সিনেমা সমালোচনা...
অমিতাভের অভিনয়ে প্রচুর হাততালি
ত্যাগ্রহ’ কথাটার সঙ্গে জড়িয়ে আছে মহাত্মা গাঁধীর নাম। অতএব অহিংসা পরম ধর্ম, ছবির বক্তব্য এ রকমই কিছু হবে বলে মনে হয়েছিল। মনে হয়েছিল ‘কেউ এক গালে চড় মারলে অন্য গালটা বাড়িয়ে দিও’ মুন্নাভাইয়ের মতোই বলবেন ‘সত্যাগ্রহ’ ছবির নায়ক দ্বারকানাথ। কিন্তু ছবি শুরুর একটু পরেই নিয়ম ভেঙে জোর করে সরকারি অফিসারদের মিটিং চলাকালীন কনফারেন্স রুমে ঢুকে, কালেক্টারের গালে চড় মেরে দর্শকদের হাততালি কুড়িয়েছেন দ্বারকানাথ মানে অমিতাভ বচ্চন। পরিচালক প্রকাশ ঝা কী করে এই সুযোগ ছাড়বেন বলুন? এই হাততালি পাওয়ার জন্যই তো ওই রাগী যুবক, সরি ওই রাগী বৃদ্ধকে নেওয়া। অবশ্য তার পর তিনি আর সারা ছবিতে মারামারি করেননি, বরং মারামারির বিপক্ষেই কথা বলেছেন।
দ্বারকানাথ মানে অমিতাভ বচ্চন একজন অবসরপ্রাপ্ত স্কুলমাস্টার। দিল্লির কাছে অম্বিকাপুরে থাকেন। সবাই তাঁকে খুব শ্রদ্ধা করেন। তাঁর ছেলে ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত সরকারি ইঞ্জিনিয়ার। রাস্তাঘাট, হাইওয়ে, ফ্লাইওভারের ডিজাইন করেন। তাঁর বিয়ে ঠিক হয়েছে অমৃতা রাওয়ের সঙ্গে। সেই উপলক্ষে ইন্দ্রনীলের অন্তরঙ্গ বন্ধু মানব, মানে অজয় দেবগণ বাইরে থেকে এসে পৌঁছান অম্বিকাপুরে। তাঁর স্বপ্ন বিদেশ গিয়ে টাকা রোজগার করে বড়লোক হওয়ার। বিয়ের পর ইন্দ্রনীল যে ফ্লাইওভারের ডিজাইন করেছিল অম্বিকাপুরে সেটা ভেঙে পড়ে। ইন্দ্রনীল সেখানে যায়। ফেরার পথে গাড়ি দুর্ঘটনায় সে মারা যায়। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে মালা দিতে আসেন মন্ত্রী বলরাম সিংহ (মনোজ বাজপেয়ী)। এবং ২৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেবেন ঘোষণা করেন। কিন্তু কেন?
এর পর সেই টাকা দিয়ে একটা স্কুল করার জন্য ইন্দ্রনীলের স্ত্রী অমৃতা রাও সরকারি অফিসে যান। ঘুরতে থাকেন এ টেবিল থেকে সে টেবিল। কিন্তু টাকা পান না। অবশেষে এক দিন কালেক্টারের কাছে যান। অপমানিত হন। বুঝতে পারেন টাকাটা পেতে গেলে অনেক ঘুষ দিতে হবে। শোনেন অমিতাভ। অমিতাভ বচ্চন যান, কালেক্টারকে চড় মারেন। পুলিশ তুলে নিয়ে গিয়ে তাঁকে থানার লক আপে ভরে দেয়। এর পর সেই খবর পেয়ে ফিরে আসেন অজয় দেবগণ। আসেন মাস্টারমশাইয়ের প্রাক্তন ছাত্র অর্জুন রামপাল, যে এখন পার্টিবাজি করে। আসে অজয় দেবগণের বান্ধবী সাংবাদিক ইয়াসমিন, মানে করিনা কপূর খান। শুরু হয় প্রতিবাদের আন্দোলন। ছাড়া পান অমিতাভ বচ্চন। এর পর অম্বিকাপুরে যে সব মানুষের টাকার