নানা রকম...

সত্তার দ্বন্দ্বে চিত্রাঙ্গদা
রূপোন্মাদনা নয়। রূপের মধ্যে অরূপের অনুভবই রবীন্দ্রনৃত্যনাট্যের মূল বিষয়বস্তু। চারিত্রশক্তির আবিষ্কারেই তার পরিপূর্ণতা। ‘চিত্রাঙ্গদা’ তার নারীসত্তাকে আবিষ্কার করেছিল বীরত্বের অভিমানে। যে মিথ্যার দুর্গ ভেঙে যায় অর্জুনকে দেখামাত্রই। তার পর তার রূপহীন বরপ্রাপ্ত মিথ্যা সৌন্দর্যে থেকেও কিন্তু দ্বন্দ্বের অবকাশ হয় না। রূপ এবং রূপাতীত সত্তার এই দ্বন্দ্বই চিত্রাঙ্গদাকে সত্য প্রকাশের সাহস জোগাল। নৃত্যনাট্যগুলি সঙ্গীত নির্ভর হওয়ায় মনের আবেগ প্রকাশ পায় কথা ও সুরে। পাশাপাশি চলে নাচ। অর্থাৎ একে অপরের পরিপূরক। সম্প্রতি আইসিসিআর প্রেক্ষাগৃহে ‘মল্লার’ প্রযোজিত চিত্রাঙ্গদা নৃত্যনাট্যে।
নৃত্যনাট্যের গানে সঠিক নাটকীয়তা কতটা প্রয়োজন তারই এক চমৎকার উদাহরণ দেখা গেল বীর চিত্রাঙ্গদারূপী সুছন্দা ঘোষের গানে। শিক্ষিত ও দীক্ষিত শিল্পী হওয়ায় নৃত্যনাট্যের মূলতত্ত্বটি কণ্ঠে প্রকাশ করতে পেরেছিলেন। তাই তাঁর গানের মধ্য দিয়েই ফুটে ওঠে শৃঙ্খলা, ধরা ছাড়ার উপযুক্ত তালজ্ঞান ও সময় এবং অনুশীলনের চিহ্ন। সঙ্গীত পরিচালক অলক রায়চৌধুরীও অর্জুনের গানে সমস্ত রকম প্রার্থিত আবেগ দিয়েই চরিত্রটিতে প্রাণসঞ্চার করেছেন। চিত্রাঙ্গদার গানে পৌষালি বন্দ্যোপাধ্যায়ের কণ্ঠ সুরাশ্রিত হলেও আরও অনুভবী হওয়া প্রয়োজন।
নৃত্যাংশে অর্জুনের চরিত্রাভিনেতা দীপ্তাংশু পাল কথাকলির ব্যাকরণ আয়ত্ত করলেও চরিত্রটির বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্বময় বা প্রেমে আবেগবিহ্বল রূপটি পুরোপুরি প্রকাশ পেল না। মোহিনী অট্টমের ভঙ্গি ও পোশাক ছিল দুই চিত্রাঙ্গদার। বীর চিত্রাঙ্গদারূপী মোম গঙ্গোপাধ্যায়ের নৃত্যছন্দ সপ্রতিভ ও বলিষ্ঠ হলেও সামগ্রিক অভিব্যক্তিতে মনোগ্রাহী হয়ে উঠতে পারেননি। অর্জুনের সঙ্গে তাঁর বয়সের ব্যবধানটাও চোখে পড়ে। মোহিনী চিত্রাঙ্গদারূপী গার্গী নিয়োগীর উপস্থিতি প্রীতিপদ, প্রশংসনীয়। তবে পোশাক পরিকল্পনায় আরও উন্নত রুচির নিদর্শন রাখা যেত। সমস্ত দর্শকের নজর কেড়ে নেয় দু’টি রবীন্দ্রসঙ্গীতের সঙ্গে সমকালীন দু’টি নৃত্যনির্মিতি যার কৃতিত্ব সুদীপ্ত কুণ্ডু ও তাঁর চার সহশিল্পীর।

