অ্যাকশন!
টালিগঞ্জ পাড়ায় এই শব্দ উচ্চারণে কোনও টেনশন নেই। কিন্তু ইএম বাইপাস সংলগ্ন দক্ষিণ ও দক্ষিণ শহরতলির বিভিন্ন এলাকায় এ কথা বললেই তুঙ্গে উঠছে আতঙ্কের পারদ। বিশেষ করে পুলিশ মহলে! কেন?
কারণ সুঠাম চেহারা, কোঁকড়া চুল, শ্যামবর্ণ এক দাগী দুষ্কৃতীর নামও ঘটনাচক্রে ওই ‘অ্যাকশন’!
পুলিশের দাবি, ‘অ্যাকশন’ গারদে থাকলেই এলাকা শান্ত। চুরি-ছিনতাইয়ের অভিযোগের মাত্রা প্রায় অর্ধেক হয়ে যায় বলে কবুল করছেন ইএম বাইপাস সংলগ্ন কলকাতা ও রাজ্য পুলিশের বিভিন্ন থানার কর্তা। ওই সব এলাকায় চুরি-ছিনতাই বাড়লেই ‘অ্যাকশন’ ওরফে তপন দাসের খোঁজ শুরু হয়। বাইপাস সংলগ্ন একটি থানার অফিসার ইন-চার্জ বলেন, “মাস দুয়েক হল নানা এলাকায় চুরি-ছিনতাই আচমকা বেড়ে গিয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানলাম, কিছু দিন হল ‘অ্যাকশন’ জেল থেকে বেরিয়েছে। আমরা আবার ওর খোঁজ শুরু করেছি।”
ইএম বাইপাস সংলগ্ন কলকাতা পুলিশের বর্ধিত এলাকার তিলজলা, পাটুলি, সার্ভে পার্ক, কসবা, গড়ফা এবং রাজ্য পুলিশ এলাকার সোনারপুর-বারুইপুর এলাকায় সম্প্রতি চুরি-ছিনতাই বেড়েছে। অভিযোগ উঠেছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দুষ্কৃতীরা অধরা।
বর্ধিত এলাকায় রাজ্য পুলিশের থেকে কলকাতা পুলিশের পরিকাঠামো উন্নত। থানা এলাকার মাপ অনুযায়ী পুলিশকর্মী ও গাড়ির সংখ্যা অনেক বেশি। তা সত্ত্বেও চুরি-ছিনতাই ঠেকাতে হিমসিম অবস্থা। গত এক সপ্তাহে কলকাতা ও রাজ্য পুলিশ এলাকায় চুরি-ছিনতাইয়ের পাশাপাশি কয়েকটি বড় ডাকাতির ঘটনাও ঘটেছে। গত রবিবার তিলজলা থানার কালিকাপুর এলাকায় ভরসন্ধ্যায় এক বিজ্ঞানীকে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে বাড়িতে লুঠপাঠ চালিয়ে চম্পট দিয়েছে দুষ্কৃতীরা। মঙ্গলবার বারুইপুরে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা ছিনতাই করে চম্পট দেয় দুই মোটরসাইকেল আরোহী। বুধবার ভোরে সোনারপুর থানার রাজপুরে পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ও নির্মাণ ব্যবসায়ী অনির্বাণ ঘোষের বাড়িতে হামলা চালায় এক দল দুষ্কৃতী। অনির্বাণবাবুর পরিবারের সদস্যদের বেধড়ক মারধর করা হয়। মারের চোটে অনির্বাণবাবুর বাবা, মা ও স্ত্রী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর বাবা একটি চোখে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন। বুধবার সন্ধ্যায় পাটুলি থানা এলাকার নেতাজিনগর পুলিশ আবাসনে প্রবীর বারিক নাম এক পুলিশকর্মীর বাড়িতেও হানা দেয় দুষ্কৃতীরা। বাড়িতে সে সময় কেউ ছিলেন না। ভরসন্ধ্যায় কাজ সেরে চম্পট দেয় তারা।
ইএম বাইপাস সংলগ্ন কলকাতা পুলিশের পাঁচটি থানায় গত এক মাসে প্রায় ৪০টি চুরির ঘটনা ঘটেছে। ছিনতাইয়ের সংখ্যা ২০। ওই একই সময়ে সোনারপুরে চুরির ঘটনা ঘটেছে ৮টি এবং বারুইপুরে ১০টি। আচমকা চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় পুলিশকর্তাদের কপালে ভাঁজ পড়েছে। প্রাথমিক বিশ্লেষণের ভিত্তিতে তদন্তকারীরা জানান, চুরি-ছিনতাইয়ের সময় বদল করেছে দুষ্কৃতীরা। ভরসন্ধ্যায় অথবা সাত-সকাল কিংবা ভোরে অপারেশন শুরু করেছে তারা। কারণ ওই তিনটি সময়েই পুলিশি তল্লাশি শিথিল থাকে ও মানুষ একটু অসাবধান অবস্থায় থাকেন।
রাজ্য পুলিশের একটি থানার আইসি বলেন, “এখন পেশাদার দুষ্কৃতীদের পাশাপাশি নানা এলাকায় ছিনতাই ও চুরির ক্ষেত্রে নতুন মুখের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে। অধিকাংশ পেশাদার দাগী দুষ্কৃতী জেল থেকে বেরিয়ে নতুন মুখের দল তৈরি করে কাজ শুরু করেছে। সেক্ষেত্রে দুষ্কৃতীদের শনাক্ত করা মুশকিল হয়ে পড়েছে।”
মাস তিনেক আগে ‘অ্যাকশন’-কে গ্রেফতার করেছিল সার্ভে পার্ক থানার পুলিশ। একটি চুরির ঘটনায় মালপত্রও উদ্ধার হয়। অ্যাকশনের জেল হেফাজত হয়। জেল থেকে বেরিয়ে ফের পাটুলি এলাকায় আর একটি চুরির ঘটনায় ধরা পড়ে সে। ফের জেল। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “এই দাগী দুষ্কৃতীর বেশ কয়েকটি দল রয়েছে। তিন-চার জনের দল তৈরি করে নানা এলাকায় চুরি-ছিনতাই করে অ্যাকশন। তার আদি বাড়ি দক্ষিণ শহরতলির মহেশতলায়। কিন্তু শেষ বার বারুইপুর থানার পিয়ালি এলাকার একটি ভাড়া বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।” জানা গিয়েছে, ‘অ্যাকশন’ আবার জেল থেকে বেরিয়েছে। ফের এলাকায় চুরি-ছিনতাই বেড়েছে। হন্যে হয়ে অ্যাকশন-এর খোঁজ শুরু করেছে কলকাতা ও রাজ্য পুলিশ।
পুলিশের এক কর্তার হতাশ মন্তব্য: “আবার অ্যাকশন রিপ্লে!” |