ফাইল জমা পড়েছিল সরকারি অফিসের আলমারিতে সেই সব পাওনাগন্ডা মেটানোর দাবিতে শুরু হয় আন্দোলন। মাস্টারমশাই দাবি করেন ৩০ দিনের মধ্যে সব মেটাতে হবে। মন্ত্রী বলেন আপনি নির্দেশ দেওয়ার কে? অমিতাভ বলেন, জনগণ ভোট দিয়ে সরকার গড়ে তাই জনগণ হচ্ছে আপনাদের মালিক। তাঁরা যা নির্দেশ দেবেন আপনাদের তা মানতেই হবে। দর্শক এ রকম সংলাপ অমিতাভ বচ্চনের মুখ থেকে শোনার পর হাততালি দেবেন না, তা কখনও হয়? সরকার মানতে রাজি নয়। শুরু হয় অমিতাভ বচ্চনের সত্যাগ্রহ। মহাত্মা গাঁধীর মতো মঞ্চের বিছানায় আধশোয়া অবস্থায় থাকেন অমিতাভ বচ্চন। এমনকী একবার দুই নায়িকার কাঁধে ভর দিয়ে মহাত্মা গাঁধীর মতো উঠেও দাঁড়ান। ‘রঘুপতি রাঘব’ গানও হয়। ইস্ অমিতাভ বচ্চন যদি গাঁধীজির মতো একবার হাতে লাঠিটা নিতেন তা হলে বোধ হয় দর্শক খুব খুশি হত।
সত্যাগ্রহ
অমিতাভ, অজয়, করিনা, মনোজ
এর পর সত্যাগ্রহ ভাঙার অনেক চেষ্টা হল, র্যাফ নামল, কত কী কাণ্ড হল। অজয় দেবগণকে মন্ত্রী হলরাম শহরের বাইরে পাচার করে দিলেন অথচ তিনি যখন আবার ফিরে এলেন, মন্ত্রী তখন তাঁর সঙ্গে আলোচনায় বসলেন অথচ তাঁর ফিরে আসা নিয়ে কোনও কথা বললেন না। ইন্দ্রনীলের মৃত্যুতে মন্ত্রী ২৫ লক্ষ টাকা দিতে চেয়েছিলেন কারণ তিনিই ইন্দ্রনীলকে খুন করিয়েছিলেন কিন্তু কেন সেটাও খুব স্পষ্ট নয়। এই ধরনের কিছু ব্যাপার পরিচালক এড়িয়ে গিয়েছেন। মনে হয় পুরো গল্পটা সাজানো শুধুমাত্র আন্দোলনটাকে হাইলাইট করার জন্যে। তাই যদি গল্পটা আর একটু জমত তা হলে ছবিটাও জমে যেত। মহাত্মা গাঁধী ছাড়াও যাঁর ছায়া ছবিতে বেশি রয়েছে তিনি অন্না হজারে। আর অজয় দেবগণ হলেন তাঁর ডান হাত অরবিন্দ কেজরিওয়াল। ২০১১ সালে যাঁরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলেন।
ছবির অভিনেতা-অভিনেত্রীরা চুটিয়ে অভিনয় করেছেন। দর্শক রীতিমত উপভোগ করেছেন তাঁদের অভিনয়। মনোজ বাজপেয়ী ছবিতে ভিলেন হয়েও অভিনয়গুণে দর্শকদের হাততালি পেয়েছেন কয়েকটি দৃশ্যে। অবশ্য বাজিমাত করেছেন ওই রাগী বৃদ্ধ অমিতাভ বচ্চন। পরিচালক প্রকাশ ঝা ১৯৮৪ সালে জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত ছবি ‘দামুল’ দিয়ে নিজের কেরিয়ার শুরু করেছিলেন। তার পর একে একে করেছেন ‘গঙ্গাজল’, ‘রাজনীতি’, ‘আরক্ষণ’, ‘চক্রব্যূহ’। এ বার করলেন ‘সত্যাগ্রহ’। ছবিতে জাঁকজমক, টেকনিক্যাল কাজ সব ভাল হওয়া সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত দর্শকের মন জয় করতে পারলেন না।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.