প্রস্তাবেই আটকে পাম্পিং স্টেশন, জলে ভাসছে হাওড়া |
অধিকাংশ পাম্পিং স্টেশনই পুরনো। তাই কার্যক্ষমতা কমে গিয়েছে। সালকিয়ায় নতুন পাম্পিং স্টেশন তৈরির কাজও পরিকল্পনার স্তরেই আটকে আছে। ফলে অল্প বৃষ্টিতেই জলে ভাসছে হাওড়া শহর।
কেএমডব্লিউএসএ সূত্রের খবর, পাম্পিং স্টেশন অনুযায়ী হাওড়া শহরকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়। একটি ভাগ উত্তর হাওড়া ও বালি নিয়ে। অন্যটি দক্ষিণ হাওড়া। উত্তরে কোনায় ও দক্ষিণে ইছাপুরে রয়েছে স্যুয়ারেজ পাম্পিং স্টেশন। এগুলি প্রধানত নোংরা জল পাম্প করে বার করার জন্য। যদিও বর্ষায় এগুলিকেই ডিপিএস (ড্রেনেজ পাম্পিং স্টেশন) হিসাবে ব্যবহার করা হয়। হাওড়ার একমাত্র ডিপিএস-টি রয়েছে বেলগাছিয়ায়। আর রয়েছে বেশ কয়েকটি এলএস (লিফ্টিং স্টেশন)। উত্তর হাওড়ার ঘুসুড়ি, বেলুড় মঠ, বালিখাল, লিলুয়া, পঞ্চাননতলা, সল্টগোলা ও গোলাবাড়িতে এবং দক্ষিণে শিবপুর বিই কলেজ, ফোরশোর রোড, রাউন্ড ট্যাঙ্ক রোড ও আড়ুপাড়ায় এলএস রয়েছে। |
এ ভাবেই দিনযাপন। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার |
কী ভাবে কাজ হয়?
এলএসগুলি নিকাশি নালার মাধ্যমে জল ডিপিএস-এ পাঠিয়ে দেয়। ডিপিএস সেই জল শোধন করে নদীতে বা কোনও বড় জলাশয়ে ফেলে। কেএমডব্লিউএসএ সূত্রের খবর, অধিকাংশ এলএস এবং ডিপিএস বহু পুরনো। ফলে কার্যক্ষমতা কমে এসেছে। এমনিতেই পাম্পগুলি ঠিকমতো কাজ করে না। বৃষ্টির সময়ে আরও সমস্যা হয়। তা ছাড়া পচা খাল ও রানি ঝিল প্রায় বুজে গিয়েছে। ফলে জল ফেলায় সমস্যা হচ্ছে।কেএমডব্লিউএসএ সূত্রের খবর, উত্তর হাওড়ায় জল জমার সমস্যা কমাতে ২০০৪-এ সালকিয়ায় একটি ডিপিএস তৈরির পরিকল্পনা করা হয়। তার পরে কাজ এগোয়নি। গত বর্ষায় কেএমডিএ, কেএমডব্লিউএসএ, উত্তর হাওড়ার বিধায়ক তৃণমূলের অশোক ঘোষ এবং স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের মধ্যে বৈঠক হয়। ঠিক হয়, জেএনএনইউআরএম-এর অর্থে ডিপিএস তৈরি করা হবে। এ জন্য হাওড়া পুরসভার সাত নম্বর ওয়ার্ডের মহিনাথ পোড়েল লেনে রেললাইনের পাশে একটি জমি নির্দিষ্ট করা হয়।
সমস্যা হয় পাইপলাইন নিয়ে যাওয়ার পথ নিয়ে। কেএমডব্লিউএসএ প্রস্তাব দেয়, বেনারস রোড, অরবিন্দ রোড, বাঁধাঘাট হয়ে জল গঙ্গায় পড়বে। কিন্তু প্রস্তাবিত পথটি ঘন জনবসতিপূর্ণ এবং বাণিজ্যিক এলাকা বলে আপত্তি ওঠে। এর বদলে বেনারস রোড হয়ে রেলের কারশেড দিয়ে পাইপলাইন নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেন স্থানীয় বিধায়ক অশোক ঘোষ। কেএমডব্লিউএসএ এই প্রস্তাব মেনে নেয়। |
সেই অনুযায়ী কেএমডব্লিউএসএ পূর্ব রেলের কাছে আবেদন করে। কেএমডব্লিউএসএ-র প্রস্তাব অনুযায়ী এই পাইপলাইন রেলের নিকাশি পাইপ হিসেবেও কাজ করবে। রেলের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনাও হয়। কেএমডব্লিউএসএ কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, এখনও রেল কোনও সিদ্ধান্ত জানায়নি। কেএমডব্লিউএসএ সূত্রের খবর, এই প্রকল্পে ২০ কোটি টাকারও বেশি খরচ হত। এক আধিকারিক বলেন, “ঠিক হয়েছিল প্রতি পাঁচ সেকেন্ডে ৩৫০০ লিটার জল পাম্প করার ক্ষমতাসম্পন্ন পাম্প বসানো হবে। এতে উত্তর হাওড়ার জল জমার সমস্যার সমাধান হত।”
হাওড়া পুরসভার মেয়র পারিষদ (নিকাশি) দেবাশিস ঘোষ বলেন, ‘‘পাম্পিং স্টেশনগুলি কেএমডব্লিউএসএ-র অধীন। এ ব্যাপারে পুরসভার কিছুই করার নেই। আমরাও চাই ওখানে পাম্পিং স্টেশন তৈরি হোক।” স্থানীয় বিধায়ক তৃণমূলের অশোক ঘোষ বলেন, “একটু বৃষ্টি হলেই গোটা সালকিয়ায় জল জমে যায়। পাম্পিং স্টেশন হওয়াটা খুবই জরুরি। আমরা সব রকমের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।” পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবীন মহাপাত্র বলেন, “বৈঠক হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে।” |