লাগাতার বিতর্ক চলেছে। উচ্চ আদালত ভাতা ব্যবস্থা খারিজ করে দিয়েছে। তবে রাজ্য সরকার যে ইমাম ও মুয়েজ্জিনদের পাশে থাকছে, শুক্রবার তা পরিষ্কার করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর আশ্বাস, “সরকার যদি আধখানা রুটি খায়, তা হলে আপনাদেরও (ইমাম ও মুয়েজ্জিন) আধখানা রুটি দেবে।” তবে সরকার সব কিছুই আইন মেনে করবে বলে জানিয়ে দেন তিনি।
ইমাম-মুয়েজ্জিনদের ভাতা দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্তকে অসাংবিধানিক আখ্যা দিয়ে ওই ভাতার বন্দোবস্তটাই খারিজ করার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। তার পরে এই নিয়ে শুক্রবারেই প্রথম মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে ২ সেপ্টেম্বর আদালতের ওই রায়ের পরে মহাকরণ সূত্রে ইঙ্গিত মিলেছিল, সরকার এই প্রক্রিয়ায় ইতি টানছে না। মমতার এ দিনের আশ্বাস এই ব্যাপারে সরকারের দৃঢ় মনোভাবেরই প্রমাণ। |
এ দিন ইন্ডোর স্টেডিয়ামে মাদ্রাসা, সংখ্যালঘু ছাত্রছাত্রী ও স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে ঋণ ও ভাতা দেওয়ার সরকারি অনুষ্ঠানে নিজেই প্রসঙ্গটি তোলেন মমতা। বলেন, “ইমাম, মুয়েজ্জিনরা একটু চিন্তায় আছেন। সম্প্রতি আদালত একটি রায় দিয়েছে। আমি অবশ্য সেই রায় নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাই না। আইন আইনের পথে চলবে। কিন্তু গণতান্ত্রিক সরকার গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আপনাদের সঙ্গে ছিল, আছে, থাকবে। আইন মেনেই আমরা সব কাজ করে দেব।” তার পরেই আধখানা রুটি খেয়ে আধখানা ইমামদের দেওয়ার কথা বলেন তিনি।
ইমামদের ভাতা দেওয়ার জন্য বছর দেড়েক আগে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল রাজ্য সরকার। তাতে বলা হয়েছিল, সরকার ইমামদের মাসে আড়াই হাজার টাকা ভাতা দেবে। তার কিছু দিন পরেই মুয়েজ্জিনদের মাসিক দেড় হাজার টাকা ভাতা দেওয়ার কথা ঘোষণা করে সরকার। এই নিয়ে জনস্বার্থের মামলা হয়। গত সোমবার হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, সরকারের ইমাম ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত অসাংবিধানিক। আদালত ওই ভাতার ব্যবস্থা খারিজ করার নির্দেশ দেয়। মুয়েজ্জিনদের ভাতা প্রসঙ্গে আদালতের বক্তব্য ছিল, এ বিষয়ে মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত হলেও সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়নি। তাই সেটিও অবৈধ। উচ্চ আদালতের এই রায় সত্ত্বেও ভাতা দেওয়ার প্রক্রিয়ায় সরকার যে এখনই দাঁড়ি টানতে রাজি নয়, সে-দিনই তার ইঙ্গিত মিলেছিল।
সরকার তাঁদের পাশে থাকবে বলে জানালেও মুখ্যমন্ত্রী এ দিন একই সঙ্গে ইমাম-মুয়েজ্জিনদের উদ্দেশে বলেন, “আপনাদের দেখার দায়িত্ব একা সরকারের নয়। ওয়াকফ বোর্ড আছে, মাদ্রাসা বোর্ড আছে, মাদ্রাসা কমিশনও আছে।” মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, তিনি যা বলেন, সেই কথা রাখেন। তাঁর কথায়, “যে-দিন কথা রাখতে পারব না, সে-দিন আর আমার বাঁচার অধিকার থাকবে না।”
সরকারি কাজ খতিয়ে দেখতে ১০ সেপ্টেম্বর তিনি ফের জেলা সফর শুরু করছেন বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, “পুজোর আগে ১০টি এবং পরে বাকি সব জেলায় যাব আমি।” স্টেডিয়ামে বসেই তিনি কোচবিহার, উত্তর দিনাজপুর, নদিয়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর ও হুগলি জেলার সংখ্যালঘু ভবনের উদ্বোধন করেন।
|