তো মনে হয় সেই ধারা প্রয়োগ এ ক্ষেত্রে দরকার। না হলে যৌন হেনস্থার চেষ্টার পরিণতি কী হয়েছে সেটা প্রমাণিত হওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে যেতে পারে।” শিলিগুড়ি তথা উত্তরবঙ্গের আরেক প্রবীণ আইনজীবী মলয় চক্রবর্তীও মিলনবাবুর সঙ্গে সহমত। মলয়বাবু বলেন, “একাধিক অভিযোগ থাকলে সবক’টি বিষয়েও আলাদা ধারায় মামলা দায়ের করা যায়। কর্ম ক্ষেত্রে যৌন হেনস্থার অভিযোগ থাকলে সেই ধারা প্রয়োগ করা অবশ্যই দরকার।”
অন্যদিকে এদিন সাংবাদিক বৈঠকে বোনের উপরে অত্যাচারের কথা জানাতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁর দিদি। তিনি বলেন, “আমরা তো অত আইন বুঝি না। এখন শুনছি, পুলিশ কর্মক্ষেত্রে যৌন হেনস্থার চেষ্টার মামলা দায়ের করেনি। কেন এমন হল জানি না। তবে শিলিগুড়ি শহরের মানুষ আমাদের পাশে রয়েছেন। সকলকে নিয়ে সুবিচার চাইব।” |