শব্দদৈত্যকে ফের বোতলবন্দি করতে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়া নিয়ে ঘোর দ্বিধায় রাজ্য সরকার। লড়াইয়ের রাশ তাই হাতে তুলে নিল নাগরিক সমাজ।
১৯৯৭ থেকে এ রাজ্যে বাজির শব্দসীমা ছিল ৯০ ডেসিবেল। বিশেষজ্ঞদের মতে, ওই শব্দসীমা মেনে কোনও শব্দবাজি তৈরি করা কার্যত অসম্ভব। কিন্তু ২৮ অগস্ট জাতীয় পরিবেশ আদালত পশ্চিমবঙ্গেও বাজির শব্দসীমা বাড়িয়ে অন্যান্য রাজ্যের মতো ১২৫ ডেসিবেল করার নির্দেশ দিয়েছে। এর বিরুদ্ধেই নাগরিক ও পরিবেশ আন্দোলনকারীরা সর্বোচ্চ আদালতে যাচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, এই রাজ্যের দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ জাতীয় পরিবেশ আদালতে পশ্চিমবঙ্গের পক্ষে সঠিক বক্তব্য তুলে ধরেনি বলেও অভিযোগ করেছেন পরিবেশ ও নাগরিক সংগঠনগুলির কেন্দ্র ‘সবুজ মঞ্চ’। ১৫ সেপ্টেম্বর এই বিষয়ে দেশপ্রিয় পার্কে একটি গণ কনভেশনও ডেকেছে তারা।
সবুজ মঞ্চের আহ্বায়ক নব দত্ত শুক্রবার বলেন, “পর্ষদ ও পরিবেশ দফতরের এই নিষ্ক্রিয়তা এ বার উৎসবের মরসুমে ভয়ঙ্কর নৈরাজ্য সৃষ্টি করবে। বিষয়টি নিয়ে আমরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপ চেয়ে বৃহস্পতিবারই তাঁকে চিঠি দিয়েছি। পশ্চিমবঙ্গে বাজির শব্দসীমা বাড়িয়ে প্রকারান্তরে রাজ্যের অধিকারই কেড়ে নেওয়া হয়েছে। সরকার সাড়া না-দিলে আমরাই সুপ্রিম কোর্টে যাব।”
সবুজ মঞ্চের হিসেবে, সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলা রুজু করা, আইনজীবী দাঁড় করানো-সহ বিভিন্ন খরচ ৫০ হাজার টাকার বেশি। মঞ্চের সদস্য বা সদস্য নন, এমন অনেক পরিবেশকর্মী-পরিবেশপ্রেমী ব্যক্তিগত ভাবে ওই অর্থসাহায্য করছেন। অবসরপ্রাপ্ত কেউ কেউ পেনশনের টাকা পর্যন্ত তুলে দিয়েছেন।
রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের অবসরপ্রাপ্ত মুখ্য আইন আধিকারিক বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় এ দিন বলেন, “সুপ্রিম কোর্টে যাওয়া ছাড়া আমাদের উপায় নেই। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদও শব্দ-মাফিয়াদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। ১৯৯৯-র অক্টোবরে কেন্দ্রীয় এই পর্ষদ বাজির শব্দসীমা ১২৫ ডেসিবেল নির্ধারণ করলেও ঠিক হয়েছিল, ২০০২-র ১ জানুয়ারি ওই শব্দসীমা অন্তত পাঁচ ডেসিবেল কমানো হবে। কিন্তু সেটা আর করা হয়নি। এই সব তথ্য রাজ্যের পক্ষ থেকে জাতীয় পরিবেশ আদালতে বলাই হয়নি।”
পর্ষদের চেয়ারম্যান বিনয়কান্তি দত্ত দাবি করেন, “বাজির শব্দসীমা বৃদ্ধি ঠেকাতে জাতীয় পরিবেশ আদালতে পর্ষদের পক্ষ থেকে যাবতীয় নথিপত্র পেশ করা হয়েছিল। আমরা চেষ্টার কসুর করিনি।”
১০-সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতেই ১৯৯৭-র অক্টোবরে পর্ষদ এই রাজ্যে বাজির শব্দসীমা ৯০ ডেসিবেল বেঁধে দিয়েছিল। ওই কমিটির অন্যতম সদস্য, সেই সময়ে হাইকোর্ট নিযুক্ত স্পেশাল অফিসার গীতানাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “শহর ও গ্রাম মিলিয়ে পাঁচ হাজার মানুষের মধ্যে আমরা সমীক্ষা চালিয়েছিলাম। ৯৮ শতাংশই জানিয়েছিলেন, তাঁরা শব্দবাজির সন্ত্রাস থেকে মুক্তি চান।”
|