ইউনিয়নের দখলদারিতে মন্ত্রীর রাশ, পাল্টা হুমকি
হাকরণ পারেনি। রাজ্য সরকারের কোনও দফতরেও নজির নেই।
এ বার খাদ্য দফতর সেই নজিরবিহীন কাজটাই করতে চলেছে। সরকারি স্বীকৃতিহীন (আনরেজিস্টার্ড) যে সব কর্মী ইউনিয়ন বছরের পর বছর খাদ্য ভবনে ঘর দখল করে রয়েছে, তাদের সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এমন চারটি ইউনিয়নকে চিহ্নিত করেছেন খাদ্য-কর্তারা, যেগুলোর কোনওটাই রেজিস্ট্রার অফ সোসাইটির দ্বারা অনুমোদিত নয়। খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সাফ কথা, “শুধু অনুমোদিত ইউনিয়নকে খাদ্য ভবনে জায়গা দেওয়া হবে। আর প্রতিটা থাকবে একই ছাদের নীচে।”
খাদ্যমন্ত্রীর দাবি, প্রশাসনের তরফে এই কঠোর ব্যবস্থা অতীতে নেওয়া হয়নি। এরই প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠছে, সরকারের একটা দফতর এমন সিদ্ধান্ত নিলে অন্যেরা কেন পারে না?
সরকারি কর্তাদের কাছে সদুত্তর মেলেনি। অনেকে প্রসঙ্গটি এড়িয়ে যাওয়াই শ্রেয় মনে করেছেন। বস্তুত বাম জমানা থেকেই মহাকরণের একতলায় কো-অর্ডিনেশন কমিটি-সহ কয়েকটি স্বীকৃত ইউনিয়নের অফিসঘর ছিল। পালাবদলের পর এখন সেখানে শুধু শাসকদল সমর্থিত ইউনিয়নই বহু, এবং তাদের প্রত্যেকের আলাদা আলাদা অফিস। সরকারি কর্মীদের মধ্যে দলের বিভিন্ন ইউনিয়নকে এক ছাতার নীচে আনতে গত মার্চে তৃণমূল ‘ফেডারেশন’ গড়লেও খাস মহাকরণে এখনও তাদের দু’-দু’টো অফিসঘর বিরাজ করছে!
একই ছবি আরও কিছু সরকারি দফতরে। যেমন খাদ্য দফতরের বাড়িতে মোট ১৬টি ইউনিয়নের বসবাস। স্বীকৃতিহীন চারটি হল: পশ্চিমবঙ্গ সরকারি কর্মচারি (খাদ্য ও সরবরাহ) আবাসন সমবায় সমিতি, অবসরপ্রাপ্ত কর্মী সংগঠন, নবপর্যায়ের একটি সংগঠন ও অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন। কোনওটাই বিশেষ কোনও রাজনৈতিক দলের ছত্রচ্ছায়ায় নেই। দফতর-সূত্রের খবর: এগুলোকেই খাদ্য ভবন থেকে উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাশাপাশি স্বীকৃত সমস্ত ইউনিয়নকে এক ছাদের তলায় আনতে চিঠি দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। চিঠিতে এ-ও বলা হয়েছে যে, প্রতিটি স্বীকৃত ইউনিয়ন তাদের অফিসঘর বাবদ খাদ্য ভবনে ১০০ বর্গফুট জায়গা পাবে।
স্থান সঙ্কোচনের ফরমান পেয়ে বিভিন্ন ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ যারপরনাই ক্ষুব্ধ। খাদ্যমন্ত্রী অবশ্য পরে জানিয়েছেন, বরাদ্দ বাড়িয়ে চারশো বর্গফুট করা হবে। কিন্তু যারা থাকবে, তাদের সকলকে এক ছাদের তলায় আনতে মন্ত্রী বদ্ধপরিকর। “খাদ্য ভবনে হরেক ইউনিয়ন কয়েক হাজার বর্গফুট দখল করে বসে রয়েছে। এ সব চলবে না। ভবনের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ইউনিয়ন অফিসও রাখা যাবে না। স্বীকৃত ইউনিয়নগুলোকে এক ছাদের নীচে পাশাপাশি জায়গা দেওয়া হবে। সেখানে থাকবে একটা ক্যান্টিন , শৌচালয়।” ঘোষণা জ্যেতিপ্রিয়বাবুর। কর্মী-নেতারা কী বলেন?
অনেকেই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন। প্রতিবাদে আন্দোলনে নামার হুমকিও দেওয়া হচ্ছে। যেমন সিপিএম সমর্থিত রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটি অনুমোদিত পশ্চিমবঙ্গ খাদ্য সরবরাহ বিভাগ কর্মচারি সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত রায়ের যুক্তি, “বিভিন্ন ইউনিয়নের নীতি ও আদর্শে ফারাক রয়েছে। এক ছাদের নীচে পাশাপাশি থাকলে কর্মীদের মধ্যে বিরোধ বাধার সম্ভাবনা।” পশ্চিমবঙ্গ সরকারি কর্মচারি ইউনিয়ন (নব পর্যায়)-এর জোনাল কমিটি সদস্য সৌমেন্দ্র বসুর হুঁশিয়ারি, “সরকারই আমাদের পাঁচশো বর্গফুট জায়গা বরাদ্দ করেছে। তা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা হলে প্রতিবাদ করব। প্রয়োজনে খাদ্য ভবনের সব ইউনিয়নকে নিয়ে আন্দোলন হবে।”
তৃণমূলের সংগঠন ইউনাইটেড স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লইজ ফেডারেশন (খাদ্য দফতর) এ প্রসঙ্গে মত দেয়নি। ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সমীরণ রায়ের মন্তব্য, “সংগঠনের অভ্যন্তরে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” রাজ্যের বর্তমান সরকারের সমর্থক, পশ্চিমবঙ্গ সাবঅর্ডিনেট খাদ্য ও সরবরাহ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন কিন্তু অফিসঘরের প্রশ্নে সরকার-বিরোধিতার পথেই হাঁটার পক্ষপাতী। অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক প্রশান্ত চক্রবর্তীর কথায়, “১৯৭৪ থেকে এই ঘর ব্যবহার করছি। কোনও মতে ছাড়া হবে না।” পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারি ফেডারেশনের কলকাতা জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রশান্ত কর্মকারও একসুর “ঘর ছাড়ার প্রশ্নই ওঠে না।” ইসিএসসি এমপ্লইজ ওয়ার্কার্স কংগ্রেসের সভাপতি তথা বিধায়ক অসিত মিত্র এক ধাপ এগিয়ে বলেন, “বামফ্রন্টও কর্মচারিদের উপরে এমন আঘাত হানেনি। এর প্রতিবাদে আন্দোলন হবে।”
যাঁদের অফিসঘরই থাকছে না, আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাঁরাও।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.