|
|
|
|
কেদার মন্দির রক্ষায় হাতিয়ার সেই পাথরের চাঁই |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
সময় কমে আসছে। শীত প্রায় এসে পড়ল বলে। তাই দ্রুত কেদারনাথ মন্দির রক্ষণাবেক্ষণের পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ (এএসআই)। উত্তরাখণ্ডে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল কেদারের মন্দির।
১১ সেপ্টেম্বর কেদারনাথ মন্দিরের বিশেষ পুজো শেষ হয়ে যাওয়ার অপেক্ষা। ওই পবিত্র দিন থেকেই রক্ষণাবেক্ষণের কাজে নামতে চায় এএসআই। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে মোট দশ মাস অর্থাৎ দু’টি মরসুমে ওই রক্ষণাবেক্ষণের কাজ সম্পূর্ণ করা হবে। প্রাথমিক ভাবে ওই কাজের জন্য ২ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা দিতেও রাজি হয়েছে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক।
সময় কম বলে এখনই বড় ধরনের সংস্কারের রাস্তায় হাঁটতে চাইছে না এএসআই। আসন্ন শীতে তুষারপাতের ফলে মন্দিরের ক্ষতি হওয়া আটকানোকেই পাখির চোখ করেছে এএসআই। আর সে কাজে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে নেমে আসা বড় পাথরের চাঁইকে হাতিয়ার করতে চাইছে তারা।
কেদারের মূল মন্দিরটি তৈরি হয়েছে প্রধানত চারটি ধাপে। প্রায় হাজার বছর ধরে নির্মাণ কাজ শেষে মন্দিরটি বর্তমান চেহারা নেয়। আজ সংস্কৃতি মন্ত্রক জানিয়েছে, জুন মাসে যে তীব্র জলস্রোত মন্দির চত্বর দিয়ে বয়ে যায়, তার পর এখন মণ্ডপ জুড়ে পাথর ছাড়া অন্য কিছুই পড়ে নেই। এখনই মন্দির সংলগ্ন বড় পাথর সরাতে চায় না এএসআই। তাদের মতে, বিপর্যয়ের দিন চোরাবালি তাল থেকে খরস্রোতে ভেসে আসা একটি বড় আকারের পাথরের চাঁই মন্দিরকে বড় ক্ষতির হাত থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছিল। ওই পাথরটিকেই ব্যবহার করে ভবিষ্যত বিপর্যয় এড়াতে চাইছে তারা। |
|
প্রকৃতির সেই ধ্বংসলীলার পর কেদার মন্দির। |
এএসআই জানিয়েছে, ওই পাথর সরাতে গেলে বড় আকারের ক্রেন ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতির প্রয়োজন। অথবা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে চাঁইটিকে ভাঙতে হবে। কিন্তু বিপর্যয়ের পরেই এএসআই, আইআইটি রুরকি, জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার বিশেষজ্ঞরা যে প্রাথমিক রিপোর্ট জমা দিয়েছেন তাতে এখনই ওই ধরনের কোনও কাজই করতে নিষেধ করা হয়েছে। তাতে আরও বিপর্যয় ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। এএসআইয়ের অধিকর্তা (সংরক্ষণ) জাহ্নবী শর্মা জানিয়েছেন, মন্দিরের ভিতরে সেই অর্থে বড় কোনও ক্ষতি না হলেও, বাইরের অংশে বহু জায়গায় ফাটল ধরেছে। মন্দিরের পূর্ব দিকের প্রবেশ পথটি সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হেলে পড়েছে মণ্ডপ। ফলে মন্দিরটির ভারসাম্যও নড়ে গিয়েছে।
বর্তমানে মন্দিরের পিছনের অংশে জমি থেকে ১৪ ফুট উচ্চতা পর্যন্ত কেবল ধ্বংসস্তূপ পড়ে রয়েছে। সংস্থার বক্তব্য, ওই ধ্বংসস্তূপ না পরিষ্কার করা পর্যন্ত বড় পাথরটি সরানো সম্ভব নয়। কিন্তু মন্দিরটি হেলে যাওয়ায় জমে থাকা ধ্বংসস্তূপ মন্দিরের ভার বহন করছে বলেই মনে করছে এএসআই। তাই ধ্বংসাবশেষ সরাতে গেলে মন্দির আরও হেলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে এত অল্প সময়ে এখন আর নতুন কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছে এএসআই। চোরাবালি তাল থেকে আসা পাথরের চাঁইটিকে মন্দিরের ঢাল হিসাবে ব্যবহার করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। বিশেষজ্ঞদের মতে, তুষারপাত আটকাতে ওই চাঁইটিকেই কাজে লাগানো যাবে।
কেদারনাথের মন্দিরের প্রামাণ্য ইতিহাস নিয়ে বিশেষজ্ঞদের একাধিক মত রয়েছে। ঠিক কবে ওই মন্দির গঠনের কাজ শুরু হয়েছিল সে বিষয়ে স্পষ্ট তথ্য নেই মন্ত্রকের কাছে। রাহুল সাংকৃত্যায়ন তাঁর হিমালয় পরিচয় গ্রন্থে দাবি করেছিলেন, গুপ্ত ব্রাহ্মিণী লিপিতে ওই মন্দিরের প্রথম উল্লেখ রয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত সেই শিলালিপির কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। তবে এখন মন্দিরের গর্ভগৃহ সাফাই করতে গিয়ে একাধিক শিলালিপিও পাওয়া গিয়েছে বলে জানিয়েছে মন্ত্রক। সেগুলি কোন ভাষায় বা কোন সময়ে লেখা তা বিশ্লেষণ করা গেলে মন্দির সংক্রান্ত নানা অজানা তথ্য সামনে আসবে বলেই মনে করছে এএসআই।
|
পুরনো খবর: বদলাচ্ছে পথ, প্রথা ভেঙে খুলছে মন্দির |
|
|
|
|
|