গর্তে রাখা শ্যালো পাম্পেই মরণফাঁদ
শ্যালো পাম্প মাটির নীচে বসানোর নিয়ম নেই। অথচ গ্রামে-গ্রামে তা-ই বসানো হয়।
গর্তের মুখ ঢাকা দিয়ে রাখলে তাতে যে বিষাক্ত গ্যাস জমতে পারে, তা জানা আছে সকলেরই। অথচ গরু-ছাগল, ময়লা-আবর্জনা পড়ার ভয়ে শ্যালো পাম্পের গর্তের মুখ ঢেকেই রাখা হয়।
পরিণতি অনিবার্য। গত বৃহস্পতিবারই পূর্বস্থলীর কালেখাঁতলা এলাকার ভিতপুর গ্রামে শ্যালোর গর্তে নেমে প্রাণ হারান দুই ভাই। কিন্তু বেশির ভাগ জায়গাতেই চাষিদের হুঁশ ফেরেনি।
সেচের প্রয়োজনে ভূগর্ভস্থ জল তোলার জন্য শ্যালো পাম্প ব্যবহার করেন চাষিরা। বেশির ভাগ অ-সেচসেবিত এলাকাতেই এর কোনও বিকল্প নেই। কিন্তু কৃষি দফতরের মতে, শ্যালো পাম্প ব্যবহার করা বিপজ্জনক। জলস্তর তো কমেই, আরও নানা বিপত্তির সম্ভাবনা থাকে।
কৃষি দফতরের হিসেব বলছে, গত তিন বছর ধরে কালনা মহকুমায় বৃষ্টি কম হয়েছে। ফলে মাটির তলা থেকে জল তুলতে শ্যালো পাম্প ব্যবহার করতে হচ্ছে চাষিদের। তার জেরে কালনা ১ ও ২, পূর্বস্থলী ১ ও ২ এবং মন্তেশ্বর ব্লকের জলস্তর ক্রমশ নামতে শুরু করেছে। ওই সব এলাকার চাষিরা গভীর ও অগভীর নলকূপ ব্যবহার করেন। এ ছাড়া প্রতি চাষের মরসুমে শ্যালো পাম্পের মালিকের থেকে বিঘা প্রতি চুক্তিতে জলও কিনতে হয় চাষিদের। শ্যালো পাম্পগুলি ডিজেল-চালিত জেনারেটর দিয়ে চলে। তাতে গ্রামাঞ্চলেও পরিবেশ দূষণ বাড়ছে।

পূর্বস্থলীতে বৃহস্পতিবার শ্যালোর এই কুয়োয় নেমেই মৃত্যু হয় দু’জনের। —নিজস্ব চিত্র।
চাষিদের একাংশের মতে, জলস্তর নেমে যাওয়ায় বহু জায়গাতেই শ্যালো পাম্প মাটির উপরে থাকলে জল উঠছে না। ২০ ফুট পর্যন্ত নামাতে হচ্ছে পাম্পের যন্ত্রাংশ। কালেখাঁতলা ১ পঞ্চায়েত এলাকার চাষি উত্তম ঘোষ জানান, গ্রীষ্মে জলস্তর নেমে যায়। তখনই গর্ত করে তার মধ্যে বসানো হয় শ্যালো পাম্প। মাঠে ঘোরাফেরা করা গরু-ছাগল যাতে সেই গর্তে পড়ে না যায়, তার জন্য চাষিরা গর্তের মুখে বাঁশের তৈরি ঢাকনা দিয়ে দেন। পলিথিন দিয়েও ঢেকে রাখেন। উত্তমবাবু বলেন, “বছর তিনেক আগে শ্যালো পাম্পের সামনে মাটিতে ধস নেমে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছিল। এ বার বিষাক্ত গ্যাসে দু’জনের মৃত্যু হল।” ভিতপুরের পাশের স্বরডাঙা এলাকার সব্জি চাষি মতিলাল দাস, প্রদ্যুৎ দে, সুরত আলি শেখরা বলেন, “এ ভাবেও যে কেউ মরতে পারে, এর আগে মাথায় আসেনি।”
কুয়োয় নেমে বিষগ্যাসে মৃত্যুর ঘটনা কিন্তু এই সব চাষিরা প্রায় সকলেই শুনেছেন। তা যে শ্যালোর গর্তেও ঘটতে পারে, তা ভেবেই অনেকে চমকে উঠেছেন। কালনা মহকুমা সহকারী কৃষি অধিকর্তা নিলয় কর বলেন, “তিন ফুট নীচের গর্ত থেকেই মিথেন বা কার্বন মনো-অক্সাইডের মতো নানা বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। গর্তের মুখ ঢাকা থাকলে তা বেরোতে পারে না। ঢাকনার নীচে গ্যাস জমতেই থাকে। না বুঝে কেউ তার মধ্যে নেমে গেলে বিপদ অনিবার্য। পূর্বস্থলীর মতো দুর্ঘটনা অন্যত্র ঘটতেই পারে। তাই চাষিদের এই ধরনের পাম্প তৈরির আগে ভাবা উচিত।” গর্ত খুঁড়ে শ্যালো পাম্প তৈরির ব্যাপারটি আইনস্বীকৃত নয় বলেও তিনি জানান। যদিও জেলার কৃষি উপ-অধিকর্তা শ্যামল দত্তের দাবি, “কোন কোন এলাকায় গর্ত খুঁড়ে শ্যালো পাম্প বসানো রয়েছে, তা আমাদের জানা নেই।”
মন্তেশ্বর ব্লকের কৃষি উন্নয়ন আধিকারিক রঙ্গন বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য মেনে নিয়েছেন, গর্ত করে পাম্প বসানোর পদ্ধতি তাঁর এলাকাতেও চালু আছে। তবে তা সংখ্যায় কম বলেই তাঁর দাবি। রঙ্গনবাবুর কথায়, “যাঁরা গর্ত করে পাম্প বসিয়েছেন, তাঁদের জানা উচিত যে গর্তের মুখ পলিথিন দিয়ে মুড়ে রাখলে অক্সিজেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ভিতরে জমে থাকে বিষাক্ত গ্যাস। পলিথিনের মোড়কটি খুলে কয়েক ঘণ্টা বায়ু চলাচলের সময় দিলে হয়তো পূর্বস্থলীতে ওই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটত না। আশা করি, এ থেকে চাষিরা শিক্ষা নেবেন।” তাঁর মতে, চাষিরা যাতে শ্যালো পাম্প ব্যবহার না করেন তার জন্য সচেতনতামূলক প্রচার প্রয়োজন। পঞ্চায়েতগুলিকে এই কাজে এগিয়ে আসতে হবে।
কবে তা হবে, তার কোনও স্পষ্ট উত্তর অবশ্য কোনও মহল থেকেই মেলেনি।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.