কবিতার ক্যানভাসে
কবিতাকে ধরা যাক ক্যানভাস। আর সেই ক্যানভাসে যদি জীবনের ছবি আঁকতে বলা হয়? তাহলে প্রত্যেকেই আলাদা স্কেচ আঁকবেন ঠিকই, কিন্তু কোথাও না কোথাও একটা মিল খুঁজে পাওয়া যাবে। এর কারণ আমাদের সবারই জীবনের গন্তব্য কিন্তু এক। তেমনই মানুষের মনের কথা জানাবার মাধ্যম অনেক সময় কবিতা। কবিতার সঙ্গে গায়ে গা লাগিয়ে কত মানুষ প্রেরণা পায়, বেঁচে থাকে। কবিতাস্কোপ-এর এটাই মূল ভাবনা। যেখানে শুধুই কবিতা আর কথার মেলবন্ধন। সুতপা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এই কবিতার বৃত্তটি সম্পূর্ণ করবেন বিশেষ ভূমিকায় থেকে।
জীবনের ছবি। বিড়লা সভাঘরে
সুতপার দাবি, “কবিতাকে একটা সাদা ক্যানভাস ভেবে তার উপর মিউজিক, ডান্স, ভিডিয়োগ্রাফি, কম্পোজিশন দিয়ে একটা প্রাণ প্রতিষ্ঠা করাই আমার স্বপ্ন। বহু দিন ধরে স্বপ্ন দেখতাম কবিতাকে সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে হবে, সাধারণকে কবিতার ভাষা বোঝাতে হবে। তাই এই প্রচেষ্টা।” এই অনুষ্ঠানের আরও একটি উদ্দেশ্য, সব বয়সের মানুষকে ছোঁয়ার চেষ্টা হয়েছে এই কবিতাস্কোপ-এ। কী ভাবে? রবীন্দ্রনাথ থেকে শক্তি-সুনীল-জয় সহ অনেক কবি যেমন আছেন, তেমনই কবিতার প্রত্যেকটি লাইনের সামঞ্জস্য রেখে পণ্ডিত দেবজ্যোতি বসু তৈরি করেছেন আবহ। সৌমিলি বিশ্বাস আর অর্ণব বন্দ্যোপাধ্যায় তৈরি করেছেন ডান্স কম্পোজিশন। অনুষ্ঠানটি ১৩ সেপ্টেম্বর, বিড়লা সভাঘরে।

এক অন্য মাত্রায়
সম্প্রতি রোটারি সদনে সেতার বাজালেন ইন্দ্রজিৎ রায়চৌধুরী। রামপুর সেনিয়া ঘরানার পণ্ডিত সুব্রত রায়চৌধুরীর শিষ্য ইন্দ্রজিৎ এ দিন শুরু করেন মারু বেহাগের ধ্রুপদী আলাপ জোড় ও ঝালা দিয়ে। এর পর বিলম্বিত ও দ্রুত গৎ-এর সময় তবলা সঙ্গত করেন সঞ্জীব পাল। দুই শিল্পীর সহযোগিতায় রাগ বিস্তার ও সূক্ষ্ম লয়কারী স্পষ্ট হয়ে ফুটেছিল। বিরতির পর শিল্পী শুরু করেন দক্ষিণ ভারতীয় রাগ কিরবাণীর আওচার ও ঝাঁপতালে গৎ দিয়ে।
শেষ হয় তিন তালের বন্দিশ দিয়ে। শেষ অনুষ্ঠান ছিল মিশ্র খাম্বাজের ধুন। গীতিধর্মী এই ধুনের গজল-প্রকৃতির মুক্ত-তান সঞ্চার এই মার্গসঙ্গীতের অনুষ্ঠানটিকে একটি নতুন মাত্রা দেয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সুব্রত রায়চৌধুরী ও প্রমিতা মল্লিক। আয়োজক ‘এনভায়রন’।

মেঘ বালিকা নতুন রূপে
সম্প্রতি মহাজাতি সদনে অনুষ্ঠিত হল মাফিনের নৃত্য প্রতিষ্ঠান ‘মোমাফ নবরং নৃত্যকলা’র দশমবার্ষিকী পূর্তি অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানটি পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন মাফিন ও মুন। এ দিন মাফিন এবং তাঁর প্রায় ১৫০ জন ছাত্রছাত্রীর প্রদর্শিত বিভিন্ন ধরনের নৃত্যশৈলী বিশেষ প্রশংসার দাবি রাখে। শাস্ত্রীয় থেকে পাশ্চাত্য সব ধরনের নৃত্যেই ছিল মাফিনের অবাধ বিচরণ। যেগুলির মধ্যে ‘মধুরা-মূরতি’, ‘ও হংসিনী’ এবং ‘দিল গার্ডেন গার্ডেন’ নৃত্যগুলি দর্শকদের হাততালি কুড়িয়ে নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানের নিজের ছাত্রছাত্রীদের দিয়ে মাফিন যে ভাবে ‘মেঘ বালিকা’ কবিতাটির নৃত্যরূপ উপস্থাপনা করেছেন তাতে কঠিন অনুশীলনের ছাপ স্পষ্ট। মঞ্চসজ্জা, আলোকসজ্জা ও পোশাক পরিকল্পনা সামঞ্জস্যপূর্ণ। এ দিন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অভিষেক চট্টোপাধ্যায়, দোলন রায় প্রমুখ।

