তাঁর গোটা জীবনটাই বিতর্কের খাসমহল। সেই তিনি অর্থাৎ ব্রিটেনের যুবরানি ডায়ানা যদি কোনও ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্র হন, সে ছবির পরিণতি অনিশ্চয়তার পেন্ডুলামে দুলবে, এটাই প্রত্যাশিত ছিল। বাস্তবে হলও তাই। বৃহস্পতিবার রাতে লন্ডনের প্রেক্ষাগৃহে প্রথম প্রদর্শন হল নাওমি ওয়াটস অভিনীত ‘ডায়ানা’ ছবিটির। আর প্রথম দিন থেকেই মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
কেউ বলছেন, ‘অসামান্য প্রেমকাহিনি’। আবার কারও বয়ানে, ‘বীভৎস’ ছবি। কেউ প্রশ্ন তুলছেন ছবির গল্পের সত্যতা নিয়ে। কারও যুক্তি, টুকরো টুকরো কাল্পনিক ঘটনা দিয়ে যে ভাবে পর্দায় ডায়ানার জীবনের শেষ ক’টি বছরকে পুননির্মাণ করেছেন পরিচালক অলিভার হার্শবিগেল, তা এক কথায় অনবদ্য। তাতে তথ্যের বিশুদ্ধতা খুঁজতে যাওয়া অনর্থক। সব মিলিয়ে সেখানে ব্রিটেনের যুবরানির চরিত্রের মূল নির্যাসই ছবির প্রাণ। ছবিটি সাধারণ দর্শকের জন্য মুক্তি পাবে ২০ সেপ্টেম্বর। কিন্তু তার আগে থেকেই তাকে নিয়ে আলোচনা- সমালোচনায় সরগরম লন্ডন।
তবে বৃহস্পতিবারের আগেই ছবির প্রচার বড়সড় ধাক্কা খেয়েছিল পাক চিকিৎসক হাসনাত খানের মন্তব্যে। আসলে ছবিটি মূলত ডায়ানা এবং হাসনাতের বহুচর্চিত প্রেমকাহিনি অবলম্বনে তৈরি। কিন্তু সম্প্রতি হাসনাত দাবি করেন, সেই প্রেমের ‘পুরোটাই রটনা।’ আশঙ্কার সেই শুরু। |
দুই ডায়ানা। পর্দার ও বাস্তবের। ছবি: এএফপি। |
নামভূমিকায় অভিনয় করা নাওমি পর্যন্ত ভেবেছিলেন ছবি মুক্তি পাওয়ার পর হয়তো তাঁকে দেশ ছেড়ে পালাতে হতে পারে। বৃহস্পতিবারের প্রদর্শন শুরুর আগে তাই পরিচালক সকলকে অনুরোধ করনে, ডায়ানা সম্পর্কে নিজেদের ভাবনা-চিন্তা সরিয়ে রেখে যেন প্রত্যেকে ছবিটি দেখেন।
তবে প্রতিক্রিয়া বলছে, প্রত্যাশিত ভাবেই ডায়ানার লড়াইটা সহজ হবে না। যদিও সমালোচকদের অনেকেই নাওমির অভিনয়ে মুগ্ধ। ছবির চিত্রনাট্যকার স্টিফেন জেফ্রি জানিয়েছেন, নিজেকে ‘ডায়ানা’ করে তুলতে বিশেষ ধরনের কৃত্রিম নাক লাগানো ছাড়াও রীতিমতো ‘ভয়েস কোচিং’ নিয়েছেন নাওমি। বিশেষত যে সাক্ষাৎকারের পর যুবরাজ চার্লসের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায় ডায়ানার, সেই সাক্ষাৎকার পর্বটিতেও নাওমি অবিকল ডায়ানাই। তবে হাসনাত-ডায়ানার প্রেমের সত্যতা প্রসঙ্গে জেফ্রি নিজেই জানাচ্ছেন, “আমি এ বিষয়ে অন্তত ২০টি বই পড়েছি। কোনওটাই একে অপরের সঙ্গে মেলে না। ফলে ‘আসল সত্যি’টা দেখানো অসম্ভব।” পরিচালকও জানালেন, ছড়িয়ে থাকা তথ্য জোগাড় করে ছবিটি বানিয়েছেন তিনি। কিছু কাল্পনিক ঘটনার আশ্রয়ও নিয়েছেন, তবে সেটাও গল্পের স্বার্থে। পরোক্ষে ডায়ানার স্বার্থে, তাঁর
প্রেমের স্বার্থে। যে প্রেমকে রাজমহলের ঝাঁ চকচকে প্রাসাদের বাইরে বেরিয়ে সুদূর পাকিস্তানে খুঁজেছিলেন তিনি, সেই খোঁজকেই কুর্নিশ জানিয়েছেন অলিভার।
বিতকের্র অলিগলিতে প্রেম খুঁজে বেড়ানো যুবরানি মৃত্যুর প্রায় ষোলো বছর পর রুপোলি পর্দায় দর্শকের প্রেম পান কি না, সেটাই দেখার।
|