|
|
|
|
হামলার নয়া চক্রী কলকাতার আমির, চিন্তায় দিল্লি |
প্রেমাংশু চৌধুরী • নয়াদিল্লি |
ইয়াসিন ভটকল গ্রেফতার হওয়ায় বেশ কিছুটা ধাক্কা খেয়েছে ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন (আইএম)। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা কর্তাদের আশঙ্কা, এর বদলা নিতে ও সংগঠনকে চাঙ্গা করতে তারা আগামী তিন-চার মাসের মধ্যে দিল্লি, মুম্বই, বেঙ্গালুরু, জয়পুর, বারাণসী ও লখনউয়ের মতো শহরে ধারাবাহিক বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলি আরও জানাচ্ছে, দশেরা থেকে দীপাবলি এই উৎসবের মরসুমে বা তার আগেই গোটা দেশে নাশকতার ছক কষছে খাস কলকাতায় বেনিয়াপুকুরের মফিদুল ইসলাম লেনে বড় হয়ে ওঠা আমির রেজা খান।
গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, জেরার মুখে ইয়াসিন কবুল করেছে, গত ফেব্রুয়ারিতে হায়দরাবাদের দিলসুখনগরে যে বিস্ফোরণ হয়েছিল, পাকিস্তানে বসে তার নির্দেশ দিয়েছিল ওই আমির রেজাই। তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে ইয়াসিন কিছু জানাতে পারেনি। তবে অন্যান্য সূত্রে পাওয়া খবরের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের দাবি, ইয়াসিন ধরা পড়ে যাওয়ার পর ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের দায়িত্ব এখন মূলত আমির রেজা খান ও আব্দুল সুভান কুরেশির হাতে। পাকিস্তানে বসে আইএম-এর এই দুই পাণ্ডাই ভারতে নাশকতা ছক কষছে। তবে শহরভিত্তিক হামলার সুনির্দিষ্ট কোনও ছক সংক্রান্ত তথ্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তাদের হাতে আসেনি এখনও।
ইয়াসিনকে গত ২৮ অগস্ট গ্রেফতার করা হয়েছিল ভারত-নেপাল সীমান্তে। তার পর থেকে তাকে দিল্লিতে সিআরপিএফ-এর একটি ক্যাম্পে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে রাখা হয়েছে। সেখানেই তাকে জেরা করছেন জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ)-র অফিসাররা। কিন্তু জেরার মুখে অতীতের নানা বিস্ফোরণ নিয়ে মুখ খুললেও আগামী দিনের জন্য তাদের কী পরিকল্পনা ছিল, তা নিয়ে ইয়াসিনের পেট থেকে কোনও কথাই বের করা যায়নি। এনআইএ সূত্রের খবর, ইয়াসিন শুধু জানিয়েছে, আইএম-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা রিয়াজ ভটকলই তাকে বলে দিত, কোথায় বিস্ফোরণ ঘটাতে হবে। কোথায়, কী ভাবে বোমা রেখে আসতে হবে। বাকি পরিকল্পনা নিয়ে তার কিছুই জানা নেই। |
আমির রেজা খান |
আব্দুল সুভান কুরেশি |
|
এটা স্পষ্ট যে জেরার মুখে অনড় থাকার প্রশিক্ষণ রয়েছে ইয়াসিনের। তাই ইয়াসিনের ‘পলিগ্রাফ টেস্ট’ নিতে বা তাকে ‘লাই-ডিটেক্টর’-এ বসাতে চান এনআইএ-কর্তারা। কারণ, এ বিষয়ে তাঁরা নিশ্চিত যে, আইএম-এর অন্যান্য পাণ্ডা, সদস্য, বিস্ফোরক-অস্ত্রশস্ত্র এবং ভবিষ্যৎ নিশানা সম্পর্কে অনেক তথ্যই জানা আছে ইয়াসিনের।