ওই মহামানব আসে
সম্প্রতি রবীন্দ্র সদনে কনিকাঞ্জলির অনুষ্ঠানে কণ্ঠদান করেছিলেন মাধবী মুখোপাধ্যায়, সুদীপ্ত মিত্র এবং শিল্পী মিত্র। অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করেন প্রাক্তন রাজ্যপাল শ্যামল কুমার সেন। শুরুতে স্থির চিত্র এবং চলমান প্রযুক্তি ব্যবহারে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নিজ গলায় কবিতা, সঙ্গে মাধবী মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে শোনা যায় কী ভাবে তিনি ‘সম্পূর্ণ সঞ্চয়িতা’য় সুদীপ্ত মিত্র আর শিল্পী মিত্রের সঙ্গী হলেন। এ দিন কবিতা প্রযোজনার শুরু ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলীর প্রথম কবিতা ‘মরণ’ দিয়ে। এর পর ‘সন্ধ্যাসঙ্গীত’, ‘প্রভাতসঙ্গীত’, ‘কড়ি ও কোমল’ হয়ে ‘মানসী’র পথে যাত্রা। যাত্রাপথের নির্বাচনে ছিল এই সকল কাব্যগ্রন্থের বেশ কিছু কবিতার সম্ভার।
পূবালী দেবনাথের ‘নীল অঞ্জন ঘন’ মন ছুঁয়ে যায়। মঞ্চে আসেন মাধবী মুখোপাধ্যায় ‘কথা ও কাহিনি’র ‘কর্ণ কুন্তী সংবাদ’ নিয়ে সুদীপ্ত মিত্রের সঙ্গে। টম ক্রুসনার, জগজিৎ কউর ও রজত চক্রবর্তীর সাবলীল ইংরেজি ভাষ্য প্রতিটি পর্বকে পৃথক ভাবে চিনতে সাহায্য করে। কাশ্মীরা সামন্তের নৃত্য নির্দেশনা ‘বাঁশিওয়ালা’ ও ‘আফ্রিকা’ কবিতায় নতুন প্রাণ দেয়। অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে পূবালী দেবনাথের সঙ্গে সকলেই গেয়ে ওঠেন ‘ওই মহামানব আসে’।

মনের টানে ভাবে অনুভবে
সম্প্রতি ‘ভাবে অনুভবে’ সংস্থা ‘বাইশে শ্রাবণ’ শিরোনামে একটি সুন্দর অনুষ্ঠান পরিবেশন করলেন। শুরুতেই রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনালেন স্বরূপ পাল। ভাল লাগল প্রবীণ শিল্পী শ্যামল ভট্টাচার্যের গান। তাঁর প্রতিটি গানই দরদ দিয়ে গাওয়া। শিল্পীর কণ্ঠের আবেদনও প্রশংসনীয়। তপতী গুপ্ত ও মহুয়া মুখোপাধ্যায়ের পরিবেশনা যথাযথ। এই সন্ধ্যার বিশেষ আকর্ষণ ছিল গার্গী নিয়োগী ও দীপাংশু পালের নাচ।
এঁরা দু’জনেই সমগ্র অনুষ্ঠানটিকে একটি বিশেষ উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন। সঞ্চালনা ও পাঠে ঊর্মি ভট্টাচার্য স্বচ্ছন্দ। যন্ত্রানুষঙ্গে ছিলেন এস্রাজে সুরজিৎ কর ও তবলায় পার্থ মুখোপাধ্যায়।

কথন কথা
বাচিক সংস্থা ‘কথন’ অনুষ্ঠান করল পশ্চিমবঙ্গ বাংলা অ্যাকাডেমিতে। জগন্নাথ বসুর প্রেরণায় তাঁর ছাত্রছাত্রীরা তৈরি করেছেন এই সংস্থা। পরে জগন্নাথ বসু ও সুপ্রিয় রায়ের স্মৃতিমেদুর আলাপচারিতায় শোনা গেল অনেক না জানা কথা। পরে অনুষ্ঠিত হয় শ্রুতিনাটক ‘কেষ্টা’। কেষ্টা চরিত্রে ছিলেন দেবাশিস ঘোষ। ‘আমি সৃষ্টি’ আলেখ্যটিতে কাকলী দেবনাথের পাঠ বেশ সাবলীল।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.