নানা সমস্যায় আটকে আছে বড়বাজারকে জঞ্জালমুক্ত করার প্রকল্প। তবে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে বলে কলকাতা পুর-কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।
পুরসভার মেয়র পারিষদ (জঞ্জাল) দেবব্রত মজুমদার বলেন, “বড়বাজার এলাকা জঞ্জালমুক্ত করার জন্য পুরসভা এই অঞ্চলের বড় ভ্যাটগুলির জায়গায় আধুনিক জঞ্জাল অপসারণের যন্ত্র বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এ ছাড়া, এই অঞ্চলের ছোট ভ্যাটগুলি থেকে যাতে দিনে একাধিক বার জঞ্জাল সরানো যায় সেই ব্যাপারেও চিন্তাভাবনা হয়েছিল। তবে পরিকাঠামোগত কিছু সমস্যায় এই কাজ আপাতত আটকে রয়েছে।”
বড়বাজার শহরের অন্যতম বাণিজ্যিক কেন্দ্র। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এখানে জঞ্জাল জমতে থাকে। সম্প্রতি পুরসভার জঞ্জাল দফতর বড়বাজারে একটি সমীক্ষা করে। দেখা যায় বড়াবাজারে তারাসুন্দরী পার্কের কাছে, পুরনো ট্যাঁকশালের সামনে, হাওড়া ব্রিজের মুখে ব্রাবোর্ন রোড এবং রাজা কাটরা এই চারটি জায়গায় বড় ভ্যাট রয়েছে। পুরসভা ঠিক করে এই চারটি জায়গায়ই পর্যায়ক্রমে কম্প্যাক্টর বা আধুনিক জঞ্জাল অপসারণের যন্ত্র বসানো হবে। এ ধরনের যন্ত্র একসঙ্গে প্রচুর জঞ্জাল তুলতে পারে। এই যন্ত্রে জঞ্জালের জলীয় অংশ দ্রুত শুকিয়ে ফেলা হয় বলে দুর্গন্ধ ছড়ায় না। এই যন্ত্র থেকে জঞ্জাল দ্রুত গাড়ি করে সরিয়ে ফেলতে পারলে এলাকা অনেকটাই পরিষ্কার থাকত বলে পুরকর্তৃপক্ষ জানান। কিন্তু প্রকল্পটি নানা সমস্যায় আটকে আছে। |
সমস্যা কোথায়?
তারাসুন্দরী পার্কের কাছে যে ভ্যাটটি রয়েছে তার তলায় রয়েছে একটি জলাধার। বড়বাজারে আগুন লাগলে এই জলাধারের জলই আগুন নেভাতে কাজে লাগে। ফলে এখানে কম্প্যাক্টর বসানোর পরিকল্পনা আপাতত বাতিল হয়েছে। জঞ্জাল দফতরের এক আধিকারিক জানান, এই যন্ত্র বসাতে দৈর্ঘ্যে ৬০ ফুট ও প্রস্থে ২০ ফুট জায়গা লাগে। সাধারণত একটি ভ্যাটের জায়গায় তিনটি করে যন্ত্র বসানো হয়। রাজাকাটরা এবং তারাসুন্দরী পার্কের ভ্যাট ছাড়া বাকি দু’টি ভ্যাটেই পার্কিংয়ের সমস্যা রয়েছে। সকালে জঞ্জাল অপসারণের পরেই ভ্যাটের ঠিক মুখে, এমনকী ভেতরেও গাড়ি পার্ক করা শুরু হয়ে যায়। ময়লার গাড়ি ঢুকতে পারে না। ফলে, পার্কিং সমস্যার সমাধান না করলে এখানে কম্প্যাক্টর বসিয়ে কার্যত কোনও লাভ হবে না বলে দফতরের এক আধিকারিক জানান। পুরসভার দাবি, এই অঞ্চলে দিনে দু’বার ময়লা পরিষ্কার করা হয়।
পুরসভার মেয়র পারিষদ (পার্কিং) রাজীব দেব বলেন, “পুলিশের সঙ্গে কথা বলেই পুরসভা এখানে পার্কিংয়ের অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু পার্কিংয়ের জন্য কোনও পরিষেবার কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে না। তবে বেআইনি পার্কিং হলে পুলিশকেই ব্যবস্থা নিতে হবে।” কলকাতা পুলিশের ডিসি ট্রাফিক দিলীপ আদক বলেন, “বেআইনি পার্কিং দেখলেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়।” |
দেবব্রতবাবু জানান, এই সমস্যার সমাধান করতে পারে ছোট ভ্রাম্যমান কম্প্যাক্টর। পুরসভা ইতিমধ্যেই এই ধরনের ১৫টি যন্ত্র কেনার পরিকল্পনা করেছে। বড়বাজার-সহ শহরের সমস্ত ঘিঞ্জি রাস্তা থেকে ময়লা তুলতে এই ধরনের মেশিনের ব্যবহার করা যেতে পারে। এই বিষয়ে ‘বড়বাজার ব্যবসায়ী সমিতি’র সঙ্গে আলোচনা করা হবে। শহরের জন্য মোট ৬৮টি বড় কম্প্যাক্টর কেনার কথা ভাবা হয়েছে। জেএনএনইউআরএম থেকে এর জন্য অর্থ পাওয়ার চেষ্টা চলছে। ছোট ভ্রাম্যমান যন্ত্র পুরসভা নিজেই কিনবে। ‘ফেডারেশন অফ ট্রেড অর্গানাইজেশন’-এর বড়বাজার শাখার সম্পাদক তাপস মুখোপাধ্যায় বলেন, “বড়বাজার এলাকা পরিষ্কার রাখতে পুরসভাকে আমরা যে কোনও রকম সহযোগিতা করতে রাজি। এখানে জায়গার সমস্যা রয়েছে। পুর-কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান হবে।”
|