আরও কিছু তথ্য মিলতে পারে ইয়াসিনের ল্যাপটপ থেকে। সেটি ইতিমধ্যেই ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। এই ল্যাপটপ থেকেই ভিওআইপি (ভয়েস-ওভার-ইন্টারনেট-প্রোটোকল)-এর সাহায্যে রিয়াজ ভটকলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখত ইয়াসিন। রিয়াজের সঙ্গে ইয়াসিনের কথাবার্তার রেকর্ড মিললে ভারতে আইএম-এর জন্য পাকিস্তান বা সৌদি আরব থেকে কোন পথে অর্থ আসত, তা জানা যেতে পারে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তাদের মতে, এ দেশের ভূমিপুত্রদের দিয়েই নাশকতা চালানোর জন্য আইএসআই ও লস্করের তৈরি ‘করাচি প্রোজেক্ট’ ইয়াসিনের গ্রেফতারে হোঁচট খেয়েছে। কারণ, ইয়াসিন-ই পাকিস্তান থেকে পাওয়া নির্দেশ পালন করে একের পর এক বোমা বিস্ফোরণ ঘটাত। কিন্তু এখন তাঁদের চিন্তা আমির রেজা খান ও আব্দুল সুভান কুরেশিকে নিয়ে। দু’জনেই বহু বছর ধরে পাকিস্তানে গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে বলে গোয়েন্দাদের দাবি। এই মূহূর্তে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তাদের বেশি ভাবাচ্ছে উৎসবের মরসুমে হামলার চক্রান্ত। যেমনটা হয়েছিল ২০০৮ সালে। ঠিক দুর্গাপুজোর আগে রাজধানী
দিল্লির বিভিন্ন বাজারে ধারাবাহিক বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল মুজাহিদিন-জঙ্গিরা। পরে যাদের সন্ধান মেলে দিল্লিরই বাটলা হাউসে।
দশেরা বা দীপাবলির আগে বাজার এলাকাগুলিতে ভিড় থাকে। তাই কম মাত্রায় বিস্ফোরণ ঘটাতে পারলেও যথেষ্ট প্রাণহানির আশঙ্কা থাকে। আর সেই কারণে বাজার এলাকাগুলিকে বেছে নেওয়া হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন গোয়েন্দারা। তাঁদের ধারণা, আমির রেজা খান যদি আগামী কয়েক মাসের মধ্যে নাশকতা চালিয়ে ফের সংগঠনকে চাঙ্গা করে ইয়াসিনের গ্রেফতারের ধাক্কা সামলে ফেলতে পারে, তা হলে অদূর ভবিষ্যতে সে-ই আইএম-এর প্রধান মুখ হয়ে উঠবে।
বেনিয়াপুকুরে মফিদুল ইসলাম লেনের ৩৮ডি নম্বর বাড়িতে বড় হয়ে ওঠা আমির তার দলের সন্ত্রাসবাদীদের মধ্যে পারভেজ, রিজওয়ান এবং মুট্টকি নামেও পরিচিত। কলকাতার কলেজ থেকেই পড়াশোনা শেষ করা আমিরের নাম অবশ্য ২০০১ সাল পর্যন্ত পুলিশের খাতায় ছিল না। তার দাদা আসিফ ও তার কুখ্যাত ‘কম্যান্ডো ফোর্স’-ই ছিল পুলিশের মাথাব্যথার কারণ। গুজরাত পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে আসিফের মৃত্যুর পর দাদার মৃত্যুর বদলা নিতেই আমির সন্ত্রাসবাদে নাম লেখায় বলে পুলিশের ধারণা। তার পরে একে-একে খাদিম-কর্তা পার্থপ্রতিম রায়বর্মনের অপহরণ এবং কলকাতার মার্কিন তথ্যকেন্দ্রে হামলায় নাম জড়ায় আমিরের। এ বার তার হাত ধরেই ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা চালাতে পারে ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন।
|
পুরনো খবর: হাজার টাকার জাল নোট ছড়াচ্ছে রাজ্যে |
|
|
|
|
|